অধিকার, মর্যাদা ও ঐক্যের পথে গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সম্মেলন

"গৃহকর্মীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ" প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হলো গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম-বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলন। দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) ও সুনীতি প্রকল্পের সহযোগিতায় এই সম্মেলনটি আয়োজিত হয়।

সম্মেলনে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের গৃহকর্মী নেত্রী, নীতিনির্ধারক, উন্নয়নকর্মী ও সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের গুরুত্ব: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা গৃহকর্মীদের আইনি স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

• স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড (সেকেন্ড সেক্রেটারি, হাই কমিশন অব কানাডা, ঢাকা): তিনি গৃহকর্মীদের সঙ্গে থাকতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, গৃহকর্মীরা শীঘ্রই আইনে শ্রমিক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বাস্তবে রূপ নেবে।

• শাহীন আনাম (নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন): তিনি অধিকার আদায়ে আন্দোলনকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গৃহকর্মীরা এখন নিয়োগকারীর অনুগ্রহ নয়, বরং নিজের অধিকার দাবি করছেন— এটাই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাঁর মতে, শ্রম আইন সংস্কারের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি।

• তারেক আজিজ (কর্মসূচি সমন্বয়ক, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ): তিনি বলেন, দেশের ন্যূনতম মজুরি কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ গৃহকর্মী বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো খাত যুক্ত হয়নি। তিনি নারীদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান, কারণ নারীরা জেগে উঠলে দেশও জেগে ওঠবে।

ফোরামের দাবি ও কর্মপরিকল্পনা: গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আবুল হোসেন গৃহকর্মীদের পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন: আইনি অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা, এবং মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার। তিনি এই দাবিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল:

• বিগত এক বছরের কার্যক্রমের বিস্তারিত মূল্যায়ন।

• গৃহকর্মীদের আইনি স্বীকৃতি ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নির্ধারণ।

• সদস্য সংগ্রহ ও জেলা ভিত্তিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের কৌশল নির্ধারণ।

গৃহকর্মী নেত্রী নার্গিস আক্তার, শেফালি আক্তার, সোনিয়া আক্তার ও বন্যা রাণী সরকার বিগত বছরের অর্জন, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। রাবেয়া আক্তার (কর্মজীবী নারী) ও শংকর চন্দ্র রায় (ডিএসকে) আইনি স্বীকৃতি ও নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মতামত দেন।

সম্মেলনের সভাপতি জাকিয়া সুলতানা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, "আমাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। সংগঠিত থেকে আমরা গৃহকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সফল হবো।"

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা সুলতানা, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সোমা আক্তার ও শারমিন আক্তার। এছাড়া ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-এর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা এই আয়োজনের প্রশংসা করেন।