
ছবি সংগৃহীত
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেছেন যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব। তিনি সতর্ক করে দেন যে মিয়ানমার সাহসী পদক্ষেপ না নিলে এই দীর্ঘস্থায়ী মানবিক দুর্দশার অবসান হবে না।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে 'মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি' বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সংকটের মূল কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি
ইউএনএইচসিআর প্রধান তার বক্তব্যে সংকটের মূল কারণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন:
-
সংকটের উৎস মিয়ানমার: গ্রান্ডি বলেন, "এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। আর সমাধানও সেখানেই।" তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম সহিংসতায় প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং অনেকে রাখাইনেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে যায়।
-
রাখাইনে অচলাবস্থা: তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা দখল করলেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তাদের জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার ভয়, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার, চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগ, এবং বর্ণবাদ ও আতঙ্কের শিকার হওয়া।
বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মানবিক সহায়তার ঘাটতি
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের উদারতার গভীর প্রশংসা করেন:
-
বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত: তিনি জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০২৪ সালের নতুন সংঘাতের পরও আরও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছে। গ্রান্ডি বলেন, বাংলাদেশ "উদাসীন্ততা ও দায়িত্বহীন মনোভাব যখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে, সে সময়েও সহানুভূতি দেখানো সম্ভব" তা প্রমাণ করেছে।
-
তহবিল ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ: তিনি বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রশংসা করলেও বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা তহবিলের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, যথেষ্ট তহবিল না এলে জরুরি সহায়তা কাটছাঁট করতে হতে পারে, যার ফলে শিশুদের পুষ্টিহীনতা বাড়বে এবং আরও রোহিঙ্গা বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান
গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা দিয়ে এই সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়। তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান:
-
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: প্রভাবশালী দেশগুলোকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে, যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান গৃহীত হয়।
-
প্রত্যাবাসন ও ন্যায়বিচার: তিনি রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো মেনে চলার তাগিদ দেন, যা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে দিকনির্দেশনা হওয়া উচিত। তবে তিনি আবারও বলেন, "সাহসী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।"
-
উদাসীনতা পরিহার: ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, "আমরা উদাসীনতার পথে চলতে পারি না। একটি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস হতে দিয়ে সমাধানের আশা করা যায় না।"
বক্তব্যের শেষে তিনি মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত, বাস্তব ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করার ওপর জোর দেন।
ইউ