
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজে সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে জাতিবৈচিত্র্য দিবস বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সব ধরনের বৈষম্যের শেকড় উৎপাটন করে সুষম ভবিষ্যত নির্মাণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজন তাৎপর্যপূর্ণ। পাহাড় ও সমতলের সকল জাতিগোষ্ঠী তাদের স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য বজায় রেখে দেশ গঠনে স্ব স্ব ভূমিকা পালন করলেই আমরা বিশ্বের বুকে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারব।
২৭ জুলাই (রবিবার) বিকাল ৫টায় বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জাতিবৈচিত্র্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা একথা বলেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মোঃ সেলিম রেজা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অলিক মৃ, ক্য চিন ঠে ডলি রাখাইন এবং চ নু মং। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও পুনর্জাগরণ : জাতি বৈচিত্র্যের অন্তভুর্ক্তিমূলক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সম্ভাবনা ও সংকট শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে কে. এস. মং। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার চুয়ান্ন বছর বয়সে এসে দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর প্রতি তার অঙ্গীকার পুরোপুরি পূরণ করতে পারে নি। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আরও বেশি অপূর্ণতার মুখোমুখি হয়েছে। এ অবস্থার অবসানকল্পে রাষ্ট্রকে তার আওতা বাড়াতে হবে, অধিকতর মানবিক হতে হবে
বৈষম্যমুক্ত করতে এদেশের জাতিবৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদের স্বপ্ন সফল হবে।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, জাতিগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে বোঝাপড়া, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসা না থাকলে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সংহতি নিশ্চিত করা যায় না। বাংলাদেশে নানা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার পরও আমরা জাতিবৈচিত্র্যেসমৃদ্ধ ভবিষ্যত বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশেষ করে ২০২৪—এর জুলাই গণ—অভ্যুত্থান আমাদের এই স্লোগান দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে ‘সমতল থেকে পাহাড়, এবারের মুক্তি সবার।’
তিনি বলেন, জাতিবৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ধারাবাহিক আয়োজন আমাদের আশান্বিত করে। আমরা আশা করি, দেশের প্রতিটি নাগরিক তার বৈচিত্র্য বজায় রেখে, ভিন্নতার সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখে দেশের প্রশ্নে অভিন্ন অঙ্গীকার ও ঐক্য বজায় রাখবে। এভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী চেতনা সফল ও সার্থক হবে।
কে. এস. মং বলেন, নিপীড়ন, সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য বিগত ২০২৪ সালে সংঘটিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আদিবাসী তরুণরা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল। বিগত বছরের ২রা আগষ্ট সরকার পতনের তিন দিন আগে যে দ্রোহ যাত্রা গোটা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সেখানে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী ছাত্র ও তরুণরা ব্যানার নিয়ে অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু বিষয় আমাদের আশান্বিত করেছে। বিশেষ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ আশা জাগাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল- পহেলা বৈশাখের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা কতৃর্ক আয়োজিত শোভাযাত্রায় আদিবাসীদের অন্তভুর্ক্তি এবং আদিবাসী ব্যান্ডশিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহের সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রয়াস।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ইউ