ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

English

সাক্ষাৎকার

আমরা এখনো সফলতার সঙ্গে পাটজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না: রাজিয়া সুলতানা

প্রকাশিত: ০০:০০, ২১ নভেম্বর ২০২১

আমরা এখনো সফলতার সঙ্গে পাটজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না: রাজিয়া সুলতানা

বর্তমানে বাংলাদেশের পাটশিল্পের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি উইমেনআই২৪ ডটকম-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ‘শখ ক্রাফটস’ এর প্রধান নির্বাহী- রাজিয়া সুলতানা।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন-লাবণ্য হক

উইমেনআই২৪ ডটকম : বাংলাদেশের পাটপণ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলুন?

রাজিয়া সুলতানা: বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসন ঠেকাতে পাটের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে বিশ্বের সচেতন মানুষ। ফলে পাটের বিশ্বব্যাপী সুদিন ফিরে আসছে। পাটপণ্যের জাগরণ শুরু হয়েছে নতুন করে। গুণগত মানের কারণে আজ বিশ্ব বাজারে এ দেশের পাটপণ্যের কদর বেড়েছে। বিদেশের মতো দেশেও পাটজাত পণ্যেল বিপুল সম্ভবনা। আর সমস্যা হলো যে, আমরা এখনো সফলতার সঙ্গে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি করতে পারছি না বহুবাধাঁ নিষেধের কারণে। এই দেশে পাট উৎপাদনের উপযোগী। কিন্তু আমাদের চাষী ভাইয়েরা পাট উৎপাদনের যে মূল্য সেটা না পাওয়াতে তারা হতাশ হয়ে গেছে। তবে এখন প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে পাটের প্রতি নজর দিয়েছে। সেটা দেখে আমরা যারা পাট নিয়ে কাজ তারা অনেক আশাবাদী।

উইমেনআই২৪ ডটকম : পাট পণ্য তৈরিতে এবং এর বাজারজাত করণে সরকারী- বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার কেমন পান?

রাজিয়া সুলতানা: এক কথায় পাচ্ছি না। নিজের চেষ্টায় যতটুকু করার করছি। সরকার বলছে তোমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে প্রজেক্ট প্রোফাইল নিয়ে তোমরা আসো। এছাড়া এসএমই ফাউন্ডেশনতো আছেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ দেয়ার জন্য। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার প্রয়োজন পড়েনি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমি সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিলাম তখন কাজ করতে হবে। প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করতে হবে। দেশ বিদেশে বাজারজাত করতে হবে। তো বিশ্ব বাজারে আমি যে অর্ডার পাবো সেটা টাইমমতো ডেলিভারি করা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। কারণ এগুলো একার পক্ষে করা সম্ভব না । এই শিল্পে দক্ষ জনবলের অনেক অভাব।

উইমেনআই২৪ ডটকম : পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে পাট শিল্প যেভাবে প্রসার লাভ করছে সেদিক থেকে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে আছে?

রাজিয়া সুলতানা: সেক্ষেত্রে বলব, ইন্ডিয়াতে যারা পাট শিল্প নিয়ে কাজ করে তারা প্রচুর পরিমাণে ট্রেনিং পাচ্ছে, সরকার থেকে ভর্তূকি পায়। আমাদের দেশের পাট তারা সস্তায় বিক্রি করছে। কিন্তু আমরা পারছি না। কারণ হচ্ছে সহযোগিতার অভাব। আমাদের যদি প্রপার সহযোগিতা করা হতো তাহলে আমাদের দ্বারাও সম্ভব হতো। কারণ ইন্ডিয়া থেকে আমাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি হাজার গুণ ভালো। মানসম্মত। আমাদের মধ্যে ইউনিটির অভাব। ইন্ডিয়ায় ১০ ফ্যাক্টরি মিলে ১টা করে জুট পল্লী গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি ওদেরকে সেলাই, কাটিং, ফেব্রিক, ডিজাইনের স্কিলড ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। এসব কিছুতেই সরকার ওদেরকে ভর্তূর্কি দিচ্ছে। আমাদের দেশে ইনসেনটিভ দিচ্ছে। এক্সপোর্ট করলে সেই ইনসেনটিভ পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যদি বিজিএমসি এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে জুট পল্লী গড়ে তোলে তাহলে পাট শিল্পের উন্নয়ন হবে। জুট পল্লী না হলে বিশ্ব বাজারে ব্যাপকহারে পাটপণ্যে রপ্তানি করা যাবে না। গার্মেন্টস পল্লীর মতো জুট পল্লীও করা দরকার। যেখানে ডাইং, ফেব্রিক, ফিনিশিং প্রভৃতির ফ্যাক্টরি থাকবে। কেননা আগে তো আমার ফেব্রিক পেতে হবে সেজন্য আমাদের প্রচুর ফ্যাক্টরি দরকার। কারখানা না থাকার কারণে প্রোডাক্টের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যেজন্য বায়ারদেরও ধরে রাখা যাচ্ছে না। আমরা নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে দিলে খরচ কম পড়বে। প্রোডাক্টের দামও কমে যাবে। বায়ারও পণ্য কিনবে। কারণ ইন্ডিয়ার চেয়ে আমাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি হাজার গুণ ভালো।


