
ছবি সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২৫ উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স দেশের প্রতিটি কন্যাশিশুর শক্তি, সাহস ও নেতৃত্বের প্রতি গভীর সম্মান জানিয়েছেন। 'আমি কন্যাশিশু, আমি পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিই: সংকটে সম্মুখভাগে থাকা কন্যাশিশু'—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তিনি শিশুবিবাহ, সহিংসতা, শিক্ষার অভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মতো চ্যালেঞ্জগুলো দূর করে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সুস্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনের মূল অংশ (পয়েন্ট আকারে):
-
কন্যাশিশুর শক্তি ও নেতৃত্বকে সম্মান: ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স শহরের শ্রেণিকক্ষ থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিকূলতার মুখেও উঠে আসা, কথা বলা ও পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়া কন্যাশিশুদের প্রতিদিনের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাদের ভুক্তভোগী নয়, বরং স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
-
বাংলাদেশের বাস্তবতা: তিনি উদ্বেগের সঙ্গে বলেন যে বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হওয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে না পারা এবং ঘরে সহিংসতার শিকার হওয়া কন্যাশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি।
-
বহুমুখী সংকট: ক্ষতিকর সামাজিক রীতি-নীতি, অগ্রহণযোগ্য মাত্রার সহিংসতা, দারিদ্র্য ও জলবায়ুজনিত অভিঘাতের মতো বহুমুখী সংকট কন্যাশিশুদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি তৈরি করছে, যা উত্তরণে তাদের কণ্ঠস্বর, চিন্তাভাবনা ও নেতৃত্ব অপরিহার্য।
-
দারিদ্র্য ও বৈষম্য: বিশ্বজুড়ে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কন্যাশিশুদের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ থেকে ১৭ শতাংশ, যা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সীমিত করছে।
-
গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির সম্মুখীন: জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যায়ে কন্যাশিশুরা শিশুবিবাহ, অকাল গর্ভধারণ, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত থাকার মতো নানাবিধ ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, যা তাদের শৈশব ও আশা কেড়ে নেয় এবং জীবননাশের ঝুঁকিও তৈরি করে।
-
মানসিক স্বাস্থ্য নীরব সংকট: সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ১২ শতাংশ এবং অবিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ৯ শতাংশের মধ্যে মাঝারি মাত্রার বিষণ্নতার লক্ষণ রয়েছে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবার জরুরি প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়।
-
আশার আলো ও পরিবর্তনের নেতা: এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষার্থী উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং সমান সুযোগের জন্য সোচ্চার হওয়া অসংখ্য অনুপ্রেরণাদায়ী কন্যাশিশুর গল্প বাংলাদেশে প্রতিদিন দেখা যায়। তারা নিজেরাই ‘পরিবর্তন’ বলে ইউনিসেফ প্রতিনিধি উল্লেখ করেন।
-
ইউনিসেফের সুস্পষ্ট আহ্বান:
-
কিশোরীদের কণ্ঠস্বরকে আরও উচ্চকিত করা, তাদের মতামত প্রকাশ করতে দেওয়া এবং তাদের অগ্রাধিকারগুলোকে লক্ষ্যভিত্তিক ও বাস্তব পদক্ষেপে রূপ দেওয়া।
-
সরকার, কমিউনিটি ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সহিংসতামুক্ত নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া এবং সুরক্ষামূলক আইনগুলো বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে।
-
কন্যাশিশুদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোতে সম্পদ (রিসোর্স) সরবরাহ এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে তাদের দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথের বাধা দূর করা জরুরি।
-
-
সংহতি ও অঙ্গীকার: রানা ফ্লাওয়ার্স তার বিবৃতিতে বলেছেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের কিশোরীদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবে। এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের সপ্তাহে ইউনিসেফ তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে এবং তাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্তকারী প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার অঙ্গীকার করছে।
ইউ