
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল উদ্যোগ-৩
শারীরিক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চলাচলে মেট্টো রেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চলাচলে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বললেও ভুল হবে না। লিফটের ব্যবস্থা, সেসঙ্গে অডিও যুক্ত হওয়ায় হুইল চেয়ার নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্ল্যাটফর্মে যাওয়া, ট্রেনে ওঠার ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে না হওয়ারই কথা। কিন্তু এরপরও সুস্থ, সবল মানুষদের কারণে প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।
কারওয়ানবাজারের লিফট ২ থেকে কয়েক হাত দূরে হুইলচেয়ারে অপেক্ষা করছিলেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কিন্তু সুস্থ, সবল মানুষদের ভিড় ঠেলে লিফটের সামনে পৌঁছুতেই পারছিলেন না তিনি। কিছুক্ষণ পর তিনি লিফটে ওঠার সুযোগ পান।
অপেক্ষমাণ এই ব্যক্তি হলেন প্রতিষ্ঠাতা মদিনা হুইল চেয়ার ক্রিক্রেট দল এবং বাংলাদেশ হুইল চেয়ার ক্রিকেট এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও হুইল চেয়ার ক্রিকেট খেলোয়াড় মোহাম্মদ মোহসীন।
লিফট এর দরজার উপরে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির ছবি ও স্পষ্ট অক্ষরে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রবীণ ব্যক্তিগণ’। এরপরও মোহাম্মদ মোহসীনকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
মোহাম্মদ মোহসীন মেট্টোরেলে চলাচলে সুবিধা এবং ভোগান্তি দুটো নিয়েই জানালেন। তার মতে, লিফটে ওঠার সময় প্রায়ই আমাকে অপেক্ষা করতে হয়। কারণ ভিড় ঠেলে হুইল চেয়ার নিয়ে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা আগে যেতে চায় তাদেরকে সুযোগটা দিই। আমাদের চলাচলের সহজ মাধ্যম এই মেট্টো রেল। অন্য পাবলিক যানবাহনে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নারী কোচে প্রবেশগম্যতার কথা উল্লেখ রয়েছে। মেট্টোরেল কর্তৃপক্ষ এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করেছে । অন্য কোচ গুলোতে হুইল চেয়ার নিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নেই। মেট্টোরেলে নারী কোচে হুইল চেয়ারের প্রবেশগম্যতার ব্যবস্থা থাকায় প্রথম দিন সেখানেই উঠি। সেজন্য অনেক আজেবাজে কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। ভোগান্তির শিকারও হই। তারা আমাকে স্বাভাবিক মানুষের কাতারে নিয়ে যায়। আমি ইচ্ছে করে সেখানে যাইনি। ওই কোচে আমাদের ওঠার নির্দেশ আছে বলেই আমি গিয়েছিলাম। অন্য কোচ গুলোয় হুইল চেয়ার নিয়ে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এখনো সচেতনার ভীষণ অভাব রয়েছে। সচেতনতা তৈরিতে তাদের জানাতে হবে সবাই সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমি হুইল চেয়ার ব্যবহারী হওয়ায় ন্যায্যতা পাবো না তা তো হয় না। আমাদের মতো যারা হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মোহাম্মদ মোহসীন বিশেষ বাইক চালিয়ে টঙ্গী থেকে উত্তরা আসেন। সেখান থেকে তিনি প্রোগাম - খেলা দেখা, খেলা সংক্রান্ত মিটিংএ অংশ নেওয়ার জন্য চলাচল করতে হয় মেট্টোরেল ব্যবহার করেন। মোহাম্মদ মোহসীন নভেম্বর ২০২৫ এ হুইল চেয়ার ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার কথা পাকিস্তানে। আটটি দেশ অংশ নিবে এখানে। ১০ নভেম্বর জাপান যাওয়ার কথা অটোআম হুইল চেয়ার ম্যারাথনে অংশ নিতে। ২১ কিলোমিটার হুইল চেয়ারে বসে রান দিবেন তিনি।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। এবার খেলতে যেতে পারবো কিনা জানি না। আমাদের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মেট্টো রেল চালু হওয়ায় এতে যাতায়াত করেন 'ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন ইপসা'র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং এটুআই প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট - অ্যাক্সেসিবিলিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য।
ভাস্কর ভট্টাচার্য’র মতে, অনেক লিফটে অডিও, ব্রেইল থাকে না। অডিও না থাকলে আমার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তা ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু মেট্টো রেলের লিফট ও কোচগুলোতে অডিও’র ব্যবস্থা থাকায় আমার জন্য যাতায়াত সহজ হয়েছে।
কিন্তু অন্য পেসেঞ্জারদের দ্বারা আমরা মাঝেমধ্যে ভোগান্তির শিকারও হই। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। মেট্টো রেলের লিফট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠার জন্য কেউ ছেড়ে দেয় না। মেট্টো রেলে প্রথম কোচ নারী এবং প্রথম ও শেষ কোচ শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু প্রথম কোচে প্রতিবন্ধী পুরুষদের উঠতে দেওয়া হয় না। শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভিড়ের কারণে হুইল চেয়ার নিয়ে অন্য কোচে উঠতে পারেন না। নারী কোচে উঠলে নানারকম কটূক্তি শুনতে হয়। মেট্টো রেলের স্টাফরা আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহযোগিতা করলেও এখন করেন না। বলেন, ‘আমরা পারবো না। আপনি কাউকে নিয়ে আসেননি কেনো!’
ঢাকা মেট্টো রেলের সহকারী প্রকল্প পরিচালক (ইনভাররমেন্ট এন্ড হেলথ সেফটি) মো. আহসান উল্লাহ শরিফী এ সম্পকে বলেন, মেট্টো রেলের ছয়টি কোচের মধ্যে প্রথম কোচে নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং শেষ কোচে নারী-পুরুষ উভয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী তাদের ওঠার ব্যবস্থা রয়েছে। সেসঙ্গে হুইল চেয়ার রাখার জন্য জায়গা নিধারণ করাও রয়েছে। মাঝের চারটি কোচে অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি, প্রসুতি মায়েদের জন্য নির্ধারিত আসন রয়েছে। আসনের উপরের দেয়ালে একথা স্পষ্টভাবে লেখাও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মেট্টো রেলে চলাচলকারী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি কোনো সমস্যায় পড়েন বা তাদের চলাফেরায় সমস্যা হলে মেট্টোরেল কর্তৃপক্ষের কারো কাছে সহযোগিতা চাইতে পারেন। যদি সহযোগিতা চেয়ে না পান তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে অভিযোগ বক্সে ফেলে বা মৌখিকভাবেও অভিযোগ জানাতে পারেন। মেট্টো রেলের প্রত্যেক কর্মচারীর নাম ইউনিফর্মে লেখা থাকে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো জানালেন মো. আহসান উল্লাহ শরিফী।
ইউ