উইমেনআই২৪ ডটকম : পাট শিল্পের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো কী বলে আপনার মনে হয়?

রাজিয়া সুলতানা: এই শিল্প সমস্যায় জর্জরিত। দেশে পাট শিল্পের উন্নয়নে প্রচুর ফ্যাক্টরি তৈরি করতে হবে। দেশে চাহিদা অনুযায়ী পাটের ফেব্রিকের ফ্যাক্টরি অনেক কম। ফেব্রিক তৈরির জন্য অনেক কারখানা গড়ে তুলতে হবে।


উইমেনআই২৪ ডটকম : ‘শখ ক্রাফটস’ কবে থেকে পাট নিয়ে কাজ শুরু করেছে? পাট নিয়ে কাজ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? শখ ক্রাফটসের পাট পণ্যগুলো কী কী? এই পণ্যগুলো বাজারজাত করেছেন কোথায়?

উইমেনআই২৪ ডটকম: ২০০৬ সাল থেকে ‘শখ ক্রাফটস’ শুরু হয়। ছোটবেলা থেকে পাট এবং পাটপণ্যের প্রতি আগ্রহ ছিল । খুব পছন্দ করতাম। আমি তখন উইমেন এ্যান্টারপ্রেনার এসোসিয়েশনের ইসি মেম্বার ছিলাম। সেখানে পাটপণ্যে নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। সবার আগে আমি গিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে আমার মনে হলো এবার পাট নিয়ে কাজ করা যায়। তখন যেহেতু আমার নিজস্ব জমি ছিল, কিছু মূলধনও ছিল। তারপর ছোট একটা ফ্যাক্টরি দিয়ে আমি কাজ শুরু করলাম। শুরু করার পর আমি ব্যাপক সাড়াও পেয়েছি।
আমাদের প্রোডাক্ট নিয়ে যেটা বলব, আমি আসলে গৎবাধা কোন প্রোডাক্ট করি না। মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও যুগপোযোগী চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমি প্রোডাক্ট তৈরি করি। যেমন- চশমার কভার, টিস্যু বক্স, কুশন, পার্স, ফ্যাশন ব্যাগ ওয়ালেট, ক্যাপ, চাবির রিং, তিলজি, ক্যাটলির ঢাকনা প্রভৃতি। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী ব্যাংক, জেডিপিসি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কর্পোরেট হাউজের গিফট আইটেম ও বায়িং হাউজের অর্ডারের কাজ করছি।


উইমেনআই২৪ ডটকম : ‘শখ ক্রাফটস’ এর পাট পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য কী?

রাজিয়া সুলতানা: আমাদের প্রোডাক্টের সেলাই, কাটিং, ফিনিশিং, কালার খুব মানসম্মত। কোন খুতঁ নেই। পুরোপুরি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির। কারণ প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ভালো হলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের সুনাম হবে। আমার কথা হলো প্রোডাকশন কম হোক কিন্তু ফিনিশিং, কালার, কাটিং, সেলাই, কম্বিনেশন খুব ভালো হতে হবে। আমরা ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নিত্য নতুন ডিজাইনকে ফলো করি।

 

উইমেনআই২৪ ডটকম : বিশ্ববাজারে পাটপণ্য রপ্তানি ও উন্নয়নে সরকারের করণীয় কী?

