
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
নারীর বৈষম্যহীনতা দূর করার জন্য সরকারের তৎপরতা প্রয়োজন, যা আমরা পাচ্ছি না। সিডও সনদের সংরক্ষিত দুইটি ধারা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। সিডও নারীর পারিবারিক জীবন ও জনজীবনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির আয়োজনে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহায়তায় আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে সিডও দিবস উপলক্ষে "নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় চাই অভিন্ন পারিবারিক আইন" বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহতাবুন নেসা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিক উপপরিষদ সদস্য শায়কা শান্তা।
সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির অর্থ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য ফেরদৌস জাহান রত্না।
লিখিত বক্তব্যে আর্ন্তজাতিক উপপরিষদ সদস্য শায়কা শান্তা বলেন, সিডও সনদ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা এবং সংবিধানের অঙ্গীকার পূরণ করে নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নারী আন্দোলন এবং নারী আন্দোলনের অগ্রণী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ণের দাবি জানিয়ে আসছে। বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, সম্পদ-সম্পত্তিতে অধিকার সম্পর্কিত পারিবারিক আইনে অসমতা নারীর ব্যক্তিজীবন, তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সৃষ্টি করে বহুমাত্রিক বৈষম্য। অসম পারিবারিক আইনের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারীর স্বাধীন মতপ্রকাশ, স্বাধীন চলাচল, সিদ্ধান্তগ্রহনের সুযোগ ও সক্ষমতা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা পর্যন্ত বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি এসময় আরো বলেন, নারীর জীবনে উদ্বুদ্ধ নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট সিডও কমিটি বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সুপারিশ জমা দেয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিডও কমিটি ৪০টি সাধারণ সুপারিশ জমা দিয়েছে। সিডও ২১নং সাধারণ সুপারিশে বিবাহ এবং পারিবারিক বিষয়, যেমন সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার, পুরুষ আত্মীয়ের মতো সম্পত্তিতে সমঅংশ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের জন্য ধর্মভিত্তিক বৈষম্যপূর্ণ আইন বিলোপ করে আইন সংস্কার এবং নতুন আইন প্রণয়নের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নারী আন্দোলন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, নারীর মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র-সমাজ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সিডও সনদের ২টি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে এর পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন, একইসঙ্গে প্রয়োজন নারীর জীবনে কার্যকর সমতা আনার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা-।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহতাবুন নেসা বলেন, সিডও হচ্ছে আমাদের নারী আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার এবং নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম দলিল।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস বলেন, ১৯৮৪ সনে সিডও সনদ বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করলেও এখনো সিডও সনদের উপরে সংরক্ষণ বহাল রেখেছে। কয়েক দশকে নারীবান্ধব আইন প্রণীত হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ দূর্বল প্রচলিত বৈষম্যমূলক সামাজিক ও আইনী কাঠামোর কারণে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহ সকল ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে অভিন্ন পারিবারিক আইনের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে তবে সিডও সনদে ধারা ২ এবং ১৬.১ (গ) এর উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে নারী ও কন্যাদের কল্যাণে সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন আবশ্যক।
কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, সিডও সনদে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ এই কথাটির মধ্যে বৈষম্য দুরের অর্ন্তনিহিত অর্থ নিহিত আছে। কিভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারীর জীবনে সার্বিক সমতা নিয়ে আসা যায়- তা সিডও সনদে আলোচনা করা হয়েছে। নারীর জীবনের বাস্তবতা ও স্বার্থ পুরুষের জীবনের বাস্তবতা ও স্বার্থ থেকে ভিন্ন। দীর্ঘপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া এই সনদে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের উপর রয়েছে আইনী বাধ্যবাধ্যকতা। আইনী সমতার কথা বলার পাশাপাশি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণীত হলেও , শুধুমাত্র সুযোগের সমতা , আইনী সমতা দিলেই হবে না প্রকৃত সমতা দেয়ার কথা সিডও সনদে বারংবার জোর দেয়ার পাশাপাশি প্রকৃত সমতা আনয়নে আইনী পরিবর্তন, নীতিমালা প্রয়োগের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সিডও তে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে ছায়া রিপোর্ট দেয়ার সুযোগ আছে, যেখানে সংগঠন প্রতিবার প্রতিবদেন জমা দিয়ে থাকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ও অন্যান্য নারী সংগঠনকে সাথে নিয়ে। সিডও সনদ সরকার গ্রহণের পর এর মূলবাণী প্রচারের জন্য সংগঠন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সিডও সনদের সম্পক অত্যন্ত গভীর। নারী ও পুরুষ সুযোগের সমতার ক্ষেত্রে সমভাবে যেন সুযোগ পায় সেলক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য সংবিধানে বলা হলেও তা বাস্তবে হয়নি। সিডও সনদ বাস্তবায়িত হলে নারীর ও পুরুষের মধ্যে থাকা বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। সমাজে ক্ষমতা দখলের জন্য সহিংস আচরণের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে একটা হাতিয়ার হচ্ছে সিডও। স্থায়ী উন্নয়নের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, নারীর প্রতি ক্ষতিকর আচরণ বন্ধ করতে হবে, এটি সিডও সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সম্বভে নয়। তিনি এসময় বলেন একই সাথে সিডও সনদ বাস্তবায়নের দায় সরকারের, সরকার এখানে দায়বদ্ধ হলে এর সুফল ভোগ করবে জনগণ, এটিই সিডও সনদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
সহিংসতা প্রতিরোধে সিডও সনদকে বোঝা ও কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই আন্দোলনকর্মীদের মধ্যে সিডও কে সংঘবদ্ধ না রেখে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন অভিন্ন পারিবারিক আইন নারীর পারিবারিক অধিকার প্রাপ্তিতে ভূমিকা পালন করে , নারী পুরুষের অসমতা সর্বক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে সরকারের গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
মুক্ত হয়ে উঠবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বহ্নি দাশ পুরকায়স্থ; ঢাকা মহানগরের সদস্য হেনা চৌধুরী, সদস্য সৈয়দা রতœা; শাহজাহানপুর পাড়া কমিটির সদস্য মেহেনাজ আক্তার মিষ্টি ও অন্যান্য উপস্থিত সংগঠকবৃন্দ। তারা বলেন, বৈষম্য, দায়বদ্ধতার বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে পাঠচক্রের মধ্যে আলোচনা অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। সিডও সনদ বাস্তবায়নে সিডও কমিটির কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে বৈষম্য মূলক প্রথা ভাঙার প্রক্রিয়া পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। সিডও বিষয়ে পোষ্টার, লিফলেট প্রখাশনার উপর জোর দিতে হবে, আইন বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।;
ইউ