ঢাকা, বাংলাদেশ

রোববার, , ২৬ অক্টোবর ২০২৫

English

বিনোদন

সালমান শাহ মামলা: ২৯ বছর পর নতুন তদন্তের মোড়

উইমেনআই প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৬ অক্টোবর ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৯, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

সালমান শাহ মামলা: ২৯ বছর পর নতুন তদন্তের মোড়

ফাইল ছবি

ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু (১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর) ২৯ বছর পর আদালতের নির্দেশে অবশেষে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই দীর্ঘ পথচলায় মামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ভূমিকা, তাদের বিতর্কিত বক্তব্য এবং ঘটনার দিন তাদের রহস্যময় নির্লিপ্ততা সবই এক গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে। মামলাটি বর্তমানে রমনা মডেল থানা পুলিশের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে।

লাশ নিয়ে নির্লিপ্ততা: গভীর সন্দেহ ও অপরাধবোধের ইঙ্গিত

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী এবং মামা আলমগীর কুমকুম বারবার আক্ষেপ করে বলেছেন যে, তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, কথিত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডন বা চলচ্চিত্রের সহকর্মীদের প্রায় কেউই তার মরদেহের সাথে ছিলেন না বা শেষকৃত্যে অংশ নেননি।

  • বিশেষজ্ঞের ইঙ্গিত: অপরাধ মনোবিজ্ঞানীদের মতে, হত্যার চুক্তির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্তদের (সামিরা, ডন) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের এই গভীর নির্লিপ্ততা অপরাধবোধ এবং প্রমাণ বা পরিণতি এড়ানোর চেষ্টার লক্ষণ হতে পারে। লাশের কাছাকাছি না থাকার মাধ্যমে তারা হত্যাকাণ্ডের আলামত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চেয়েছে, অথবা আবেগের মুখোশ খুলে যাওয়ার ভয় এড়িয়েছে।

আদালতের নির্দেশে মামলা হত্যা মামলায় রুজু হওয়ার পর থেকেই অভিযুক্তদের, যার মধ্যে ডনও রয়েছেন, লাপাত্তা থাকার বিষয়টিও এই সন্দেহের আগুনে নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে।

খলনায়ক ডন: 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' না 'ফরমায়েশ খাটা' লোক!

মামলার অন্যতম আসামি এবং রিজভীর জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যা চুক্তিতে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে অভিযুক্ত খল অভিনেতা আশরাফুল আলম ডন বিভিন্ন চ্যানেলে নিজেকে সালমান শাহর 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' দাবি করলেও, পরিবারের দাবি ছিল ডন সালমানের বডি ম্যাসাজ করতেন এবং তার বিভিন্ন ফরমায়েশ শুনতেন এটি একটি সৌজন্যমূলক সম্পর্ক ছিল।

  • ডনের ভূমিকা: ডন দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর চরিত্র হননের চেষ্টায় রত ছিলেন। তার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য একজন শোকাহত মাকে প্রমাণের তোয়াক্কা না করে জনসমক্ষে হেয় করার প্রচেষ্টা। ডনের এই ধরনের 'টাস্কভিত্তিক' বক্তব্য এবং লাশের সাথে না থাকার নির্লিপ্ততা—দুটিই তার বিতর্কিত ভূমিকা এবং ষড়যন্ত্রে তার সংশ্লিষ্টতার দিকেই ইঙ্গিত করে।

রিজভীর জবানবন্দি ও চুক্তিবদ্ধ হত্যার অভিযোগ (১৯৯৭ সাল)

মামলার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর মোড় এনেছিল ১৯৯৭ সালে রিজভী আহমেদ ফরহাদের দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।

  • হত্যার চুক্তি ও প্রক্রিয়া: রিজভী দাবি করেন, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন। ঘুমন্ত সালমানকে ক্লোরোফর্মইনজেকশন দিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা সাজানো হয়। রিজভীর জবানবন্দিতে ডন, প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই সহ মোট ১১ জনের নাম উঠে আসে।

  • বক্তব্য প্রত্যাহার: পরবর্তীকালে, রিজভী জামিনে মুক্ত হন এবং লন্ডন থেকে তার আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। তিনি দাবি করেন, জবানবন্দিটি স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করা হয়েছিল এবং তাকে ৭ কোটি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা করা হয়।

ফরেনসিক অসঙ্গতি ও সামিরার দম্ভ

  • সামিরার দম্ভ: মামলার প্রধান আসামি সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় এসে প্রয়াত শাশুড়ির প্রতি যে দম্ভপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তার এই 'প্রমাণ করে দেখাক' ধরনের চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে লাশের প্রতি নির্লিপ্ততা এবং ২৯ বছর ধরে মামলা ঝুলে থাকার প্রেক্ষাপটে, রহস্যের জন্ম দেয়।

