
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
তামাকজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী বছরে ৮০ লাখের বেশি এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে পরোক্ষ ধূমপানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই উল্লেখ করে বক্তারা দেশের সকল অফিস প্রাঙ্গণ ১০০ শতাংশ ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য এর কোনো ব্যত্যয় গ্রহণযোগ্য হবে না।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে “অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অফিস প্রাঙ্গণ শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখতে করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই আহ্বান জানান। তামাকবিরোধী নারী জোট ‘তাবিনাজ’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনার মূল বিষয় ও দাবিসমূহ:
১. তামাকের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি:
-
রাসায়নিকের ভয়াবহতা: প্রবন্ধে আতাউর রহমান মাসুদ জানান, তামাকের ধোঁয়ায় প্রায় ৭ হাজার ধরণের রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করা গেছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০টি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
-
রোগ ও মৃত্যু: তামাক হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, নিউমোনিয়া, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন প্রতিরোধযোগ্য রোগের মাধ্যমে ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীদের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে এবং মৃত্যু ঘটায়।
-
পরোক্ষ ধূমপানের শিকার: বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। এছাড়া ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের নিচে) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে।
-
শিশুদের লালায় নিকোটিন: গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২ শতাংশ ছাত্র/ছাত্রীর লালায় নিকোটিন পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে তারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।
-
নারীদের ঝুঁকি: পরোক্ষ ধূমপানে হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ধূমপায়ী ও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার নারীরা জরায়ুর ক্যান্সার, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা (যেমন গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব) এবং অকাল মেনোপজের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
২. পরিবেশগত ক্ষতি ও কোম্পানির চক্রান্ত
-
পরিবেশ দূষণ: বাংলাদেশে প্রতি বছর বিড়ি-সিগারেটের বিষাক্ত বর্জ্য হিসেবে ৪০ হাজার ৪৯০ টন বাট ও প্যাকেট পরিবেশ দূষণের কারণ হয়।
-
বন ধ্বংস: তামাক শুকানোর জন্য গাছ কাটার কারণে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বন ধ্বংস হচ্ছে।
-
রেস্তোরাঁয় চক্রান্ত: তামাক কোম্পানিগুলো রেস্তোরাঁ মালিকদের 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত জায়গা' রাখার জন্য নগদ টাকা (১.২০ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা) এবং বিজ্ঞাপনের উপকরণ দেয়।
-
'নির্ধারিত স্থানের' কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন: গবেষণায় দেখা গেছে, রেস্তোরাঁয় 'নির্ধুমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা' রাখলেও ধোঁয়া সকল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং আগত অতিথি ও কর্মচারীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
৩. প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতি তাবিনাজের দাবি:
তাবিনাজ-এর পক্ষ থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. শতভাগ তামাকমুক্ত ঘোষণা: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সকল প্রাঙ্গণকে শতভাগ ধোঁয়াযুক্ত এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যমুক্ত ঘোষণা করা। ২. 'নির্ধারিত স্থান' বাতিল: 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' অনুমোদন না দেওয়ার অফিস আদেশ জারি করা। ৩. বিক্রি নিষিদ্ধ: অফিস এলাকায় সিগারেটসহ যেকোনো ধরনের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।
৪. কর্তৃপক্ষের আশ্বাস:
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং একে উৎসাহিত করা ঠিক হবে না। তিনি পারিবারিক ভাবেও ধূমপান প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন এবং কাঠামোগতভাবে কাজ করার জন্য তাবিনাজের সাথে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, এটি নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উবিনীগের পরিচালক সীমা দাস সীমু, যিনি দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. বায়েজার রহমান, এআরডি নির্বাহী পরিচালক ও তাবিনাজের সদস্য ইয়াসমিন জাহান সহ অন্যান্যরা।
ইউ