
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিতকরাসহ ১৬ দফা সুপারিশ নারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকার জেন্ডারবান্ধব বাজেট করলেও বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন পর্যালোচনা বা সমীক্ষা পাওয়া যায় না। তাই পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজেটে বরাদ্দের কতটুকু নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বয়ে আনলো, সে বিষয়ে কোন তথ্য-উপাত্ত নেই।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নে বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যকর বণ্টন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। বিএনপিএস’র সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্নার সভাপতিত্বে ও পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তৃতা দেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের লিড (উইমেন রাইটস) মরিয়ম নেসা, জেন্ডার বাজেট ও প্লানিং বিশেষজ্ঞ নিলুফার করীম, প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের (উই ক্যান) প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) উপ-পরিচালক ইশরাত শারমীন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, জেন্ডার বাজেট নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত। বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলে কোনও নীতিমালাই নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। তিনি জানান, সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া ‘সমতার পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২৪-২৫ প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, বরাদ্দকৃত বাজেটের মাধ্যমে নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, সে বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত ও খতিয়ান আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে উত্থাপন করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যক্রমগুলো কীভাবে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার কর্মপরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত, তার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতি বছর প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত স্পষ্টতা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট ফোকাল পয়েন্টদের তথ্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকতে হবে।
সুপারিশে আরো বলা হয়, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জেন্ডার ও জেন্ডার বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের সেবাদানের দক্ষতাকে বাৎসরিক কর্মমূল্যায়নের সাথে যুক্ত করতে হবে। নারীর জন্য জামানতমুক্ত ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সেবা বাড়ানো বিশেষ করে আইনি সহায়তা প্রদান, শেল্টার হোম তৈরি এবং সেখানে রেখে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। জেন্ডার বাজেট বিষয়ক গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। নারীর চাহিদা, বর্তমান বাজার বিবেচনায় উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। কৃষক নারীদের ‘কৃষক’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ তাদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ লোকবল বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচার বন্ধে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রান্তিক নারীদের উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত করবার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউ