
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর)-এর ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক। তিনি বলেছেন, কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সিএসআর কার্যক্রম ও বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ঢাকার কোরিয়ান দূতাবাস আয়োজিত 'কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম ও বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ' শীর্ষক এক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
কোরিয়ান কোম্পানি ও বাংলাদেশের সম্পর্ক: রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন:
-
১৯৭৯ সালে দেশ গার্মেন্ট এবং ডেইউ কর্পোরেশনের প্রাথমিক সহযোগিতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের বীজ বপন করেছিল, যা এখন দেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি।
-
চট্টগ্রামের কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করে এবং ৭০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করে অংশীদারিত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে।
-
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই করতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোরিয়া গুরুত্ব দিয়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৪৪টি কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশের ২৫৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে, যার মোট মূল্য ৮.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত)।
সিএসআর ও দায়িত্বশীল বিনিয়োগ: রাষ্ট্রদূত সিএসআরের মাধ্যমে গঠনমূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে সহযোগিতামূলক সিএসআর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোরিয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সিএসআর সেন্টারের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান বলেন, দায়িত্বশীল কর্পোরেট সম্পৃক্ততা কীভাবে দুই দেশের মধ্যে আস্থা, সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করে।
সামাজিক উন্নয়নে কোরিয়ান অবদান:
-
এলজি ইলেকট্রনিক্স, স্যামসাং, উরি ব্যাংক, দোওহা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, ইয়ংওয়ান-এর মতো কোরিয়ান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা, পরিবেশগত টেকসই, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
-
বাংলাদেশে কর্মরত কোরিয়ান এনজিও, যেমন অক্সফ্যাম কোরিয়া, গুড নেইভারস, হেবিটাট কোরিয়া, সেভ দা চিলড্রেন কোরিয়া, এডরা কোরিয়া, গ্লোবাল কেয়ার ইত্যাদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ক্ষমতায়ন এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ: রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক মনে করেন, পাদুকা, আইসিটি পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হালকা শিল্পজাত পণ্য এবং ওষুধের মতো পণ্য কোরিয়ায় আরও বেশি রপ্তানি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, একটি দ্বিপাক্ষিক সিইপিএ (ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি) কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্যের জন্য, উৎসাহিত করতে পারে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই) এর সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান। কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর জিহুন কিমের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সেমিনারটি শেষ হয়।
ইউ