ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, , ১৩ অক্টোবর ২০২৫

English

এক্সক্লুসিভ

নোবেলজয়ী মাচাদো: গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব ও ত্যাগের প্রতীক

উইমেনআই ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১১ অক্টোবর ২০২৫

নোবেলজয়ী মাচাদো: গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব ও ত্যাগের প্রতীক

ছবি সংগৃহীত

ভেনিজুয়েলার কট্টর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য নিরলস সংগ্রাম করে অবশেষে ২০২৫ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো। নরওয়ের নোবেল কমিটি তাঁকে "ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং একনায়কত্ব থেকে গণতন্ত্রে একটি ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণের সংগ্রামের" স্বীকৃতি দিয়েছে।

নোবেল কমিটি মাচাদোকে "অন্ধকারের মধ্যে গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রাখা এক সাহসী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শান্তির চ্যাম্পিয়ন" হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাঁর কর্মজীবন, ব্যক্তিগত ত্যাগ এবং নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে।

কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবন: ভোটের অধিকার থেকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক

মারিয়া করিনা মাচাদোর (৫৮) রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল তার সামাজিক ও নাগরিক জীবন থেকে।

  • সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি: শিল্প প্রকৌশল ও অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মাচাদো ১৯৯২ সালে কারাকাসের বিপন্ন শিশুদের সহায়তার জন্য ফাউন্ডেশন এথেনা (Fundación Atenea)-এর সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই কাজটিই প্রমাণ করে, জনগণের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের মূল উৎস ছিল সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশটির প্রতি তাঁর সহানুভূতি।

  • গণতান্ত্রিক প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা: ২০০২ সালে তিনি সুমতে (Súmate) নামের একটি সুশীল সমাজ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও ভোট পর্যবেক্ষণ নিয়ে কাজ করত। এটি তাকে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত করে তোলে।

  • সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান: ২০১০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টে তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের একজন কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। ২০১৪ সালে তাকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ক্রমাগত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন।

  • ঐক্যের নেতৃত্ব: দীর্ঘদিনের বিভক্ত বিরোধী দলকে তিনি মুক্ত নির্বাচন এবং আইনের শাসনের দাবিতে একত্রিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। নোবেল কমিটি তাঁর এই নেতৃত্বকে "একসময় বিভক্ত বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিকারী শক্তি" হিসেবে বর্ণনা করেছে।

  • ২০২৪ সালের নির্বাচন: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি অন্য বিরোধী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন এবং লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবককে সংগঠিত করেন। তিনি অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে 'বুলেটের বদলে ব্যালট' বেছে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, যা গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর গভীর অঙ্গীকারের প্রকাশ।

সামাজিক জীবন, সংসার জীবন ও ব্যক্তিগত ত্যাগ

রাজনৈতিক সক্রিয়তা মাচাদোর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে চরম দুর্ভোগ এনে দিয়েছে।

  • পারিবারিক বিচ্ছেদ ও আত্মগোপন: মারিয়া করিনা মাচাদো বিবাহবিচ্ছেদপ্রাপ্ত এবং তিন সন্তানের জননী। তাঁর রাজনৈতিক কাজের কারণে সৃষ্ট হুমকির মুখে তাঁর সাবেক স্বামী ও দুই সন্তান দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন। শুধু তাঁর বড় মেয়ে আনা করিনা তাঁর পাশে থেকেছেন। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁকে প্রায়শই আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে।

  • মাতৃত্ব ও রাজনীতি: সন্তান ও দেশের প্রতি তাঁর দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হওয়ায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে কঠিন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা বিশ্বজুড়ে নারী কর্মীদের কাছে একটি অনুপ্রেরণামূলক বার্তা বহন করে।

  • জনগণের সহানুভূতি: তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাটি ভেনিজুয়েলার লক্ষ লক্ষ পরিবারকে অনুপ্রাণিত করেছে, যারা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বহু ভেনিজুয়েলাবাসীর কাছে তিনি এখন সেই নেত্রী, যিনি তাদের দুঃখ ও ত্যাগ অনুধাবন করতে পারেন।

একজন নারী হিসেবে সমাজ ও বৈশ্বিক নারী উন্নয়নে ভূমিকা

মাচাদোর সংগ্রাম বৈশ্বিক নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

  • সাহসী নারী নেতৃত্বের প্রতীক: ভেনিজুয়েলার মতো দমনমূলক স্বৈরশাসিত দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নির্বাচনী বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দেশে থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া— তাঁকে ল্যাটিন আমেরিকার বেসামরিক সাহসিকতার এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

  • ঐক্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: তিনি এমন একটি বিভক্ত বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, যা প্রমাণ করে নারীরা কেবল আন্দোলনে নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কৌশল নির্ধারণেও সফলভাবে বিভিন্ন পক্ষকে এক করতে পারেন।

  • আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: তিনি বিবিসি'র ১০০ প্রভাবশালী নারী (২০১৮) এবং টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি (২০২৫)-এর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এই স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীদের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে তুলে ধরে।

  • অনুপ্রেরণামূলক বার্তা: মাচাদোর জীবন ও কাজ প্রমাণ করে যে, অন্ধকার সময়েও একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নারীর সাহস ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব। তাঁর ব্যক্তিগত ত্যাগের গল্প বিশ্বজুড়ে নারী কর্মীদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণা বহন করে।

শান্তি ও আশার বার্তা

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর মাচাদো বলেন, "আমার কোনো ভাষা নেই... আমি কেবল একজন মানুষ, আমি নিশ্চিতভাবে এই পুরস্কারের যোগ্য নই। এটি সমগ্র সমাজের একটি অর্জন, এটি একটি বিশাল আন্দোলনের ফল।"

তিনি এই পুরস্কার ভেনিজুয়েলার মানুষকে এই বার্তা দেয় বলে মনে করেন যে, "আমরা একা নই। বিশ্ব আমাদের বিশাল, মহাকাব্যিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।" মাচাদোর এই বিজয় বিশ্বের সকল নারী নেতা ও মানবাধিকারকর্মীকে উৎসাহিত করে, যারা গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য লড়াই করছেন।

ইউ

সেফ এক্সিট নিয়ে যে মন্তব্য করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজনীতিতে নারী-প্রতিবন্ধীর বাধা: মূল কারণ প্রবেশগম্যতা

তালেবানের দাবি: ৫৮ পাক সেনা হত্যা, সীমান্ত বন্ধ

নতুন রাজনৈতিক দলের তথ্য আবার যাচাই করবে ইসি

শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু সোমবার

নিরাপদ আবাসন: রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব

বন্দিদশার ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন শহিদুল আলম

অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে নিল সেনাবাহিনী

অনুষ্ঠান বন্ধ করায় উদীচীর ক্ষোভ, শাস্তি দাবি

নোবেলজয়ী মাচাদো: গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব ও ত্যাগের প্রতীক

রাজনীতিতে নারীর ৫০% প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি

স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস: জেনে নিন, জেগে উঠুন

পরিবেশ কর্মীদের নিরাপত্তায় আইনি কাঠামো জরুরি: রিজওয়ানা

জাতীয় পার্টির সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশে এবারও শীর্ষে বাংলাদেশিরা