ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, , ২০ অক্টোবর ২০২৫

English

প্রযুক্তি

বাংলা ভাষায় প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সমৃদ্ধ করতে নানা প্রচেষ্টা

রীতা ভৌমিক 

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২০ অক্টোবর ২০২৫

বাংলা ভাষায় প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সমৃদ্ধ করতে নানা প্রচেষ্টা

ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম

প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল উদ্যোগ-৪

বাংলা ভাষায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা সমৃদ্ধ করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলছে নানা প্রচেষ্টাও। 

স্কিন রিডার ও ইশারা ভাষার সফটওয়্যার
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে সহজেই সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে পারেন এনিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। যাতে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা কম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তথ্য প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতা বাড়ানো সমাজসেবার কাজ হলেও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এ নিয়ে কাজ করছে। এরিই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল  গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিকরণ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। একটি  বেসরকারি কোম্পানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবেরেশনে গবেষণাটি করছে।
এই প্রকল্পের আওতায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্কিন রিডার এবং বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ইশারা ভাষার সফটওয়্যার তৈরি করছে।

এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছাড়াও যারা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট তারাও ইশারা ভাষা ব্যবহার করতে পারবেন। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ( বিসিসি) পরিকল্পনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব করিম বলেন, যাদের মোবাইল, কম্পিউটারে ডিভাইস আছে তাদের জন্য স্কিন রিডার প্রযোজ্য। স্কিন রিডার বড় সফটওয়্যার নয়। এটা ডেমো পর্যায়ে রয়েছে। পেশাগত কাজে ব্যবহার করার মতো এখনো কাজ সম্পন্ন হয়নি। আরেকটু পরিপূর্ণ হলে আমরা এটা প্রকাশ করবো। বাস্তবায়নে যতটা সময় লাগে। এটাতে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।

তিনি বলেন, ইশারা ভাষার সফটওয়্যারে কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা বলতে ও শুনতে পান না ইশারার মাধ্যমে কথা বলেন, তাদের ইশারাটা এই সফটওয়্যার ক্যাচ করবে, কি বলতে চাচ্ছেন তা বাংলা ভাষায় শোনাবে বা লিখে দিবে। এজন্য প্রথমে ইশারাগুলোকে মানদণ্ড করা হয়েছে। ছবি-ভিডিও অন্তভুক্তি করা হয়েছে। এআই ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারী যখন তার সামনে ইশারা করবে সে সেটা প্রক্রিয়াকরণ করে তুলে ধরবে।

 ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব করিম আরো বলেন, এর চ্যালেঞ্জ হলো ছবির আকার বড় হওয়ায় প্রক্রিয়াকরণ করে ফলাফল আসতে বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় লাগছে। এই দেরি পযন্ত মানুষ অপেক্ষা করবে না। মানুষ  দেওয়ার সাথে সাথে ফলাফল চায়। এর উপর গবেষণা এখনো চলছে। কিছু সময় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের শক্তিশালী জিপিও ছিল না। জিপিও’র সমস্যা মিটেছে। এই কাজগুলো যাতে দ্রুত হয় তার ব্যবস্থা  নেওয়া হয়েছে। গবেষণা করে সময়টা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন এটা ব্যবহার করা যাবে। একটা ইশারা করার পর ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হচ্ছে এর তথ্য জানার জন্য। 

একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাজারে কিছু কিনতে গিয়ে দোকানদারকে বোঝাতে পারছেন না। দোকানদারের কাছে মোবাইলে এটি থাকতে পারে। বা যেকোনো ব্যক্তির মোবাইলে ইশারা অ্যাপ সফটওয়্যার থাকতে পারে। অথাৎ এভাবেই ইশারা অ্যাপের মাধ্যমে ইশারা ভাষাটা মানুষের কাছে পৌঁছানো। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থানগুলো হলো ডাক্তারের চেম্বার, ডাক্তারের কাছে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের সমস্যাটা বলতে পারেন না। তৈরি হলে এটা ডাক্তারদের কাছে পাঠানো হবে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ডাক্তার রোগীর সমস্যাটা জানতে পারবেন। আদালত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন সাক্ষীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি বেশি পরিমাণে দরকার। সব জায়গায় আমরা এটাকে ছড়িয়ে দিবো।  ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এই গবেষণা সম্পন্ন করতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা হলো বাংলা ভাষাভাষী সব বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ভাষান্তরের মাধ্যমে অন্য ভাষাভাষী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

বাংলা ভাষার সহায়ক উপকরণ
বৃটিশ কাউন্সিলে আইএলটিএস হতো। আইএলটিএস উঠিয়ে কম্পিউটার ভিত্তিক করা হয়েছে। এর ফলে বৃটিশ কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না শারীরিক প্রতিবন্ধী সুমনা খান। কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে হলে ওকে অনস্কিন বোডে লিখতে হবে। এই দুই জায়গায় প্রতিবন্ধিকতার শিকার হয়েছেন তিনি।  

এরিস পায়ারে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ, ওপিডিতে প্রোগাম অফিসার হিসেবে কর্মরত সুমনা খান বললেন, আমি বিদেশে স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করছিলাম আইএলটিএসের সমস্যার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি কাজ করি অনস্কিন বোডে। এ কারণে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যে ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা ছিল তা আটকে গেছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতায় বাংলা ভাষার সহায়ক উপকরণ নিয়ে কেউ সচেতন নয়। এমনকি অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তিষ্ঠান, ওয়েব সাইট, ডিজিটাল সার্ভিস সহায়ক নয়। এ নিয়ে মানুষ যত তাড়াতাড়ি সচেতন হবেন, তত তাড়াতাড়ি কাজ হবে। এক্ষেত্রে দরকার সরকারি পর্যায়ে আইনগত ভিত্তি এবং  টেক পণ্যের প্রবেশগম্যতা।

বাংলা ভাষায় যে তথ্য প্রযুক্তি রয়েছে  সেগুলো সহায়ক উপকরণে সহজতর করতে কাজ করছেন ইনটিলিয়ন  টেকব্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আশিকুর রহমান অমিত। তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি । বাংলা ভাষার সহায়ক উপকরণের প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করছেন।

বাংলা ভাষার সহায়ক উপকরণের প্রতিবন্ধকতা নিরসনে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি । প্রথমত সচেতনতা, দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের একটা আইনগত জায়গা নির্ধারণ, তৃতীয়ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারিত্ব। 

আশিকুর রহমান অমিত জানান, প্রথম শুরু করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মোবাইলে ওয়ার্ডস ফাইল পড়তে পারতেন না। এই সমস্যা সমাধানে একটা ডক রিডার তৈরি করেন। একটা বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যারা ব্রেইল প্রিন্টিং এ কাজ করেন। তাদের ব্রেইল প্রিন্টার নষ্ট হয়ে গেলে ভারত কিংবা মালয়েশিয়ায় নিয়ে যেতে হতো। পার্সগুলো সচরাচর দেশে পাওয়া যেতো না। ইনডেস্কে লিডারশিপ নেই। তিনি বলেন, এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে আমরা ব্রেইল পদ্ধতিটাকে সহজতর করি। রিসাচ এন্ড ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে গিয়ে আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হই। বাংলা ভাষার জন্য সহায়ক উপকরণ নেই। অন্যদিকে যে পণ্য গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় রয়েছে তা বাংলায় ভাষান্তরের চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে বড় বাধা আমরা যখন টেক পণ্য আমদানি করি, টেক পণ্যের জন্য সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড নেই। এইচ এস কোড ইস্যু হলো যতগুলো পণ্য বাংলাদেশে আসে বা আমদানি করা হয় এর সবগুলোর জন্য সরকার থেকে আলাদা আলাদা এইচ এস কোড নির্ধারণ করা থাকে । যার অধীনে  ওই পণ্যের শুল্ক , মূল্য সংযোজন কর কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়।

আশিকুর রহমান অমিত আরো বলেন, টেকের উপর এইচএসকোড না থাকায় প্রিন্টার স্বাভাবিক কোডে আনতে হয়। বা আমরা এই সম্পর্কিত অন্য কোনো ডিভাইস আনলে প্রিন্টার এইচএস কোডে আনতে হয়। সহায়ক উপকরণের ক্ষেত্রে এটি  একটি বড় বাধা। 
তিনি বলেন, প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তিনটি মানদণ্ড মেনে চলতে হয়।

এ,  ডাবল এ এবং ত্রিপল এ।এ  মৌলিক মানদণ্ড - কনটেন্ট এবং টেকনোলজি দুই জায়গা থেকে প্রবেশগম্যতা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০ শতাংশ প্রবেশগম্যতা করতে পেরেছে ।

ডাবল এ  মানদণ্ড - বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য  ন্যুনতম সুবিধা দেওয়া। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বাধার -জায়গাগুলো কোথায়?  কোনো ভিডিও  ডকুমেন্ট তৈরি।  লেখা ও ক্যাপশন আছে, ভিডিও দেখে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বুঝবে। ডাবল এ’র মানদণ্ডে এখন আমরা কাজ করছি।

ত্রিপল এ  মানদণ্ড হচ্ছে - ভিডিও ডকুমেন্টসে সাইন ল্যাগুয়েজ থাকা। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেবল ক্যাপশন দেওয়া ছাড়া খুব কমই ডকুমেন্টস আছে। যেখানে থ্রিপল এ মানদণ্ড মানা হয়।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশে যারা উদ্যেক্তা, টেক ওয়েন্টার প্রেইনার রয়েছেন তারা প্রবেশগম্যতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে এখনো সচেতন নয়।  

  টেক কোম্পানিগুলো যখন পণ্য উৎপাদন করে , তারা ভাবে কতোটা লক্ষ্য অর্জন করা যাবে। বাংলাদেশের বাজারে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা প্রতিবন্ধী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে না। টেক শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহায়তা করতে হবে।  এই কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করতে হবে। তাহলে অনেকগুলো দরজা খুলে যাবে। উন্নত বিশ্বের টেক পণ্য গুলোর যেগুলো বাজারে এসেছে এর ৯৮ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয়েছে। এরপর টেক ইন্ড্রাস্টি সেগুলোকে গ্রহণ করেছে। 

টেক পণ্য গুলো বাজারে আসায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের স্মার্ট সাদাছড়ি  আছে, যা ভয়েজ নির্দেশ দেয়। ডানে তে হবে, বামে যেতে হবে। কতদূর যাবে। এই জিনিসগুলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ইউ

জবি ছাত্রদল নেতা খুন: জানাজায় বাবার শোক, বিচার দাবি

গণঅভ্যুত্থানে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

হাইড্রোলিক হর্ন ও নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, জরিমানাসহ বাস ডাম্পিং

পর্নকাণ্ডে সক্রিয় বাংলাদেশি দম্পতি বান্দরবানে গ্রেপ্তার

পর্নকাণ্ডে সক্রিয় বাংলাদেশি দম্পতি বান্দরবানে গ্রেপ্তার

হিন্দু ও শিখদের দেশে ফেরার আহ্বান তালেবান সরকারের

সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা হত্যা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ

বন্যা পুনর্বাসন: রেড ক্রিসেন্টের উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ

অধিকার, মর্যাদা ও ঐক্যের পথে গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সম্মেলন

বাংলা ভাষায় প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সমৃদ্ধ করতে নানা প্রচেষ্টা

শাহজালালের আগুনে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি: ইএবি

ভোটের মাঠে দায়িত্বে থাকবে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা: ইসি সচিব

রাজনীতিবিদদের অনৈক্যে অনেকেই হতাশ: মির্জা ফখরুল

শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটের শিডিউল স্বাভাবিক

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের অংশগ্রহণ পূর্বশর্ত: বিশেষজ্ঞরা