
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি কমিউনিটিকে কাজ করতে হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হওয়া উচিত, মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য আমরা একটা কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি এবং দ্রততম সময়ের মধ্যে কন্যাশিশুদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের কর্মীদেরকে তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে শিশুরা কোনো বিপদে পড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা তাদেরকে সহায়তা করতে পারে।’
বুধবার (০৮ অক্টোবর) জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন । যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
সকাল সাড়ে ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল গেট (দোয়েল চত্বর সংলগ্ন) থেকে র্যালির মাধ্যমে দিবস উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। র্যালির উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। র্যালিটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
\অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম এবং নারীমেত্রীর নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘স্বপ্ন গড়ি, সাহসে লড়ি শিরোনামে' একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি। এরপর দুজন শিশু তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি একদিন হবে বাংলাদেশ হবে শিশুদের জন্য। আমি মনে করি, যখন মেয়েরা, আমাদের শিশুরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখন পুরো রাষ্ট্র মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।’ \
ড. বদিউল আলম মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি বঞ্চনা ও অবহেলা চলে আসছে। এটা যেন আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও নারী ও কন্যাশিশুরা নানাভাবে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়। বাল্যকাল থেকেই এসবের অবসান হওয়া দরকার। আমাদের অনুধাবন করা দরকার, মেয়েরা কোনোভাবেই সমাজের বোঝা নয়। তারাও ছেলেসন্তানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মেয়েরা সুযোগ পেলে শিক্ষিত, যোগ্য ও উপার্জনক্ষম হতে পারে। তারাও বিশ্বজয় করতে পারবে। তাই তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’
মমতাজ আহমেদ এনডিসি বলেন, ‘আমাদের মেয়ে ও ছেলেরা যাতে সমানতালে বেড়ে ওঠতে পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবে যেহেতু মেয়েরা এখনও নানাভাবে পিছিয়ে রয়েছে তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের সবার নজর দেওয়া দরকার। একইসঙ্গে ছেলেশিশুদের উচিত কন্যাশিশুরা যাতে সহিংসতা ও বাল্যবিবাহের শিকার না হয় সেজন্য কাজ করা। এক্ষেত্রে ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব’গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। শিশুদের সুরক্ষায় মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আমরা চাই, আমাদের কন্যারা শুধু লেখাপড়ায় নয়, সংস্কৃতি-সহ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাক।’
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ‘আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এখনো কন্যাশিশুদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দিতে পারেনি। তাই কন্যাশিশুরা যাতে নিজেদের বিকশিত করতে পারে, দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম বলেন, ‘আমাদের সমাজে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে তাতে মেয়েদেরকে অধস্তন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া কৃষি বিপ্লবে তারা প্রধান ভ‚মিকা পালন করেছে। তারা শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। আসলে মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে মূলত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়, যার অবসান হওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠানের শেষভাগে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৫ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘কন্যাশিশু-২০ বই ও পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ইউ