
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল উদ্যোগ-১
আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শিক্ষা, কর্ম ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা সুফল পাচ্ছেন। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন হলেও গুটিকয়েক মানুষের তৈরি প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এর সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছেন। তারপরও, যারা জন্মগতভাবে কিংবা দুর্ঘটনার ফলে শারীরিক অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন, তাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই স্বাভাবিক মানুষের মতো করার সুবিধা দিতে কাজ করছেন গবেষকরা। এই গবেষকদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন হয়। তাতে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় -* আর্থ সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত না করে উন্নয়ন পরিকল্পনা কতটুকু যৌক্তিক! *প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা বা সমাজ গড়া কতোটা সম্ভব!* কতোটা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব !
অন্যদিকে জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এ ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৫ টিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির কথা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ৪. শিক্ষা, ৮. কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি, ১০. বৈষম্য হ্রাস, ১১. টেকসই নগর এবং ১৭. উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫টি লক্ষ্যমাত্রায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতার জন্য এটুআই ডিজিটাল (এসপায়ার টু ইনোভেট) বিভিন্ন উদ্ভাবনী নিয়ে কাজ করছে। সেলক্ষ্যে এই সংস্থা অন্তর্ভুক্তিমূলক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় তথ্য বাতায়ন, মাইগভ, মুক্তপাঠ, নাইস প্লাটফর্মকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করেছে । একইসঙ্গে দেশের পাঁচটি ব্যাংকের ডিজিটাল সেবাকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য তেমন বিশেষ সাফল্যজনক উদ্ভাবন নেই বললেই চলে। সাফল্যজনক উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক, অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি।
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সাধারণত: ব্রেইল পদ্ধতিই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। তবে বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন ব্রেইল পদ্ধতির পাশাপাশি ব্যবহার করছেন মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক নামের একটি সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পাঠ্যবই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
তাদেরই একজন চট্টগ্রামে ঝাউতলা বঙ্গবন্ধু বাংলা বিদ্যাপিঠ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মুসা আলী রায়হান। এবারই প্রথম মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের সাথে তিনি পরিচিত হলেন।
মোহাম্মদ মুসা আলী রায়হান বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ব্রেইল বইয়ের উপরই নিভরশীল। এবছর নবম-দশম শ্রেনির ব্রেইল পদ্ধতির বই বিদ্যালয়ে আসেনি। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকও পেয়েছি আগস্ট মাসের শেষ দিকে। নতুন বছরের বই পেতে দেরি হলেও মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পাওয়ায় কিছুটা উপকৃত হয়েছি। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের মাধ্যমে আমাদের সময়ের ঘাটতিটা পূরণ করার চেষ্টা করছি। এছাড়া এতে পড়াটাও সহজ হয়েছে। নইলে সিলেবাস শেষ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।
আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নার্গিস আখতার রত্না। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পড়েই তিনি এসএসসিতে ৪.৫০ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছেন । নাসিরাবাদ ওমেনস কলেজের এইচএসসি ’র শিক্ষার্থী তিনি। সপ্তম শ্রেনি পযন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করেছেন। অষ্টম-নবম-দশম শ্রেনিতে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পড়ার সুযোগ হয় তার।
