ছবি সংগৃহীত
নির্বাচনের আগে দেশে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, "সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন।"
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএম ভবনে 'মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা' শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফরম 'মাকাম' এই সংলাপের আয়োজন করে।
ভীতি ও আশঙ্কার প্রসঙ্গ:
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিশেষভাবে ভীতি প্রকাশ করে বলেন, "আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।"
-
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ: তিনি শুনতে পেয়েছেন যে, আওয়ামী লীগ 'দরবারগুলোর' সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদের বোঝানোর জন্য যে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে এবং মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন:
-
সামাজিক ফ্যাসিবাদ: তথ্য উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও "সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে।" তিনি মনে করেন, দেশে ইসলামের যতগুলো ধারা আছে, সব কটি ধারার মধ্যে সংলাপ ও সংযোগের সুযোগ তৈরি না হলে রাষ্ট্র খুবই শঙ্কার মধ্য দিয়ে এগোবে।
-
ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার: দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন তরিকা থাকলেও কোনো রাজনৈতিক নেতাই তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা ভাবেননি। উল্টো তারা কেউ কওমিদের সঙ্গে, কেউ সুন্নিদের সঙ্গে—এভাবে ভাগ করে নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার করেছেন।
-
সুফি ও আওয়ামী লীগ সংযোগ: মাহফুজ আলম বলেন, গত ১৫ বছরে একটি রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে আদর্শিক বিরোধিতার জায়গা থেকে সুফি ঘরানাদের একটি সংযোগ ঘটেছিল, যেখানে সমঝোতা ছিল যে আওয়ামী লীগ তাদের সুরক্ষা দেবে এবং তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। ধর্মীয় রাজনীতি এই পরিমণ্ডলে আটকে গেছে, যেখানে কওমিরাও ব্যবহৃত হয়েছে।
সংকট মোকাবেলার আহ্বান:
-
বিদেশি প্রভাব: মাহফুজ আলম উল্লেখ করেন, দেশে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোর সংযোগ রয়েছে এবং "কোনো কোনো এমবাসি চায় যে মাজারগুলো ধ্বংস হোক।" এখানে এক ধরনের রাজনৈতিক আদর্শিক জায়গা কাজ করছে।
-
নীতি ও রাজনীতির সমাধান: তিনি বলেন, ধর্মীয় জনগোষ্ঠী লড়াই করবে বা 'মব করবে'—এমন ভয় না পেয়ে, এই সংকটগুলোকে রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে, রাজনৈতিক জায়গা থেকে এবং নীতির জায়গা থেকে দেখতে হবে। না হলে সংকট ঘনীভূত হতে থাকবে।
-
ক্ষোভের জায়গা: উপদেষ্টা বলেন, এক বছরে কিছুই করা হয়নি—এমন একটি ক্ষোভের জায়গা আছে। এই ক্ষোভ থেকে পাল্টা আঘাতের চিন্তা করলে ভালো কিছু হবে না।
-
মামলা ও সংস্কারের আহ্বান: হামলার শিকার মাজারগুলোর পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে মামলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংস্কৃতি (সহিংসতার) যদি টিকে যায়, তবে "আজ সুফিদের ওপর আছে, কাল কওমিদের ওপর হবে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে না।" তিনি জানান, মাজারে হামলার পর অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এখন সমীক্ষা করে মাজারগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ইউ





