
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
কোনো শিশু সহিংসতার শিকার হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের 'চাইল্ড হেল্প লাইন ১০৯৮'-এ ফোন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই সেবা ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইদুর রহমান খান।
৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বিকালে লোকাল এডুকেশন এন্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (লিডো) আয়োজনে ওয়াশপুরের 'লিডো স্পিচ হোমে' "আর্ট ফটোগ্রাফি এন্ড কালচারাল ইভিনিং ভালনারেবল চিলড্রেন এন্ড সারভাইভরস" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই তথ্য জানান।
সমন্বিত উদ্যোগে শিশু সুরক্ষার ওপর জোর
মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান তাঁর বক্তব্যে শিশুদের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন:
-
সরকারি কর্মসূচির মনিটরিং: তিনি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে এবং এসব কর্মসূচির মনিটরিংয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
-
বেসরকারি উদ্যোগে সহযোগিতা: তিনি জানান, বেসরকারি পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নে যে কাজগুলো হচ্ছে, তাতে উৎসাহ দেওয়া এবং শিশুদের পুষ্টির নিশ্চয়তা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
-
অর্থায়ন কাঠামো: তিনি যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে অর্থায়নের কাঠামো ঘোষণা করেন:
-
সিটি করপোরেশন এলাকায়: সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প তৈরি করলে সরকার ৬০ শতাংশ এবং বেসরকারি সংস্থা ৪০ শতাংশ সহযোগিতা করবে।
-
সিটি করপোরেশনের বাইরে: এক্ষেত্রে সরকার ৮০ শতাংশ এবং বেসরকারি সংস্থা ২০ শতাংশ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করবে।
-
-
বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করার আহ্বান: তিনি সতর্ক করে বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে কোনো প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখবে না, তাই শিশু সুরক্ষা ইউনিটের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
'পথশিশু কেন?'—প্রশ্ন তুললেন মফিদুল হক
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক শিশু অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন:
-
দাবি করার অধিকার: লিডোর সদস্য মুন্নির প্রশ্ন—'স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর শিশুরা পথশিশু হয়ে কেন রাস্তায় ঘুরবে?'—উল্লেখ করে মফিদুল হক বলেন, এই প্রশ্নের জবাব আমাদের দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে এই সত্যকে ভোলা যায় না।
-
সমাজ ও কর্মসূচির সংযোগ: তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় শিশুদের জন্য অনেক কর্মসূচি থাকলেও এই কর্মসূচির সাথে সমাজের যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি।
-
শিশু পল্লীর দৃষ্টান্ত: মফিদুল হক শিশু পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা আরমান মেনার কথা স্মরণ করেন, যিনি একাত্তরের পর যুদ্ধ শিশু ও অনাথ শিশুদের জন্য শিশু পল্লী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য
আলোচনায় অন্যান্য বক্তারাও শিশু অধিকার এবং তাদের মানসিক সুরক্ষার বিষয়ে জোর দেন:
-
রেজাউল করিম খোকন (মুক্তিযোদ্ধা ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট): তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে রাতে যে শিশুরা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে, টুথপেস্ট ব্যবহার করায় তারাও সরকারকে কর দেয়। কাজেই তাদের ভবিষ্যতের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।
-
নুসরাত জাহান (উপ পরিচালক, এসওএস চিল্ড্রেন্স ভিলেজ): তিনি শিশুদের কথা শোনা, তাদের মতামত প্রকাশ এবং শ্রোতাদের দ্বারা শিশুদের স্বপ্ন গুরুত্ব দিয়ে শোনার ওপর গুরুত্ব দেন।
-
মো. ফরহাদ হোসেন (নির্বাহী পরিচালক, লিডো): সমাপনী বক্তব্যে তিনি জানান, এসব শিশুদের ভালো রাখা তাঁদের লক্ষ্য এবং সরকার তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
-
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী প্রধান মাহাবুল হক এবং ড্যাফোডিল চাইল্ড হোমের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। আলোচনা শেষে শিশুরা সংগীত পরিবেশন করে।
ইউ