এ ব্যাপারে নার্গিস আখতার রত্না বলেন, মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্ভাবন হওয়ায় লেখাপড়া সহজতর হয়েছে। আমার কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণও ছিল। এর পেছনে একটি কারণও রয়েছে। ব্রেইল বই নবম-দশম শ্রেনিতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। আমরা যারা চোখে দেখতে পাই না অর্থাৎ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এই মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক প্রচণ্ড হেল্পফুল। এই বইটি না থাকলে আমাদের ফোন বা ইউটিউব ঘেঁটে পড়তে হতো। এটা অনেকটাই কষ্টকর ছিল। আর সিলেবাসের সবটা পাওয়াও যেতো না। কিন্তু মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক হওয়ায় আমরা সহজেই সময় ব্যয় না করে সিলেবাসের পুরোটাই পড়তে পেরেছি। যা আমার মতো অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে পড়ার ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করছে ।
কিছুটা আক্ষেপের স্বরে তিনি জানালেন, এইচএসসিতে বাংলা ও ইংরেজি বই ছাড়া আর কোনো বিষয় এবং স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক নেই। এইচএসসির অন্য বিষয়ের বইগুলো মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক হলে পড়াটা আমাদের অনেকটা সহজ হতো।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এই সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন 'ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন ইপসা'র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং এটুআই প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট - অ্যাক্সেসিবিলিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য। ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে উদ্ভাবক পুরস্কারও পেয়েছেন।
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের উদ্ভাবক ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ১ম থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তককে ডিজিটাল টকিং বইয়ে পরিণত করা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্মার্টফোন ব্যবহার ও ডেইজি ডিজিটাল টকিং বুকের মাধ্যমে লেখাপড়ার জন্য কাজ করেছি।
তিনি বলেন, মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ব্যবহারে সমস্যা হলো অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ডিভাইস, প্লেয়ার নাই। এই জিনিসগুলো না থাকায় মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক থাকার পরও অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এটা ব্যবহার করতে পারছেন না ।
সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি জাতীয় গাইড লাইন করেছে প্রবেশগম্যতার জন্য । প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্যোগগুলোতে সরকার ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে তহবিল গঠন করেছে। এরি ফলশ্রুতিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোড ( এনসিটিপি) প্রতিবছর প্রথম থেকে দশম শ্রেনির প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ১০৯ টি শিরোনামে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক করছে। এটা একটা বড় উদ্যোগ। এখন নতুন কারিকুলাম হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।
ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, যে কোনো পাঠ্য বই বাংলাদেশে একই সময়ে, একই দিনে, একই খরচে প্রকাশ হবে। তা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকেও বিতরণের ব্যবস্থা করা। এজন্য সরকারকে একটা নীতিমালা করা দরকার। এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। তারা যখন লাইব্রেরিতে বই কিনেন, তখন অ্যাক্সেসেবল বই কেনার ব্যবস্থাটাও রাখতে হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সম্পাদক (প্রেষণে) ও সহযোগী অধ্যাপক, মোহাম্মদ ফোরকান আলমের মতে, জুলাই আন্দোলনের কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম থেকে নবম এবং উচ্চ মাধ্যমিকের (বাংলা ও ইংরেজি) মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক গত বছরে বের হয়নি। চলতি বছরের মাল্টি মিডিয়া টকিং বুক জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রকাশ হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের কোনো নীতিমালা নেই। এর ফ্রেমওর্য়াকও নেই। আমাদেরও এ বিষয়ে তেমন ধারণা নেই।
