ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪

English

এক্সক্লুসিভ

হারিয়ে যাচ্ছে ‘খাড়িয়া ভাষা’, জানেন শুধু ২ নারী

উইমেনআই প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে ‘খাড়িয়া ভাষা’, জানেন শুধু ২ নারী

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের অতি বিপন্ন ভাষার মধ্যে একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা খাড়িয়া। চা বাগান শ্রমিকদের তেমনি এক জাতিসত্তা হলো ‘খাড়িয়া’। ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ভাষার নাম ‘খাড়িয়া ভাষা’। আর এই ভাষা মাত্র দুজন মানুষের মুখে এখন টিকে আছে। সত্তরোর্ধ্ব বয়সের চা শ্রমিক এই দুই বোনের মৃত্যুর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে এই ভাষা। বন্ধ হয়ে যাবে একটি সভ্যতা, সাংস্কৃতিক সম্পদের প্রবেশ পথ।

বাংলাদেশে নিজস্ব ভাষার অস্থিত্ব রয়েছে ৪৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। এরমধ্যে বম, কোল, চাক, শো, খাসি, কোড়া, পাংখুয়া, খাড়িয়া, সৌরা, কোডা, মুন্ডারি, মালতো, কন্দ, খুমি, রেংমিতচা, খিয়াং, লালেং বা পাত্র ও লুসাই ভাষাগুলো বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক ভাষা সমীক্ষায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এ ভাষাগুলো ব্যবহার করা লোকের সংখ্যা খুবই কম। এসব ভাষাভাষী লোকেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

চা শিল্পাঞ্চলে রয়েছে বহু ভাষাভাষির লোকজন, রয়েছেন বেশ ক’টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। তাদের মধ্যে চা বাগানগুলোতে অনেক জাত-পাত রয়েছে যারা নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে, লিখতে বা পড়তে পারেন না। চা বাগান শ্রমিকদের তেমনি এক জাতিসত্তা হলো ‘খাড়িয়া’। ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ভাষার নাম ‘খাড়িয়া ভাষা’। এ ভাষাটি এক সময় বাংলাদেশের চা শিল্পাঞ্চলে কর্মরত অসংখ্য খাড়িয়া শ্রমিকের প্রাণের ভাষা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে দেশের চা বাগান থেকে ভাষাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর খাড়িয়া ভাষা এখন টিকে আছে দুইজনের মুখে। তারা দুই বোন ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা। এ দুই বোন ছাড়া দেশে আর কেউ এ ভাষায় কথা বলতে, পড়তে বা লিখতে পারেন না। এমনকি তাদের পরিবারের কোনো সদস্যেরও ভাষাটি সম্পর্কে জ্ঞান নেই। দেশে মাত্র এই দুই নারী ঐতিহ্যবাহী ‘খাড়িয়া’ ভাষায় কথা বলতে পারেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ব্যাচরা চা বাগানের শ্রমিক ভেরোনিকা ও খ্রিস্টিনাই শেষ ব্যক্তি; যাদের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে তাদের মাতৃভাষা খাড়িয়া।

‘বীর তেলেঙ্গা খাড়িয়া ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ নামের খাড়িয়া ভাষা শিক্ষা সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা পিওস নানোয়ার বলেন, ‘আমি নব্বইয়ের দশকে স্কুল শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় দাদির কাছ থেকে প্রথম কিছু খাড়িয়া শব্দ শিখেছিলাম। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ ভাষাটি টিকিয়ে রাখতে ২০১৭ সালে আমাদের বর্মাছড়া বাগানস্থ উত্তরণ যুব সংঘের মাধ্যমে আমরা গঠন করি ‘বীর তেলেঙ্গা খাড়িয়া ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’ নামের একটি খাড়িয়া ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র।
প্রাথমিকভাবে ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটার মাধ্যমে কিছু শিশুকে খাড়িয়া ভাষা সম্পর্কে ধারণা দেবার চেষ্টা চলে। মূলত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চা বাগানগুলোর ৪১টি শ্রমিক কলোনিতে খাড়িয়া জাতিগোষ্ঠীর বাস। সরকারিভাবে ২০১৯ সালে তৈরি করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় খাড়িয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা দেশের চা বাগানগুলোর ওই ৪১টি শ্রমিক পাড়ায় চষে বেড়িয়ে হাজারের মতো খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর সন্ধান পাই এবং তাদের নাম তালিকাবদ্ধ করি। অনুসন্ধানে ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা ছাড়া আর কোথাও খাড়িয়া ভাষায় কথা বলার মতো কাউকে পাইনি। খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর নব প্রজন্ম মিশ্রণ বাংলায় কথা বলে অভ্যস্ততা লাভ করেছেন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তৎকালীন সময়ে তরুণ প্রজন্মকে খাড়িয়া ভাষা রক্ষায় ভাষাটি শেখানোর চিন্তা-ভাবনা করি। কিন্তু দেশে খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর নিজস্ব কোন বর্ণমালা না থাকায় আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

শ্রীমঙ্গল রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজি বলেন, আমাদের দেশের চা বাগানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বহু ভাষাভাষি মানুষের বসবাস। চা বাগানগুলোর অনেকগুলো ভাষা সংরক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে আজ বিপন্ন। খাড়িয়া ভাষায় কথা বলেন মাত্র দুইজন। বাকি খাড়িয়া জনগোষ্ঠী সাদ্রিবাংলা, দেশোয়ালী ও খাড়িয়া ভাষার সংমিশ্রণে এক ধরণের ভাষায় কথা বলেন। প্রকৃত খাড়িয়া ভাষা দুই বোনের মৃত্যুর পর হারিয়ে যাবে। এটি সংরক্ষণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আবশ্যক।

ভেরোনিকা কেরকেটা বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগেও এ দেশে আমি, আমার স্বামী ও ছোট বোন এই তিনজন খাড়িয়া ভাষায় কথা বলতে পারতাম। ২০১৯ সালে আমার স্বামী আব্রাহাম সোরেং অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ভাষাটি নিয়ে টিকে আছি আমি ও আমার ছোট বোন খ্রিস্টিনা কেরকেটা। মাঝে-মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হলে আমরা নিজেদের খাড়িয়া ভাষায় টুকটাক কথা বলি। আমাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি কেউ এ ভাষা না জানায় তারা কেউই এ ভাষায় কথা বলতে পারে না, দুই-একটি শব্দ জানে মাত্র। শেষ বয়সে এসে মনে চায় নিজেদের ভাষায় প্রাণখুলে কথা বলি। তবে আর কেউ খাড়িয়া ভাষাটি না জানা, না বুঝায় তাদের সঙ্গে প্রাণখুলে গল্প করা সম্ভব হয় না।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, খাড়িয়া ভাষা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। কারণ এই ভাষায় এখন কথার বলার মত লোক নেই। এই ভাষায় শুধুমাত্র দুই বোন কথা বলতে পারেন। বর্মাছড়ার এই দুই বোনের মৃত্যুর পর দেশ থেকে খাড়িয়া ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের ভাষা সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে উপজেলা প্রশাসন।

//এল//

নরসিংদীতে বজ্রপাতে প্রাণহানি ২

যে দেশে সন্তান নিলেই পাবেন ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা !

‘বিদ্যুৎ সংকটে লোডশেডিং হবে গুলশান-বনানীতে’

ডিএসইসির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

বাজেট ঘোষণা ৬ জুন 

ভারতের কাছেও হোয়াইটওয়াশ টাইগ্রেসরা

মেয়ের মা হলেন পরীমণি

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে লাখ টাকা ক্যাশ ভাউচার পেলেন এনামুল

সিআইপি কার্ড পেলেন যে ১৮৪ ব্যবসায়ী

অটোয় যাত্রী তোলা নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণহানি ৩

তামিলনাড়ুতে বিস্ফোরণে প্রাণহানি ৮

রাতে বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ

পিরোজপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মবিরতি চলছে

নিজের নামে স্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর না