প্রেম
ট্রেন ছেড়ে যেতেই ছুটতে ছুটতে সে এল,
পুরো স্টেশনে ফেরিওয়ালাদের চিতকার, ডাব, চা গরম
ভিখারি, আর মানুষের গন্ধের গিজগিজ পেরিয়ে আমি তখনই এসেছি, অনেক
দূর থেকে তার বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে যখন তাকে কবুল বলতে শুনেছি।
সীমাহীন প্রেমে মোহে একটা সময় শরীর যখন পুড়ে ছাইছাই,,
তখন শুনেছি অন্যকারো প্রেমে আছে সে,
যতবার সেই দৃশ্য চোখের সমানে আসত,
মনে হত,,বিষ খেয়ে মরে যাই। কলেজ পার হওয়ার পরে
অন্তর্মুখী সে আমাকে কাঁপিয়ে ছাড়খার করে বলেছিল,
ভালোবাসি।
মনে হচ্ছিল প্রকৃতির দোলনায় উড়ছি,
ভ্রমর আর বাতাসের গুঞ্জনে ঘুম নষ্ট আমি সারারাত
তার মোবাইলের নাম্বারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
ভীষণ নিয়ম মেনে চলা তাকে ফোন করতে ভয় পেতাম,কথা বলতে গিয়ে
তোতলাতাম,নিজেকে সুন্দর করতে যত সাজাতাম নিজেকে, বলত,
সাজ ছাডাই সুন্দর লাগে তোমাকে।
আর? ভার্সিটির পরে সব,আগে ভালো রেজাল্ট করো।
প্রেমে পড়লে এত বুক পুড়ে কেন?
যেন শব্দ পেয়ে যায়,বলে তুমি
অনেক ইমোশনাল।
অরন্যে উড়তো ঘাসফড়িং আর বাতাসে উড়ত,মরণ,,মেঘের মরণ উডে উড়ে আমার বুক চেপে ধরত।
তার হাত যখন আমার ঠোঁট আর বুকে
মনে হতো,এ আমার শেষদিন হোক।
তুমি এত লতিয়ে পড়ো,,তার এমন কথায়
কষ্ট আর দৃঢ়তাকে ক্রমশ আমি আমার মনের বাক্সবন্দি করতে থাকলাম। এরপর সে স্পর্শে এলেই ছিটকে যেতাম। দূর থেকে যখন দেখতাম,সে আসছে,আমি অন্য কোথাও সরে গিয়ে বহুকষ্টে চোখের জল চেপে ধরতাম।
আগে ছিল আমার,এরপর তার ঘনঘন ফোন করা বেড়ে গেল। বুঝে গেলাম, যে যত পাত্তা কম দেয়,তারপ্রতি আকুলতা
অন্যের বাড়তে থাকে। আসলে প্রেমেরও ভারসাম্য রাখতে
হয়,,এ বুঝতে সময় লেগে গিয়েছিল আমার।
ফোন পেলেই অস্থির হয়ে ধমক দিত,
কোথায় থাকো তুমি?
অন্য কারো প্রেমে পড়েছ?
নাহ!
তো?
আর পারলাম না। এরপর এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আমাকে
পাগলের মতো আঁকড়ে ধরে যখন আমরা স্বর্গের পথে হাঁটছি,যেন হুঁশ এল আমার,যেই তাকে ছিটকে ফেলতে যাব,
উল্টো সে আমাকে ধাক্কা দাঁড়িয়ে বলল,তুমি এইভাবে নিজেকে ছেড়ে দিতে পারো?
বহুবছর তারজন্য একতড়ফা প্রেমে পুডে পুড়ে তাকে পাওয়ার পরে এমন যখন অবস্থা,, মা বলল,এর পরিনাম যদি বিয়ে হয়,জীবনেও টিকবে না। প্রেমে পড়লে নিজেকে সরলভাবে
মেলে ধরতে এখনি যদি ভয় পাও,টিকবে না।ভালোবাসা পারস্পরিক প্রায় সমান হতে হয়।
এরপর চাকরি নিয়ে তাকে কিছু না বলে মা,র ভরসায়
দূরে চলে যাই। মোবাইল নাম্বার হোয়াটসঅ্যাপ সব পালটে।
অদ্ভুত পাহাড়ের সাথে চলত আমার একা
কথাবার্তা আর অবচেতন অপেক্ষা।
কতবার মনে হয়েছে,তার সামনে জড়োসড়ো হয়ে বসে বলি,
আমি এমনই, কিন্তু আমি পাগলের মতো ভালোবাসি।
এরপর মা,র মুখে যখন শুনেছি আমাকে অনেক
খুঁজছে,এক পর্যায়ে কিচ্ছু না জেনে মা র হাত ধরে তার
বিয়ের আয়োজনে যাই।
বিয়ে শেষে যেন আমার দুপা পাহাড়েরর মতো স্তব্ধ হয়ে গেল।
পুড়িয়ে গেল চোখ আমার ফুরিয়ে গেল চোখ,,
মা আমাকে চেপে ধরে টিকিট আমার হাতে টিকিট ধরিয়ে দিয়ে
বলল,আমি চাইছিলাম, দৃশ্যটা তুই দেখ। আমি
বড় একলা রে,তুমি এখানে এসে আরেকটা কাজ খোঁজ।
আমি ছুটতে ছুটতে ট্রেনে এসে উঠি।
তাকে হঠাৎ দেখে প্রথমে ভাষা হারিয়ে
ফের ব্যাগ থেকে আয়না বের করি,
তুমি মনে করো,তোমার দোষ নেই?
ছুটতে ছুটতে বলে সে,
আমি বললাম,যাও,
এই যে ছুটছি,এ কার জন্য?
তোমার ইগো হার্ট হয়েছিল,বলে আমি জানালায় হাত দিই,
হাঁপাতে থাকে সে,কতদিন যোগাযোগ করো নি,পাত্তা দাও নি,
এজন্য তোমাকে শিক্ষা দিতে আমি বিয়ে করেছি।
তুমি বুঝতে পারছ না?
আশপাশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ধীরে ধীরে অনেকদূরে সে চলে যায়।
বহুদিন পরে বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত শান্ত শীতের বাতাস বইতে থাকে।
কানে জাগতিক ঠুসি ঠেলে শুনতে থাকি,
তুমি যাকে ভালোবাসো,চোখের জলের বাষ্পে ভাসো,,
কোন সমস্যা?
একজন তরুণ মাথা বাড়ায়,
বলি,নাথিং।
আমি জানালা বন্ধ করে দিই।
চশমা মুছে বলি,তাহলে জানালা খুলে দিই? বহুদিন পরে অন্য
কারো চোখ দেখি, আপনি পাহাড় থেকে
এই অব্দি আমার পিছু নিয়েছেন?গান খুলে বলি,
সে চারপাশের মানুষজন দেখে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে,
বলে, আমি নিয়মিত এই ট্রেনে যাতায়াত করি।
ওহ!
তো?জানালা?
খুলে দিন।
//জ//