রাজিয়া সুলতানা: এই শিল্পে দক্ষ জনবলের খুবই অভাব। বিশেষ করে ডাইং, ফিনিশিং, লেমিনেশন, ডিজাইনার এবং দক্ষ কারিগর তৈরিতে সরকারকে অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হবে।
সর্বপরি পাট শিল্পের উন্নয়নে বেকার তরুণদের জন্য সরকারকে বিনামূল্যে ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে হবে। বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন ট্রেনিং দিচ্ছে। কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই খাত করে এগিয়ে নিতে আরো বেশি বেশি সরকারী- বেসরকারী ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে হবে। কেননা প্রধানমন্ত্রী যে ব্যাপকভাবে পাট শিল্প নিয়ে কাজ করতে বলছে সেভাবে কাজ করতে হলে আরো বড় আকারে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ পাট পণ্যেও ডিজাইন সেন্টার, ফেব্রিক ফ্যাক্টরি, কারিগর তৈরিতে ট্রেনিং সেন্টার খোলা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো পাট নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করা যাবে।

 

উইমেনআই২৪ ডটকম : বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কেমন?

রাজিয়া সুলতানা: বর্তমানে সারা বিশ্বে পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে শপিং ব্যাগের। বিশ্বের অনেক দেশ প্লাস্টিকের ব্যাগ কে নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে। যেজন্য জুটের ব্যাগের চাহিদা প্রচুর। যেটা ডিসপোজাল হয়। আমাদের দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যাগ বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে যদি আমরা চেষ্টা করি। যেটা চায়না, ইন্ডিয়া দিচ্ছে। এজন্য সরকারকে এবং এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুারোর মাধমে দেশে বায়ার আনাতে হবে। বায়ার সেলার মিটিং করাতে হবে। এখানে এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুারোর ভূমিকা অনেক বেশি।


উইমেনআই২৪ ডটকম : পাটশিল্পে নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা কেমন?

রাজিয়া সুলতানা: এই শিল্পে গুটি কয়েক প্রমিনেন্ট কোম্পানি ব্যবসা করছে। নতুন উদ্যোক্তাদেরকে প্রমিন্যান্ট কোম্পানিগুলো স্পেস দিচ্ছে না। বড় কোম্পানিগুলোর উচিত নতুনদেরকে লাইমলাইটে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করা। তাদের প্রোডাক্টের বাজারজাত করণে সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এদিক দিয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের নিয়ে জুট পল্লী করা দরকার। বায়ারদের অর্ডার সমানভাবে ভাগ করে দেয়া উচিত। জুট পল্লী হলে আমাদের দেশের যেসব বায়াররা পণ্য নিতে আসে তারা ফেরত যাবে না। বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের সফলভাবে রপ্তানির জন্য জুট পল্লী করা দরকার।


উইমেনআই২৪ ডটকম : শখ ক্রাফটসের পাটপণ্য নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পণা কী?

রাজিয়া সুলতানা: আমার একটাই স্বপ্ন-জুটের প্রোডাক্ট নিয়ে এক্সপোর্টে যাবো। নিজে একটা ফেব্রিকের ফ্যাক্টরি করবো। ভবিষৎতে যেন কয়েক’শ লোককে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। পাশাপাশি ডিজাইন সেন্টার ও ট্রেনিং সেন্টার চালু করবো।

উইমেনআই২৪ ডটকম : আপনাকে সময় দেয়ার জন্য উইমেনআই২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রাজিয়া সুলতানা: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

 

উইমেনআই ২৪ডটকম//এসএল//

 

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর

ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক পুলিশিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

৪১ জেলায় তাপপ্রবাহ, আরও বাড়বে গরমের তীব্রতা

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার নারী কাউন্সিলর

সিয়ামের নায়িকা হচ্ছেন বুবলী

বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি

বিএফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে, নিহত ৬

গ্যাটকো মামলায় খালেদার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

আবারো কমলো স্বর্ণের দাম

নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বাংলালিংক ও হুয়াওয়ের চুক্তি

ছাদে বাগান থাকলেই উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী

ব্যাংককে শেখ হাসিনাকে রাজকীয় বরণ

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