তিনি আরো বলেন, মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পরিচালনায় সমস্যা হয়। কারণ এটিতে ভারি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। যাতে এটাকে আরো গ্রহণযোগ্য ও সহজতর করা যায়। উদ্ভাবকের সাথে আলোচনা করে এটাকে আরো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেটা করবো। ভবিষ্যতে এই উদ্ভাবনের উন্নয়ন করার নির্দেশিকাও পেয়েছি। এটি মূলধারার কার্যক্রমের সাথে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। আমরা নীতিমালা তৈরি করবো। যাতে এটি সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষার্থীর জন্য ভালো হয়। এর আরো নানা দিক দেখতে হবে। এটুআই নীতিমালা দিবে। সেই আলোকে আমরাও একটি নীতিমালা তৈরি করে পাঠ্যপুস্তকের সমান্তরালে এটা কতটা সুন্দর, যৌক্তিক হবে তার চেষ্টা করবো। উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা , ইংরেজি এই দুটি বিষয়ে ৫টি বই রয়েছে। অন্যান্য বিষয়গুলোর মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক নেই। দুটি বিষয়ের বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রথম থেকে নবম শ্রেনির মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ১০৯টি বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে।
সব শ্রেনির পাঠ্যপুস্তক নিয়েই আমরা কাজ করবো। সেটা পর্যালোচনা সাপেক্ষ। আমরা এখন অংকুরে রয়েছি। এটা নিয়ে আরো স্টাডি করবো। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য যেকোনো কাজই আমাদের কাছে স্বাগত। এর নির্দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র , রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতির বাইরে আমরা যেতে পারবো না। সেই অনুসারে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, আমরা তা করতে পারি। উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা নিজেরাই যোগাযোগ করবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিয়ে ফাইল দিলে জানাবো।
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৬ এর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের কাজ শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই’।
অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি
অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি উদ্ভাবন করেছেন 'ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন ইপসা'র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং এটুআই প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট - অ্যাক্সেসিবিলিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য। এই ডিকশনারিটি চার রকমের -বাংলা টু বাংলা, ইংলিশ টু বাংলা, ইংলিশ টু ইংলিশ, বাংলা টু ইংলিশ।
এ ব্যাপারে ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই না, অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিও ব্যবহার করতে পারবেন। বিষয়টি অনেকে অবগত নন। এ বিষয়ে কোনো সচেতনতা নেই।
অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি ৬০ লাখ বারেরও বেশি মানুষ ব্যবহার করেছেন। তবে এটি চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি ব্যবহারকারী উইম্যান উইথ ডিজাব্লিটিজ ডেভেলপম্যান্ট ফাউন্ডেশনের (ডাব্লিউ ডিডিএফ) চেয়ারম্যান শিরিন আখতার এর উপকারিতা এবং ব্যবহারে বাধাসমূহ তুলে ধরে বলেন , ব্রেইল ডিকশনারি নেই। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির ব্রেইল বইয়ের শেষে কতগুলো শব্দ দেওয়া থাকতো। তখন ভাবতাম, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্যবহারপযোগী একটি ডিকশনারি থাকলে ভালো হতো । অমর একুশে বইমেলা ২০১৮ তে অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি উদ্বোধন হওয়ার পর পরই কম্পিউটার, ফোনে ডাউনলোড করে নিই। যখনই প্রয়োজন হতো দেখতে পারতাম। এটা আমার কাছে একটা যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এখন কোনো শব্দের অর্থ জানার জন্য কারো সহযোগিতা লাগে না। এই ডিকশনারিটি উদ্ভাবনের আগে একটি শব্দের অর্থ জানতে অন্যের সহযোগিতা লাগতো। এখন নিজেই অন্যদের সহযোগিতা করতে পারি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এই ডিকশনারির সহযোগিতায় প্রাইভেট পড়ানো, শিক্ষকতাও করতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিকশনারি ব্যবহারে এখন কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে । সরকার এটিকে আপডেট করছে না। আগে মোবাইল, কম্পিউটারে ডেস্কটপ ভার্সনে ডাউনলোড করতে পারলেও এখন ডাউনলোড হচ্ছে না। এখন যখনই দরকার অনলাইনে কেবল মাত্র অডিওতে শুনতে পাই। ডেস্কটপ ভার্সনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা। সরকার এটিকে আপডেট করলে আগের মতো এর ব্যবহার সহজতর হবে জানালেন শিরিন আখতার।
তিনি আরো বলেন, উদ্ভাবনটা দারুণ। মানুষের কাছে পৌঁছাতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মানুষ বুঝতেই পারে না টেকনোলজি একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে সহযোগিতা করতে পারে। আগের সেই ধ্যান ধারণার মধ্যে এখনো মানুষ পড়ে আছে। ফলে প্রতিবন্ধী মানুষদের ম্যানিস্টিম হওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল টেকনোলজি ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন অসম্ভব । তারা পেছনেই পড়ে থাকবে।
ইউ