
ফাইল ছবি
বিশ্ব ফুসফুস ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে ১ জুলাই নিউ ইয়র্কের একজন শীর্ষস্থানীয় ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, হাতের নখে সামান্য পরিবর্তনও হতে পারে মারাত্মক ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।
ডা. দাভূদ জোহারি, নিউ ইয়র্ক সিটি হেলথ অ্যান্ড হসপিটালস/কিংস কাউন্টির পালমোনারি ও ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, নিউ ইয়র্ক পোস্ট-কে বলেন, প্রায় ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে নখ মোটা ও নিচের দিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া (নেইল ক্লাবিং) দেখা যায়। এটি সাধারণত রোগের অগ্রসর পর্যায়ে প্রকাশ পায়, যখন চিকিৎসার জন্য খুব কম সময় হাতে থাকে।
নখের যেসব লক্ষণ উদ্বেগজনক হতে পারে:
-
আঙুলের মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় চওড়া ও গোল হয়ে যায়।
-
নখ নিচের দিকে বাঁকতে থাকে, দেখতে অনেকটা উল্টো চামচের মতো।
-
নখের নিচের অংশ (নেইল বেড) নরম ও স্পঞ্জের মতো অনুভূত হয়।
-
আঙুলের মাথা লালচে বা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ লাগে।
ডা. জোহারি জানান, ঠিক কী কারণে এই পরিবর্তন ঘটে তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ফুসফুসে টিউমার থেকে নিঃসৃত কিছু হরমোন-জাতীয় উপাদান আঙুলের রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে দেয়, যার ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় এবং নখের নিচে তরল জমে যায়।
এই লক্ষণগুলো শুধু ফুসফুস ক্যান্সারের নয়...
নেইল ক্লাবিং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে, যেমন:
-
দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস সংক্রমণ
-
জন্মগত হৃদরোগ
-
হজমতন্ত্রের রোগ
-
অটোইমিউন ডিজঅর্ডার
চিকিৎসকের পরামর্শ:
ডা. জোহারি বলেন, “যদি কারও নখের রঙ, আকৃতি বা পুরুত্বে স্থায়ী পরিবর্তন হয় এবং তা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে দেখানো উচিত, এমনকি অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলেও।”
ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণ:
-
দীর্ঘস্থায়ী কাশি
-
কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন
-
হঠাৎ ওজন হ্রাস বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
-
রাতে বেড়ে যাওয়া কাঁধের ব্যথা
-
চোখের সমস্যায় দেখা দেওয়া বা চোখের পাতার ঝুলে পড়া
রোগ নির্ণয় সাধারণত রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে শুরু হয়। তবে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বায়োপসি করাতে হয়, যা হলো টিস্যু পরীক্ষা।
নখে আরও যেসব পরিবর্তন অবহেলা করা উচিত নয়:
-
গাঢ় রঙের দাগ বা কালো রেখা
-
বারবার রক্ত জমাট বা চোটের দাগ
-
নখ আলগা হয়ে যাওয়া বা রক্তপাত হওয়া
ডা. জোহারি বলেন, “নখের অনেক পরিবর্তন নিরীহ হতে পারে এবং বয়স, আঘাত কিংবা নেইলপলিশ ব্যবহারের মতো সাধারণ কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি এসব পরিবর্তন দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং চোখে পড়ার মতো হয়, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো উচিত।”
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির বিষয়:
-
ধূমপান, যা ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ
-
রেডন গ্যাস (এক ধরনের স্বাদহীন, গন্ধহীন, বর্ণহীন প্রাকৃতিক গ্যাস), যা যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ
-
বয়স—দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর বয়স ৬৫ বছরের বেশি
-
পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ক্যান্সারের ইতিহাস
-
পরিবেশগত বা পেশাগত ঝুঁকি, যেমন আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টস, ইউরেনিয়াম, ক্যাডমিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের সংস্পর্শ
-
বায়ুদূষণ, পূর্বের রেডিয়েশন থেরাপি বা অতীতে যক্ষ্মা হওয়া
পরামর্শ: আপনার নখে যদি হঠাৎ বা স্থায়ী কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, অথবা ফুসফুস সংক্রান্ত অন্যান্য উপসর্গ থাকে — অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ইয়াহু নিউজ, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার, এএফপি
ইউ