
ছবি সংগৃহীত
রাজনীতিতে নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এক নতুন জরিপে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৮.৯০ শতাংশ নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দেশে এখনো হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মতো শারীরিক অবস্থায় চলাচল করার জন্য পর্যাপ্ত প্রবেশগম্যতা (Accessibility) সৃষ্টি হয়নি বলে জরিপে উঠে এসেছে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বনানীর হোটেল প্লাটিনাম গ্র্যান্ডে উইম্যান উইথ ডিজএবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডাব্লিউডিডিএফ) আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধী নারী ও কণ্যা মিশুদের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও রাজনীতিতে প্রবেশগম্যতা’ শীর্ষক কর্মশালায় এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপের মূল তথ্যসমূহ (২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৭টি বিভাগে পরিচালিত):
প্রতিবন্ধকতার ধরন | অংশগ্রহণে বাধা হিসেবে উল্লেখকারীর শতকরা হার |
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা | ৭৮.৯০% |
বৈষম্য | ৬৫.৬% |
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা | ৫৯.১৫% |
তথ্যের অভাব | ৫৩.৮০% |
সাংস্কৃতিক রীতিনীতি | ৩৭.৩৪% |
Export to Sheets
-
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: ২ হাজার ১৩২ জন উত্তরদাতার মধ্যে ১ হাজার ৬৮২ জন জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সভা, ভোটকেন্দ্র বা সরকারি দপ্তরে প্রবেশের সুযোগ সীমিত থাকার কারণে তারা রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারছেন না। ৬৭ শতাংশের বেশি নারী গত এক বছরে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেননি।
-
'দ্বৈত প্রান্তিকতা': জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী নারীরা 'দ্বৈত প্রান্তিকতা'র শিকার। নারী এবং প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তারা দ্বিগুণ বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছেন।
-
সহিংসতার শিকার: প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী (শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন) কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে, ৬৭ শতাংশ নারী জানেনই না যে দেশে এই সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা দেয় এমন কোনো সংস্থা আছে।
-
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান: প্রতিবন্ধী নারীদের ৭৫ শতাংশ শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর বাধার সম্মুখীন এবং ৪৮.৫৫ শতাংশ কখনো কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। ৫২.৬ শতাংশ নারী বেকার এবং মাত্র ৪.৮৩ শতাংশ কোনোভাবে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে যুক্ত।
কর্মশালায় আলোচনা ও সুপারিশ: কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। তিনি বলেন, জরিপে বোঝা যায় পরিবার, সমাজ ও জনবহুল স্থানে প্রতিবন্ধী নারীরা কতটা ঝুঁকিতে আছে। তিনি প্রতিবন্ধী নারীর অবস্থা উন্নয়নে একটি সমন্বিত জাতীয় গবেষণার প্রয়োজনীয়তা এবং যে পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে, তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করার কথা বলেন। তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বিষয়টিকে কার্যত রূপ দেওয়ার ওপর জোর দেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডাব্লিউডিডিএফ-এর চেয়ারপারসন শিরীন আখতার। বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী শিফা হাফিজা, বি-স্ক্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, ডিজ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন (ডিসিএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান, ন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি স্পেশালিস্ট ভাস্কর ভট্টাচার্যসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শিফা হাফিজা মন্তব্য করেন, গবেষণা ডোনার-ভিত্তিক হওয়ায় অনেক সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে যায়। তিনি গবেষণা শেষ না করে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠান থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করা, প্রবেশগম্য অবকাঠামো নিশ্চিত করা, প্রতিবন্ধী নারীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার সুযোগ বাড়ানোসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
ইউ