
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের নদী রক্ষা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের রূপকল্পের (ভিশন) মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। একটি রূপকল্প যেখানে নদীকে বাঁচিয়ে রেখে তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা বলে, সেখানে অন্যটি অনেকাংশেই উন্নয়ন ও ব্যবসাকেন্দ্রিক।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকার লালমাটিয়ায় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)-এর আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশিষ্টজনেরা এই মন্তব্য করেন।
রূপকল্পের মৌলিক পার্থক্য
-
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন: কমিশনের রূপকল্প হলো—'দখল ও দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর সুপারিশের মাধ্যমে নাব্য নদী ও নৌপথ গড়ে তোলা।' এটিকে বক্তারা জীবনমুখী হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা নদীকে বাঁচিয়ে রেখে সাধারণ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
-
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়: মন্ত্রণালয়ের রূপকল্প হলো—'বিশ্বমানের বন্দর, মেরিটাইম ও নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনা।' বিশিষ্টজনদের মতে, এটি অনেকাংশেই উন্নয়ন ও ব্যবসামুখী এবং ব্যাপক পরিবর্তনধর্মী।
কর্মশালায় বক্তাদের অভিমত ও নির্দেশনা
-
নদী ও মানুষের অস্তিত্ব: এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, নদী রক্ষার সঙ্গে মানুষের অধিকার রক্ষা যুক্ত। অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি, জল ও বায়ু—এই তিনটি জিনিসই এখন বিপন্ন। তিনি মনে করেন, কেবল আইনের আওতায় নদী রক্ষা সম্ভব নয়, তাই পানি রক্ষা আইন তৈরিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে। তিনি কৃষি অধিকারের সঙ্গে নদী অধিকারের নিবিড় সম্পর্কের ওপর জোর দেন।
-
সাংবাদিকতার ভূমিকা: চর্চার সম্পাদক সোহরাব হোসেন সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জীবিত নদীগুলো রক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, নদী দূষণ ও দখল মানুষ দ্বারাই হচ্ছে। সাংবাদিকদের উচিত গৃহস্থালি, কারখানা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন উৎসের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের চিত্র তুলে ধরা। বিশেষ করে, যারা দূষণ রোধে আইন প্রয়োগ করছে না, সেই প্রশাসনিক ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে হবে।
-
দখলদার ও প্রতিপক্ষ: রিভারাইন পিপলের মহাসচিব ও নদী গবেষক শেখ রোকন বলেন, নদী, খাল ও জলাশয়ের সংকটের মূল কারণ দখল, দূষণ ও বালু উত্তোলন। তিনি অভিযোগ করেন, নদী রক্ষায় সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করলেও বাকি তিনটি স্তম্ভ (হাইকোর্ট, সংসদ, সচিবালয়) অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি কর্পোরেট ও প্রভাবশালী বড় দখলদারদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরির আহ্বান জানান এবং ছিন্নমূল মানুষের পক্ষে থাকার কথা বলেন।
-
নদীর বর্তমান অবস্থা ও আইন: এএলআরডি প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা প্রবন্ধে জানান, ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে দখল ও দূষণ হওয়া নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১৫টি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে (তিনটি পাহাড়ি নদী বাদে)। এছাড়া ৪৩৫টি নদী হুমকির মুখে এবং ৫০-৮০টি বিপন্ন। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার নদীগুলো। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ সহ অন্যান্য আইন তুলে ধরেন।
এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মশালাটি শুরু হয় এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।
ইউ