
সংগৃহীত ছবি
নির্যাতনের শিকার নারীকেই পুনরায় নিগৃহীত করা হয়, সঠিকভাবে সংবাদ প্রচার না করে, নারীর প্রতি সহিংসতার সঠিক তথ্য সকল পত্রিকায় আসে না। আসলেও অনেক সময় বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে। গণমাধ্যম খবর প্রকাশে সংবেদনশীলতার জায়গাটি ও খুবই ভয়াবহ, এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকে কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; খবর প্রকাশে সংবেদনশীল হতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার তথ্যের বিকৃত উপস্থাপন বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার ( ০৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে নারীর প্রতি সহিংসতা: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা বিষয়ে মত বিনিময় সভায় গণমাধ্যম কর্মীরা এ মন্তব্য করেন।
মত-বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা-বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদ সদস্য এবং দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চলনা করেন সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিন।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, বর্তমানে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে প্রকাশ্যে, সহিংসতার চিত্র ও বদলেছে। নারীর প্রতি সমাজের মধ্যে থাকা বিদ্বেষকে বর্তমানে নানাভাবে উস্কে দেয়া হচ্ছে। নারীর মানবাধিকার রক্ষায় আইন থাকলেও আমরা জানি বাস্তবে তার প্রয়োগ কতটুকু। এই পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে নারী আন্দোলন আরো সংগঠিত করতে, আরো অগ্রসর করতে করণীয় নির্ধারণে নারী সাংবাদিকদের মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে আজকের সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ফলে প্রতিনিয়ত সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আমরা দেখতে পাই। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণমাধ্যম নারী আন্দোলনের অন্যতম সহযোগী। তিনি এসময় সহিংসতার ঘটনার প্রকৃত তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য উপস্থিত নারী সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রবন্ধ উপস্থাপনে দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা বলেন. উন্নয়নে নারীর অবদান থাকলেও ক্রমাগত সহিংসতা বৃদ্ধি নারীর অর্জনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে দেখা যায় গত ছয়মাসে প্রায় ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যা সহিংসতার শিকার হন, এর মধ্যে মার্চ মাসে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটেছে তবে পরবর্তীতে সহিংসতার ঘটনা কমে গেলেও তা নারীর জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে না।
আফরুজা আরমান বলেন , গত এক বছরে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রতিটি সহিংসতার ঘটনায় কন্যাদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কন্যাদের প্রতি সহিংসতার হার বেশী, যাদের বয়স ২-১৮ বছরের মধ্যে।
আলোচনা শেষে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নারী সাংবাদিকদের মধ্যে আজকের পত্রিকার সেলিনা আক্তার, সমকাল পত্রিকার দ্রোহী তারা, সংবাদের নাসরিন গীতি, ফ্রিল্যান্সার রাফিয়া চৌধুরী, গণমাধ্যমকর্মী নাদিরা কিরণ ও শাহনাজ মুন্নী, ভোরের কাগজের সেবিকা দেবনাথ, দেশ রুপান্তরের উম্মুল ওয়ারা সুইটি, উইমেন আই টোয়েন্টি ফোর. কমের রীতা ভৌমিক, ইন্টার ন্যাশনাল নিউজ এজন্সি দ্য প্রেসেঞ্জারের জাহিদা পারভেজ, খবরের কাগজের শাহনাজ পারভীন এলিস এবং ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর জান্নাতুল রুহি।
সভাপতির বক্তব্যে ডা ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী আন্দোলন ও গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। জেন্ডার বৈষম্যকে প্রতিহত করা না গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবেনা। সমাজ পরিবর্তন করতে গেলে প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামাগুলোকে সংস্কার করতে হবে। নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বিশ^ব্যাপী পরিবর্তন এর ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে জানতে হবে, গণমাধ্যম খবর প্রকাশে আরো সংবেদনশীল হতে হবে, সর্বোপরি আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
উক্ত মত বিনিময় সভায় প্রিন্ট ও ইলেবট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রীবৃন্দ এবং কর্মকর্তারা।
//এল//