
ফাইল ছবি
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে সরকার। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর এ অধ্যাদেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে সাইবার স্পেসে জুয়া খেলা, জালিয়াতি ও প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত কার্যক্রমকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাইবার প্ল্যাটফর্মে জুয়া খেলার জন্য পোর্টাল, অ্যাপস বা ডিভাইস তৈরি, পরিচালনা, অংশগ্রহণ, সহায়তা বা প্রচার-প্রসারের যেকোনো কাজে জড়িত থাকলেই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তির বিধান
-
সাইবার জুয়া: সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড, অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
-
জালিয়াতি: সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড, অনধিক ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
-
প্রতারণা: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড, অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই নজরদারি জোরদার করেছে এবং জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জুয়ার পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুয়া পরিবারে অশান্তি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং মানসিক চাপ তৈরি করে। পরিবারে অযাচিত ঋণের বোঝা সৃষ্টি হয়, দাম্পত্য কলহ বেড়ে যায় এবং সন্তানদের লালন-পালনে অবহেলা দেখা দেয়। সমাজে জুয়া নেশার মতো বিস্তার লাভ করে, যা অপরাধ প্রবণতা ও আর্থিক দুর্নীতি বাড়ায়।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে ক্রীড়াজনিত বাজি বা বিনোদনমূলক গেমস আইনসিদ্ধ করা হয়, তবে তা থেকে সরকারের রাজস্ব আসতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ইতিবাচক দিক কার্যকর হওয়ার সুযোগ কম।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
-
ইসলাম: জুয়াকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম) ঘোষণা করেছে। কোরআনে একে ‘শয়তানের কাজ’ বলা হয়েছে, যা পারিবারিক শান্তি নষ্ট করে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে।
-
খ্রিস্টধর্ম: লোভ ও ভাগ্যনির্ভরতায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অনেকে একে খ্রিস্টীয় নৈতিকতার বিরুদ্ধে মনে করেন।
-
হিন্দুধর্ম: ধর্মীয় শাস্ত্রে জুয়া পরিবার ও সমাজ ধ্বংসকারী হিসেবে চিহ্নিত। মহাভারতে জুয়ার কারণে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাতের উল্লেখ রয়েছে।
-
বৌদ্ধধর্ম: জুয়া আসক্তিকে ‘অকল্যাণমূলক কর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা ব্যক্তির মুক্তি ও নৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে।
উপসংহার
১ সেপ্টেম্বর জারি করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী সাইবার জুয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণা দমন শুধু আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষারও প্রশ্ন। সরকারের এ উদ্যোগ সাইবার সুরক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউ