
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা অংশীদার, বেসরকারি খাত এবং ইউএনএফপিএ-এর যৌথ সমন্বয়ে প্রথম পর্যায়ে ছয়টি কারখানার ৭ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি নারীকে পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে এই টুলটি ব্যবহৃত হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সাভারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্যভাবে বিতরণ ও রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং নিশ্চিত করার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারদের সহযোগিতায় ডিজিটাল মনিটরিং টুল (ডিএমটি) চালু করা হয়।
এই উদ্যোগটি স্মার্ট, স্কেলেবল এবং জবাবদিহিতামূলক পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা প্রদান নিশ্চিত করবে, যার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ছয়টি পোশাক কারখানার প্রায় ২২ হাজার নারী শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন।
ডিজিটাল মনিটরিং টুল হল একটি দ্বৈত-প্ল্যাটফর্ম সিস্টেম যা কারখানার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহ, মজুত, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সঠিক বণ্টন ট্র্যাকিং এবং কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করে। টোগুমোগু প্রাইভেট লিমিটেড এবং জেপিইগোর প্রযুক্তিগত সহায়তায় তৈরি এই টুলটি কাগজ নির্ভর সিস্টেমকে প্রতিস্থাপিত করবে যার ফলে সাপ্লাই চেইনে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং এর ফলে নারীদের পছন্দমতো স্বাস্থ্য সেবা পেতে সাহায্য হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং। তিনি কার্যকর ও ফলপ্রসূ সমাধানের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে নারীদের কাছে প্রজনন স্বাস্থ্য পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
"এই টুলটি যে সকল নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তাদেরকে স্বাস্থ্য সেবার আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে। তাই, এটি কেবলমাত্র একটা প্রযুক্তি নয়। এর ফলে কর্মীরা কেবল রোগী হিসেবেই নয়, বরং বাংলাদেশের উন্নয়নেভূমিকা পালনকারী পেশাদার হিসেবেও মর্যাদা পাবেন," বলেন ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লক্ষেরও বেশি কর্মী নিযুক্ত রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী। তবুও, নির্ভরযোগ্য পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে অনেককেই এখনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ছয়টি তৈরি পোশাক কারখানায় ইউএনএফপিএ -এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরিবার পরিকল্পনায় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে: যেমন- ২০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ২৬ শতাংশ অনুপস্থিতি হ্রাস এবং কারখানা প্রতি বার্ষিক ১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হয়।
গত নয় বছরে, মাত্র ৮ লাখ ৪ হাজার জন নারী পোশাক কর্মী বিদ্যমান চ্যানেলগুলির মাধ্যমে গর্ভনিরোধক গ্রহণ করেছেন - যা বিশাল কর্মী বহরের মাত্র একটি অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই টুলের মাধ্যমে, ডিজিএফপি পরিষেবা সরবরাহে স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করার সাথে সাথে সহজ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেও কাজ করবে।
উদ্যোগটি ইউএনএফপিএ এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর-এর একটি বৃহত্তর স্বাস্থ্য কৌশলের অংশ যার লক্ষ্য হল আধুনিক গর্ভনিরোধকগুলির অপূর্ণ চাহিদা (যা বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ) মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে জোরদার করা এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার তাত্ক্ষণিক সেবাসহ সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করা।
“এই মাইলফলক কেবল একটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উদ্বোধন নয়—এটি আমাদের জাতির অগ্রগতির মূলভিত্তি, জনগণের উপর সরকারের অবিচল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির দৃঢ় প্রকাশ,” বলেছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফি আহমদ, এনডিসি, তিনি এই টুলটির যুগান্তকারী সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
“পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড-এ আমাদের কর্মীরা আমাদের কাজের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা তাদের কল্যাণ নিয়ে আন্তরিকভাবে চিন্তা করি, আর সে কারণেই আমরা তাদের স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করি। একটি সুস্থ কর্মীবাহিনী মানেই একটি দৃঢ় ও উদ্যমী দল—যা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে সহায়তা করে,” বলেন পাকিজা নিট কোম্পানির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল ইসলাম খান।
আজকের উদ্বোধনের পর, ডিজিটাল মনিটরিং টুলটি চালু রাখা হবে এবং ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে তা নিয়মিত পরিমার্জিত করার কাজটিও অব্যাহত থাকবে। আগামী ছয়মাস পাইলট ফ্যাক্টরি গুলোতে পুরোদমে বাস্তবায়ন করা হবে, বৃহৎ পরিসরে ডেটা ইন্টিগ্রেশন, পারফরম্যান্স রিপোর্টিং এবং জাতীয় পরিসরে সম্প্রসারণের জন্য সকলের সহায়তার উপর জোর দেওয়া হবে।w
ইউ