

উইমেনআই২৪ ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আজকে স্বাধীনতার চেতনা সম্পূর্ণ ভুলন্ঠিত, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে, এই রাষ্ট্রকে একটা দলীয়করণের রাষ্ট্র, একটা অকার্যকর রাষ্ট্র, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৪তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফেডারেশন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের পত্রিকা খুললে দেখবেন যে, কাটুনিস্ট কিশোর জেল থেকে বেরিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেই বিবৃতিতে বুঝা যায় যে, ভয়ংকর একটা শক্তি পেছনে থেকে। এই সরকারের আড়ালে থেকে, সরকার স্ক্রিন তৈরি করেছে, সেই স্ক্রিনে থেকে যারাই এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারাই রাষ্ট্র প্রধানের বিরোধিতা করছে, যারাই সরকার প্রধানের বিরোধিতা করছে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য অমানবিক নির্যাতন করছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে, মুশতাক আহমেদ শুধু লেখার অপরাধে আর কিশোরকে শুধু কার্টুন আঁকার অপরাধে নির্মম অত্যাচার করে ছয়মাস আটক করে রাখা হয়েছে। এরা তো দুই‘জন শুধু ছয় মাস তাদের কথা বলা যায়..। গতকালই একজন মহিলা এসেছিলেন আমার কাছে, তিনি রিটায়ার্ড মেজর মোরসালীনের স্ত্রী।’
‘এক বছর ধরে এই মোরসালীন আটক আছে জেলের মধ্যে। তার কোনো খবর বাইরে দিতে চায় না। কারণ একটাই তিনি (মোরসালীন) লিখতেন, তার লেখার কারণে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। আজকে পত্রিকাতে আছে যে, কত মানুষকে, শিশুকে, সাত বছরের শিশু, কত বয়োঃজ্যেষ্ঠদের তুলে নিয়ে গেছে, জেলে নিয়ে গেছে শুধু সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার চেতনা সম্পূর্ণ ভুলন্ঠিত, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে, এই রাষ্ট্রকে একটা দলীয়করণের রাষ্ট্র, একটা অকার্য্কর রাষ্ট্র, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে এরা একেবারে ঘাঘারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে, সোল অব বাংলাদেশ, গণতন্ত্র যেটা আমাদের আত্ম সেই আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে।এরা শুধু নিজেদের ক্ষমতা, দাম্ভিকতা, আত্মভরিতা আর দুর্নীতির বৃত্ত তৈরি করার জন্য তারা গোটা জাতিকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের এখন প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হয়-এজন্য কী আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। যেন আমার সন্তান সে একটা সুস্থ পরিবেশে মানুষ হতে পারবে না, আমরা ভাই সে একটা সত্য কথা উচ্চারণ করতে পারবে না, আমার বোন সে নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না, আমার মা সে তার সন্তানকে একটু ভালোভাবে দেখতে পর্যন্ত পারবে না, আমাদের যে নতুন শিশু আসছে সেই শিশু কোন জগতে বাস করবে, কোন জনপদে বাস করবে যেখানে শুধু হত্যা-হিংসা-ভয়াবহতা।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশে বারে বারে এধরনের স্বৈরাচার এসেছে, এদেশে বার বার যেমন মগ-দুস্যরা, বর্গীরা এসেছে, পশ্চিম থেকে বৃটিশরা এসেছে দখল করে নিয়েছে, তেমনি এদেশেরই তরুন দামালেরা, যুবকরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে অস্ত্র নিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে সেই অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের তরুণেরা, দামাল ছেলেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করেছে। সেই কথা মনে আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে যদি আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চাই, আমরা যদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি শুধু গণতন্ত্রের জন্য কারাবন্দি হয়ে আছেন তাকে বের করে আনতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমান যাকে সামনে রেখে আমরা পথ এগুতে চাচ্ছি তাকে যদি দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই, আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করাতে চাই, প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তাদের যদি জেল থেকে মুক্ত করতে চাই অবশ্যই তরুণদেরকে, যুবকদেরকে সামনে আসতে হবে। সব সময় তরুণরা সব কিছু পাল্টিয়ে দিয়েছে, পরিবর্তন এনেছে।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ৭ মার্চ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়।