
ছবি সংগৃহীত
১০০ শিশুর মধ্যে ১১ জন শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। গত বছরের তুলনায় ৭৫ ভাগ মেয়ে শিশুর নির্যাতন বেড়েছে। চলতি বছরে ৭ মাসে ৩০৬ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিশুদের প্রতি সহিংসতা, শোষণ ও অবহেলা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। স্থানীয় পযার্য়ে শিশু সুরক্ষা কমিটি ও ওয়াচ গ্রুপকে শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) টেরে দেস হোমস নেদারল্যান্ডস এর আয়োজনে ব্রেকিং দা সাইলেন্স এবং ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের সহযোগিতায় দা ডেইলি স্টারের কনফারেন্স হলে সকাল সাড়ে দশটায় 'শিশু সুরক্ষা ও নিযাতন প্রতিরোধে বহুপাক্ষিক সংলাপ ' এ বিশিষ্টজনেরা একথা বলেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপসচিব ও পরিচালক ( প্রশাসন ও অথ) মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া, বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক একেএম মাসুদ আলী। উপস্থিত অতিথি ছিলেন ব্রেকিং দা সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা, ভার্কের উপ-নির্বাহী পরিচালক মাসুদ হাসান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ২,৩, ৫ এর কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের
ওয়ার্ড ১, ২,৩ এর কাউন্সিলর
পারভীন আক্তার, গাজীপুরের গাজীপুর সদরের সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার দিলারা রহমান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষার থানা শিক্ষা অফিসার জামিলা আক্তার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জোন অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন, শিশু অধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা নাঈমা আক্তার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ঢাকা ও গাজীপুর জেলার জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য ও সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল, বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএল এর সিবিসিপিএম প্রকল্পের পিএমই ও ফান্ডরেইজিং এবং প্রোগ্রাম ফোকাল, প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নুরুল কবির। এছাড়াও সংলাপে অংশ নেন ব্রেকিং দা সাইলেন্সের শিশু সুরক্ষা ফোরামের সদস্য শিবলী, গাজীপুরের মাসুমা, সিবিসিপিএমের সদস্য সানজিদা, ভাকের জীবন কৃষ্ণ রায়, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন, বিটিআরসি কর্মকর্তা তাইফুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রেকিং দা সাইলেন্সের পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।
স্বাগত ও সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, আইন করে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। শিশু সুরক্ষার সাথে স্টেক হোল্ডাররা জড়িত রয়েছেন। তারা ছোট ছোট উদোগ নিলে বড় আকারের সফলতা আসতে পারে।
তিনি আরো বলেন, টেরে দেস হোমস নেদারল্যান্ডস বর্তমানে ঢাকার মিরপুর ও সাভারে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রে পাঁচশোর বেশি প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশু রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসরকারি কারখানা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আমরা তা করতে পারি না। দেশে অনেক আইন আছে, যেগুলো শিশুর অধিকার বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু তা কতটুকু যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিশুর নির্যাতন রোধে যে দুটি আইন আছে, সে সকলে জানলে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাবে। সরকার এসব কাজ, একা করতে পারবে না। সবাই এগিয়ে এলে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
একেএম মাসুদ আলী বলেন, শ্রমিক পরিবারের শিশুদের দেখভাল করতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। অনেকেই কর্মের খোঁজে পরিবারসহ গ্রাম থেকে নগরে আসেন। কিন্ত শিশুদের যে সুবিধা গ্রামে পাওয়া যায়, যা নগরে নাই। সমাজসেবা অধিদপ্তর এ বিষয়ে কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
নূরুল কবির বলেন, সরকারের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায়, বিশেষ করে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজিতে শিশুদের উন্নয়ন, বিকাশ ও শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও বাংলাদেশ শিশু আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধে কেবল আইন নয়, প্রয়োজন সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয়ভাবে শিশু সুরক্ষার কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা কমিউনিটি-ভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রইসুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আমাদের কাছে ১০৯ নম্বরে একশোর বেশি অভিযোগ আসে। অধিকাংশই পারিবারিক সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত। সরকার সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য জেলা পর্যায়ে প্রত্যেক সরকারি মেডিকেলে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
তাইফুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা করে শিশু অপহরণ, যৌন নির্যাতনের মতোও ঘটনা ঘটে। সাইবার ওয়ার্ল্ড খুব চাকচিক্য একটি জায়গা। শিশুরা সেটা বুঝতে পারে না। তাই শিশুদের সাইবার বিষয়ে সচেতনতা করা জরুরি। আমরা চাই শিশুরা নিরাপদে থাকুক।
রোকসানা সুলতানা বলেন, নিরবতা ভাঙার জন্য আমরা কাজ করছি। কিছুটা নিরবতা ভেঙেছে। আরো নিরবতা ভাঙতে চাই। প্রতিটি শিশু নিরাপদে থাকুক।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, পোশাক শ্রমিকরা যেখানে অবস্থান করেন এবং কাজ করেন সেখানে তাদের শিশুদের সুরক্ষা নেই। এই সমস্যা গুলো দূর করতে আমরা কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে পারি।
এছাড়াও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ওপর। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের জীবনে একটি স্থায়ী ক্ষত জায়গা করে নেয়। শিশুদের সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ইউ