ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ১৮ অক্টোবর ২০২৫

English

জাতীয়

প্রযুক্তিতে সহজ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবন

রীতা ভৌমিক 

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

প্রযুক্তিতে সহজ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবন

ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম

প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল উদ্যোগ-২

বর্তমান বিশ্বায়নে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যেমন অনেকটাই সহজ। পাশাপাশি ডিজিটাল উদ্ভাবনীর মাধ্যমে তাদের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করাও সম্ভব। কয়েকজন উদ্ভাবক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্মার্ট স্টিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উদ্ভাবন করেছেন স্মার্ট হুইল চেয়ার।

স্মার্ট স্টিক
সিরাজগঞ্জের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী লিটন। স্মার্ট স্টিকটির সহযোগিতায় হাঁটছিলেন। তিনি খুলনার খালিশপুরের দক্ষিণ কাশিপুর অন্ধ হাফিজিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং এতিমখানার একজন বোর্ডার ছিলেন। 

স্মার্ট স্টিকটি ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি হাতে নিয়ে চলাচলের সময় চারপাশে কি আছে তা অনুভব করতে পারি। তবে এটি ভাঁজ করার সুবিধা থাকলে ভালো হতো। যখন গন্তব্যে পৌঁছে যাবো ভাঁজ করে রাখা যেতো।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাফেজ পাশ করা আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজও স্মার্ট স্টিকটি বিনামূল্যে পেয়েছেন। তিনিও এটি ব্যবহার করছেন।

তার মতে, এটি ব্যবহারের কারণে আমার চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে।

আইডিয়ার ( ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড এন্টারপ্রেনেরশিপ একাডেমি)  আর্থিক সহায়তায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কম খরচে এই অ্যাসিস্টিং ডিভাইস (স্মার্ট স্টিক) তৈরি করা হয়েছে। 

এই স্মার্ট স্টিক খুলনার খালিশপুরের দক্ষিণ কাশিপুর অন্ধ হাফিজিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং এতিমখানার  ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে প্রদান করেছে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়।

দক্ষিণ কাশিপুর অন্ধ হাফিজিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং এতিমখানার  প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ মিনা বলেন, স্মার্ট স্টিক পেয়ে পাঁচ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অনেক উপকৃত হয়েছে।  তাদের চলাফেরা সহজতর হয়েছে। তারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাফেজ পাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শেখ সাদী জানালেন, অ্যাসিস্টিং ডিভাইস (স্মার্ট স্টিক) উদ্ভাবন করলেও বিক্রির জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্মার্ট স্টিকটি তৈরি করে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারেন সেই পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়াটাই ছিল আমাদের কাজ। 

কিন্তু এটি বিক্রি বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আমাদের নেই। 
শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্মার্ট  হুইল চেয়ার

শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে স্মার্ট হুইল চেয়ার । শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা  এটি মাথা ও হাতের ইশারায় চালাতে পারবেন। তবে ৬ ঘণ্টা চার্জ দিতে হবে। 

 খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শেখ সাদী বলেন, স্মার্ট হুইল চেয়ার তৈরি অনেক ব্যয় সাক্ষেপ হওয়ায় কাউকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়নি। কোনো কোম্পানি এটি বিক্রি করতে চাইলে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবে। আমরা নিজেরা তৈরি করায় এর চেয়ে কম খরচ পড়েছে। পুরোটাই  স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। 

তবে আশার আলো দেখালেন তিনি। তিনি বললেন, কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে (কোলাবেরশনে) যৌথভাবে এলে আমরা প্রযুক্তিগতভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য  যে জিনিসগুলো দরকার আমরা সমস্ত  (গবেষণা পদ্ধতি, উন্নয়নের ধারা, কিভাবে বানাতে হবে,  তৈরি এবং পূণ বিকশিত করা ইত্যাদি) দিতে পারবো। 

প্রফেসর শেখ সাদী আরো বলেন, এই ধাপটা আমাদের বাকি রয়েছে। কোনো ডেভেলপ, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি এগিয়ে এলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এগুব। এছাড়াও যদি কোনো কোম্পানি বাংলাদেশি এই পণ্য গুলো ব্যবহার আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে তাহলে হুইল চেয়ারের একটি বাজার তৈরি হবে।  তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে কোলাবেরশনে বাজার তৈরি করতে হবে।

অন্যদিকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্মার্ট হুইল চেয়ার তৈরি করতে গিয়ে আর্থিক সমস্যার কারণে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেননি। আইডিয়া প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় এটি তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন আইওটি এনাবেল্ড গেমটার কন্ট্রোল হুইল চেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মো. রিপন ইসলাম ।

মো. রিপন ইসলামের মতে, ২০২২ সালে কম খরচে এআই ভিত্তিক আঙ্গুলের ইশারা নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট হুইল চেয়ার উদ্ভাবনের কাজটা শুরু করি। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে হুইল চেয়ারটি নিয়ে যাওয়ার জন্য  আরো কয়েকটি ফোল্ডার দরকার। আর্থিক সমস্যা ছাড়াও  বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে কাজটি স্থগিত হয়ে রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের ছাত্ররা এটি নিয়ে কাজ করছে। আরো আর্থিক সহায়তা পেলে এটি সম্পন্ন  করা সম্ভব হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে  কমপক্ষে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত  অনুদান দেওয়া হয় জানালেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উপসচিব, পরিচালক ( পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ফজলে ছিদ্দীক মোঃ ইয়াহিয়া।  
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাবও করেছে। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ডিভাইস প্রদানের চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্ভাবনগুলোতে আর্থিক সহায়তা প্রদানে কোনো তহবিল  নেই। প্রতিবন্ধিতার ১২ ধরনের ক্যাটাগরিতে শিক্ষা, সক্ষমতার ভিত্তিতে যারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কমসংস্থানে অন্তর্ভূক্তির উল্লেখ  রয়েছে।

তিনি বলেন, ইআরসিপিএইচতে ২০১৭ সাল থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কৃত্রিম পা সংযোজন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে । কৃত্রিম হাত পাসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ প্রস্তুত করা হয়। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ৪৪০টি উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়েছে আইডিয়া ( ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড এন্টারপ্রেনেরশিপ একাডেমি)  ।  প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্ভাবনের উন্নয়নে শুরু করা হয়েছিল।

আইডিয়ার ( ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড এন্টারপ্রেনেরশিপ একাডেমি)   প্রকল্প পরিচালক ( যুগ্ম সচিব ) মুর্তুজা জুলকার নাঈন  নোমান এ ব্যাপারে বলেন, যে পণ্য গুলো উদ্ভাবন করা হচ্ছে তা অনেক দামি। যেমন স্মার্ট  ওয়াইড। এর যে দাম একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কেনার সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। আইস নামে একটি রিসোর্চ সেন্টারের অর্থায়নে     ‘দূরবীন’ নামে একটি স্মার্ট ফোন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোবাইলের ক্যামেরাটা খুললেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে দেখামাত্র শব্দ করে বলবে তার আশপাশে কি আছে।  যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই পণ্যটির সেবা নিবেন তার আর্থিক সামর্থ্যের জায়গাটা কতটা  রয়েছে । এটি উদ্ভাবনীতে উদ্যোক্তারা কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু এই ব্যবসাটাকে তারা চলমান রাখতে পারেননি।  কারণ টার্গেট গ্রুপটাই তৈরি হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ৪৪০টির মধ্যে মাত্র দশ থেকে বারটি টি উদ্ভাবনী উদ্যোগ সফল হয়েছে। তাদের জন্য এটা একটি অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল আইডিয়া, স্টার্টআপ, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সিস্টেমকে পরিচালিত করা। একটি ব্যবসাকে দাঁড় করাতে গেলে. সারভাইভ করাতে হলে যে মডেল থাকতে হয় তার ঘাটতি ছিল। 

মুর্তুজা জুলকার নাঈন  নোমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমরা এমন কিছু উদ্ভাবনকে সহায়তা করবো, যা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।  সরকারের একটি উদ্দেশ্য থাকে বেশির ভাগ জনগণকে সেবা দেওয়া। এর মধ্যেও আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে উদ্ভাবনী পণ্য গুলোর গবেষণার ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। স্টার্ট আপের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঝরে পড়ে। এজন্য  দরকার পুনরায় আর্থিক সহায়তা প্রদান, বাজার তৈরি করা, নিজের পরিচয় তৈরি করা, লেগে থাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করার আবেদনও এসেছে। অন্যদের থেকে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আমরা যতটা সম্ভব অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কোটা না থাকায় নির্বাচিত কমিটি এই বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে দেখেন।  একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্ভাবন করতে পারবেন কিনা। যাদের অনুদান দেওয়া হয় তাদের মনিটরিং করা হয়। যখন তারা পুরো কাজটা সম্পন্ন করে তখন তাকে স্টার্ট আপ বলা হয়।

সমাজসেবা অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক ( সামাজিক নিরাপত্তা -১) ফরিদ আহমেদ মোল্লার মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন মানোন্নয়নে উদ্ভাবনী বিষয়ক কোনো উদ্যোগ নেই। 

ইউ

রক-এন-রোল-এর রাজপুত্র: আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণ দিবসে স্মৃতির অর্ঘ্য

নদী রক্ষা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভিশনে ভিন্নতা

সহিংস রাজনীতিতে কমছে নারী ও তরুণদের নেতৃত্ব

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারি নেতৃত্ব চাই: রিজওয়ানা হাসান

চাঁদপুর-৩ আসনে আলম খানের গণসংযোগ

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত: তারেক রহমান

জুলাই সনদ সংঘর্ষ: ৪ মামলায় ৯০০ আসামি

শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুন

প্রযুক্তিতে সহজ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবন

আবারো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ল

প্রযুক্তির সুবিধা লাভে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাধা

জুলাই সনদে নারীর অনুপস্থিতি, ফোরামের তীব্র প্রতিবাদ

এ আর রহমানের নাম পরিবর্তনের নেপথ্যের কাহিনি

জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে বিশেষ সতর্কতা জারি

জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কোনো আপোস নয়: মির্জা ফখরুল