ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, , ২১ জুলাই ২০২৫

English

মতামত

সাংবাদিক ফরিদা আখতার খানের চলে যাওয়ার দিন আজ

দিলরুবা খান:

প্রকাশিত: ২২:০০, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:০০, ২০ জুলাই ২০২৫

সাংবাদিক ফরিদা আখতার খানের চলে যাওয়ার দিন আজ

সংগৃহীত ছবি

আজ আমার বোন, লেখক,কবি, সাংবাদিক ফরিদা আখতার খান (ফানুস) আপার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী । 
 ২০০৮ সালের  এই দিনে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আপা আমাদের ছেড়ে  পরপারে চলে গেছেন।  যে বোনকে ছাড়া একটি মুহূর্ত  থাকতে পারতাম না, যিনি মায়ের মতো আগলে রাখতেন। অথচ  তাকে ছাড়া ১৭টি বছর পার করে দিলাম!

তখন  আমি আর ইমরোজ( ভাই বোন) বেশ ছোট। আমাদের বাবা মারা যান, ঠিক এক মাস পর আততায়ীর হাতে শহিদ হন আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা  সিদ্দিকুর  রহমান খান।  বাবা আর ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে সদ্য ম্যাট্রিক  পাশ আপা   (তখন তার বিয়ে ঠিকঠাক,কদিন বাদেই তা সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল) আপা  বিয়ের পিড়িতে না বসে আমাদের  দুই ভাই বোন এবং মায়ের দায়িত্ব  কাঁধে তুলে  নিলেন। কারণ  বাবা আর ভাই ছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি।  আপা বিয়ে করলে আমাদের কে দেখবে? এমনটি ভেবেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত। আমরাও ছোট ছিলাম বলে বুঝিনি। আমাদের গ্রামে রেখে আপা তখন পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চাচা খান মোহাম্মদ মইনুদ্দীনের বাসায়। দেখানে থেকে   সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে  ভর্তি হন।  আমার চাচা  চাচিয়াম্মা এবং চাচাতো ভাই বোনেরা  অসম্ভব রকমের ভালো মানুষ।তাইতো তাদের স্নেহ ছায়ায় থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় পার্ট টাইম চাকরি আর টিউশনি  করে করে সংসারের হাল ধরেছিলেন আপা।

মানিকগঞ্জের   সিংগাইর থানার চারিগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও সাংস্কৃতিক  পরিবারে জন্ম।  বাবা  বিশিষ্ট  মওলানা গোলাম রাজ্জাক খান।চাচা কবি, শিশু সাহিত্যিক খান মোহাম্মদ মইনুদ্দিন।

বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর  ফরিদা আখতার খানের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি  হয়েছিল সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার  মাধ্যমে। কাজ করেছেন দৈনিক নব অভিযান, রুপালী,লাল  সবুজ,মুক্তকন্ঠের ফিচার বিভাগে। প্রদায়ক ছিলেন  সাপ্তাহিক বিচিত্রা,পূর্বাণী,পাক্ষিক যোগাযোগ বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকায়।   বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, কচিকাঁচার মেলা, অনুপ্রাস,বাংলাদেশ নারী, সাংবাদিক  কেন্দ্র, সাব এডিটরস কাউন্সিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের মেম্বার ছিলেন তিনি।এছাড়াও তিনি কাজ করেছেন  বার্তা সংস্থা ইউএনবির সিনিয়র সাব এডিটর হিসেবে,বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ বিভাগে। তার সর্বশেষ  কর্মস্থল ছিল দৈনিক ডেসটিনি। 

কাব্য,সাহিত্য সংস্কৃতি, লেখালেখি,সাংবাদিকতায় ব্যস্ত  থেকেও কীভাবে আপা আমাদের দুই,ভাইবোন আর মাকে ছায়ার মতো আগলে রাখতেন,ভাবলে বিস্মিত হই। এরপর ৯১ সালে মাকে হারানোর পর আপা যে কীভাবে আমাদের মায়ের আসন নিলেন সেটি ভাবলেও অবাক,হতে হয়।আপা ছিলেন  সরল সাদাসিধে নির্লোভ অসম্ভব রকমের ভালো মানুষ।সবার সংগে কথা বলতেন প্রাণ খুলে। কত যে গুণি ছিলেন আপা।লেখালেখি ছিল তস্ত সার্বক্ষণিক  সংগী। কবিতা গল্প প্রবন্ধ  সাক্ষাৎকার  বই আলোচনা সবটাতেই ছিল তার মুন্সীয়ানা। অনুবাদেও ছিল তার  বিশেষ দখলদারত্ব। আর এ কারণেই বিটিভিতে,  ইউএনবিতে কাজ পেয়েছিলেন খুব সহজেই।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গৌরবের সংগেই কাজ করে গেছেন সেখানে। বেশ ক বছর  আগে  বাংলাদেশে  এসেছিলেন সায়মন ড্রিং। মুক্তিযুদ্ধ  জাদুঘরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। সেখানে ফরিদা আপাও গিয়েছিলেন। সায়মন ড্রিংকে নিয়ে  মুহূর্তের  মধ্যেই  লিখে ফেললেন  ইংরেজিতে অসাধারণ   এক কবিতা।এবং সেটি সায়মন ড্রিংকে উপহার দিলেন। সাক্ষাৎকার ও  নিলেন।তাদের ইংরেজিতে  কথোপকথনে আমি শুধু অবাক হয়ে দেখতাম।।বাসায়ও ইমরোজ আর ফানুস আপা যখন ইংরেজিতে  অনর্গল কথা বলত,আমি ফ্যলফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। 

আপার কত যে লেখালেখি।কত যে অনুবাদ  ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন পত্রিকায়। ঘরে  লাল নিউজপ্রিন্টের কাগজের পাতায় পাতায়। বই আকারে  শুধু প্রকাশ পেয়েছিল   স্বনির্ভর বাংলাদেশ নামের একটা এন জিওতে  কিছুদিন কাজের সুবাদে ‘'মাহেরা ও চাহারন দের কথা’’ নামের বইখানি।

আপা শুধু লেখালেখিতেই নন।  ভালো বক্তাও ছিলেন।আবৃতিও করতেন অসাধারণ   গাইতে পারতেন রবীন্দ্র সংগীত । অস্মভিব রকমের রবীন্দ্র প্রেমী ছিলেন। সংগীতের চর্চা  করেছিলেন বাফায়।  গান শুনতে পছন্দ করতেন। ভালোবাসতেন হেমন্ত, সতীনাথ  অতুল প্রসাদ সচীন্দ্র,মানবেন্দ্র,  ভূপেন হাজারিকা, আশা, ঊষা,  লতা  রুনা লায়লা,  ফিরোজা বেগম শিবনম মুস্তারি আর মমতাজের গান। এছাড়াও কীর্তন,ভজন। বিশেষ করে রাধা কৃষনের মানভঞ্জন ছিল আপার খুবই প্রিয়। কত ক্যাসেট যে আপা কিনতেন পাটুয়াটুলি থেকে। 

এতসব গুণের পাশাপাশি আপা গৃহকাজেও নিপুণ।সেলাই ফোড়াইও  ছিলেন পারদর্শী । ঘরে সেলাই মেশিন ছিল না।পাটুয়াটুলি থেকে পাউন্ড হিসাবে গজ কাপড় কিনে এনে  সেগুলো  দিয়ে কী চমৎকার  ভাবে ফ্রক বানিয়ে দিতেন আমাকে আমার,ভাগ নি শাহীনকে। ফ্রকের বুকে,হাতায় গলায়  কুরুশ কাটার ফুল, লেস আর ঝালর বসিয়ে দিতেন । ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আপা কত কিছু যে বানাতেন। ঘরে পুরোনো চাদর,শাড়ি ওরনা দিয়ে চমৎকার   সব টেবিল ক্লথ,সোফা কভার   টেলিভিশন কভার বানাতেন।পুরোনো প্যান্ট দিয়ে কী সুন্দর পাপোশ বানিয়ে তাতে সুই সুতোর ফোড়ে আকিবুকি ডিজাইন করে দরজার সামনে রাখতেন। ইম রোজের শার্ট প্যান্টও আপাই বানিয়ে দিতেন।  কুরুশ কাটার টেবিল ক্লথ ট্রে ক্লথ কী নিখুঁত  করে সেলাই করতেন। পিঠা বানাতেন খুব নিখুঁত  করে। বিশেষ করে নকশি পিঠা।রকমারি  পরোটা বানাতেন আপা।ত্রিকোনো,চৌকোনো প্যাঁচানো, রংগীন পরোটা। আপা ছিলেন এক অসম্ভব রকমের বৃক্ষপ্রেমী। তাইতো ড্রয়িং রুম  শোবার ঘর,  খাবার ঘর, বারান্দা,  রান্নাঘর এমনকি স্নান ঘরেও শোভা পেত  রকমারি ফুল  আর বাহারিপাতার গাছগুলো। 

আপার কথা  লিখে শেষ করা যাবে না আমার জীবদ্দশায়।শুধু বলব, আমি বোনের মুল্যায়ণ করতে পারিনি।এত ভালো আর গুণি মানুষটাকে সুখ দিতে পারিনি।ইমরোজ তবু আপাকে মুল্যায়ণ করেছে। ওর অপছন্দের কাজও করেছে  শুধু আপাকে মুল্যায়ণ করতে গিয়ে। আর আমি আপার সম্পূর্ণ মতের বিরুদ্ধে  বিয়ে করে সারাটা জীবন কষ্টই পেয়ে গেলাম। শান্তি পাইনি এতটুকুও। 

আরো লেখার  ছিল। চোখদুটো ঝাপসা  হয়ে আসছে। বেদনায় ভারাক্রান্ত   হচ্ছে মন।তাই আর পারছি না।

আমার বোনের আত্মার প্রতি মাগফেরাত কামনা করে সবার কাছে দোয়া চাইছি  পরিবারের পক্ষ থেকে আমি আর  ইমরোজ। 

//এল//

সাত ঘণ্টা জিম্মি রেখে যুবকের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিল সাড়ে ৬ লাখ

ভাস্কর্য শিল্পী হামিদুজ্জামান খান-এর মৃত্যুতে উদীচীর শোক

ইয়াসমিন মেমোরিয়াল পদক পেল গণস্বাস্থ্যের ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগ

সাংবাদিক ফরিদা আখতার খানের চলে যাওয়ার দিন আজ

পাকিস্তানকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

কোটালীপাড়ায় গণগ্রেপ্তারের অভিযোগে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

শেখ হাসিনা-ঘনিষ্ঠরা লন্ডনে সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টায়: গার্ডিয়ান

৫ উইকেট খুইয়ে বিপর্যয়ে পাকিস্তান

শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের প্লট দুর্নীতি মামলা বদলি

গাজায় চিকিৎসার্থীদের ওপর হামলা, নিহত ৬৭

সব জনগোষ্ঠীর মর্যাদায় নতুন সংবিধান চাই: নাহিদ

জুলাই গণহত্যা মামলায় ৪৫ জনের তদন্তে ৩ মাসের নির্দেশ

টেকসই বিনিয়োগে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি জরুরি: রিজওয়ানা

ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের প্রয়াণে বাংলা একাডেমির শোকবাণী