  • মরদেহের আলামত: চূড়ান্ত শুনানিতে উল্লেখ করা হয়, সালমান শাহর মরদেহে বুকের বাম পাশে কালো দাগ, অস্বাভাবিকভাবে মল ও বীর্য নির্গত হওয়া এবং ঘর থেকে সিরিঞ্জ ও স্ত্রীর ব্যাগ থেকে ক্লোরোফর্ম উদ্ধার হওয়া—এগুলো আত্মহত্যার তত্ত্বকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

  • জুটি ভাঙার কারণ: সালমানের ম্যানেজার মো. মুনসুর আলীর বক্তব্য অনুসারে, সালমান-মৌসুমী জুটি ভাঙার মূল কারণ ছিল সামিরার সন্দেহ। সালমান ম্যানেজারকে বলেছিলেন, "তোমার ভাবী আমায় এমনিতেই সন্দেহ করে। আমি আর মৌসুমীর সঙ্গে কাজ করবো না। আমার সংসারে আমি সুখ চাই, শান্তি চাই।"

বিশেষজ্ঞের চোখে: ঠান্ডা মাথায় আভিজাত্য বজায় রাখার মনস্তত্ত্ব

বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনদের দীর্ঘকাল ধরে সমাজে আভিজাত্য বজায় রেখে চলার পেছনে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল 'কভার-আপ' কাজ করছে:

১. নার্সিসিজম এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা (Narcissism and Control): এই ধরনের ব্যক্তিরা সহানুভূতি বা অনুশোচনার অভাব (Lack of Remorse) নিয়ে চলেন। তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবের উপর বিশ্বাস থাকে যে তারা আইনি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ডন ও সামিরার দম্ভপূর্ণ আচরণ তারই প্রকাশ হতে পারে।

২. গ্যাসলাইটিং ও ভিকটিম ব্লেমিং (Gaslighting and Victim Blaming): অপরাধ থেকে মনোযোগ সরাতে তারা বারবার গ্যাসলাইটিং এবং ভিকটিম ব্লেমিং কৌশল ব্যবহার করে। ডন ও সামিরার দ্বারা নীলা চৌধুরী বা সালমানের ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে আনা তারই প্রমাণ।

৩. সংগঠিত অপরাধীর আচরণ (Organized Criminal Behavior): তদন্ত মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী, সংগঠিত অপরাধীরা (যারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপরাধ করে) সাধারণত তদন্তের সময় নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্য গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকে অথবা হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যায়। লাশের প্রতি নির্লিপ্ততাও এই ঠান্ডা মাথার মানসিকতার একটি অংশ।

৪. আর্থিক প্রাচীর ও সুরক্ষা (Financial Barrier and Protection): প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম এবং রিজভীর বক্তব্য প্রত্যাহার—এসবই ইঙ্গিত দেয় যে, বিশাল অঙ্কের আর্থিক প্রাচীর ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা তার বক্তব্যকে প্রত্যাহার করানো সম্ভব হয়েছে।

আদালতের এই নির্দেশ (হত্যা মামলা হিসেবে রুজু) সালমান শাহর ভক্ত ও পরিবারের জন্য ন্যায়বিচারের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। লাশের প্রতি নির্লিপ্ততা, রিজভীর অবস্থান পরিবর্তন এবং ফরেনসিক আলামত—সবকিছুই এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। এই মামলার রহস্যভেদে আদালতের প্রয়োজন হবে কঠোর পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক আইনি সহযোগিতা এবং প্রভাবশালী মহলের চাপ উপেক্ষা করে প্রতিটি তথ্য ও সাক্ষীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সত্য উদঘাটনের দৃঢ়তা।

ইউ

দেশে ফের কমল স্বর্ণের দাম

উপদেষ্টা পরিষদের সভা নভেম্বরেই শেষ: তথ্য উপদেষ্টা

২৯ বছর পর উন্মোচনের পথে ‘ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড’

সালমান শাহ মামলা: ২৯ বছর পর নতুন তদন্তের মোড়

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা তদন্তে উচ্চ কমিটি গঠন

ডন-সামিরা লাপাত্তা, মোবাইল ফোনও বন্ধ

উত্তরা-আগারগাঁও পথে মেট্রো চলাচল শুরু

ফার্মগেটে দুর্ঘটনা: প্রাণহানির পরিবারের পাশে মেট্রোরেল

একক নামে সিমকার্ড কমানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেট্রোরেলের প্যাড পড়ে প্রাণহানি, ট্রেন চলাচল বন্ধ

উদীচীর সভাপতি রতন সিদ্দিকী, সম্পাদক কংকন নাগ

চৌদ্দগ্রামে সালিশে নারীকে প্রকাশ্যে মারধর: ব্লাস্টের নিন্দা

সাইবার হয়রানির শিকার নারীরা, ডিপ্রেশনে ভোগেন অনেকে

তরুণ রাজনীতিকদের সংলাপ: গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার তাগিদ

আইএলও’র ৩ চুক্তিতে সই, বাস্তবায়নের তাগিদ ’নারীপক্ষ’র