
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
"অপরাধীরা শুধু নারীর মর্যাদাকেই ভেঙে দেয়নি, তারা ন্যায়বিচারকামী মানুষের কণ্ঠকেও দমিয়ে দিতে চাইছে।"—খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং পরবর্তীতে প্রতিবাদকারী বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণের ওপর এ ধরনের আচরণ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বক্তারা খাগড়াছড়ির ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মূল বক্তব্য ও দাবি
১. বিচারের দাবিতে আন্দোলনে হামলা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী:
-
সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থী: বক্তারা দৃঢ়তার সাথে বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ ধরনের সহিংসতা ও প্রতিবাদ দমানোর প্রচেষ্টা সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
-
ড. ফওজিয়া মোসলেম (সভাপতির বক্তব্য): বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম খাগড়াছড়ির ঘটনায় 'গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত' বলে জানান। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা এই দেশে আগে কখনো ঘটেনি, যা ন্যায়বিচারের পথে ভয়াবহ বাধা।
-
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের বিচারের জন্য জনগণকে কেন রাস্তায় নামতে হয় এবং ধর্ষণের মামলায় কেন নির্যাতনের শিকার নারীকে আলামত দিতে হয়।
২. আদিবাসী নারীর নিরাপত্তাহীনতা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির আশঙ্কা:
-
চরম নিরাপত্তাহীনতা: অন্যান্য বক্তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে পার্বত্য অঞ্চলের জাতিসত্তাভিত্তিক নারী ও কিশোরীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
-
সাম্প্রদায়িক উস্কানি: ডা. ফওজিয়া মোসলেম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ি আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়ে একধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরি করা হচ্ছে, যার দায়ভার কে নেবে?
৩. সত্য উদঘাটন ও বিচার নিশ্চিতের দাবি:
-
সত্য আড়াল করার চেষ্টা: সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, অপরাধীরা বরাবরের মতো এখনও পার পেয়ে যাচ্ছে—এটি হতাশাজনক। তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠলে তাদের ওপরই হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটানো হয়।
-
প্রকৃত সত্য প্রকাশের আহ্বান: তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কোথায় ছিল? তিনি গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং তা সকলের সামনে উপস্থাপন করার জোর দাবি জানান।
-
প্রতিবাদকারীদের বিচার: মালেকা বানু ঘটনার সাথে জড়িতদের পাশাপাশি প্রতিবাদকারীদের উপর হামলাকারীদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান এবং ন্যায়বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি আর চলতে দেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা দেন।
৪. নারী জাতি ও মানবতার ওপর আঘাত:
-
সমগ্র নারীজাতির ওপর আঘাত: বক্তারা আরও বলেন, খাগড়াছড়ির ঘটনা কেবল এক মারমা কিশোরীর ওপর নয়, সমগ্র নারীজাতি ও মানবতার ওপর আঘাত।
-
অপকৌশল নিন্দনীয়: অন্য বক্তারা হামলা ও হত্যাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে কিশোরী নির্যাতনের বিচার এড়িয়ে যাওয়ার অপকৌশল নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।
মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন
মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা এবং ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন নারী প্রগতি সংঘের সেলিনা পারভিন। মানববন্ধনে সংহতি জানায় গণসাক্ষরতা অভিযান, বিএনপিএস, ব্লাস্ট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটি ও আন্দোলন উপ-পরিষদ সদস্য ড. বহ্নি শিখা দাস পুরকায়স্থ।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম শেষে বলেন, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ থেমে থাকবে না।
ইউ