
ছবি সংগৃহীত
ইসলামে নারীর অধিকার প্রশ্নটি বহু বছর ধরে মুসলিম বিশ্ব ও পশ্চিমা বিশ্বে বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। পশ্চিমে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব ও মুসলিম সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা—দুই দিক থেকেই মুসলিম নারীরা ভুক্তভোগী বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষক তামারা খাররুব।
তিনি বলেন, একদিকে কিছু মুসলিম ও সরকার কুরআনের পাঠকে নারী বৈষম্যের ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করছে; অন্যদিকে পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষীরা এই পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যাকে ইসলামবিরোধী প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে। ফলে মুসলিম নারীরা এক দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যান—ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করেও অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তামারা খাররুব ইসলামী আইন, ইতিহাস ও নারীবাদী গবেষণার আলোকে নারীর অধিকার বিষয়ে পাঁচটি মূল বিষয় তুলে ধরেছেন—
১. প্রাথমিক কুরআন ব্যাখ্যায় পুরুষতান্ত্রিক প্রভাব
ইসলামী আইন কুরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হলেও, মধ্যযুগের ইসলামি ফকিহরা ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় তাদের সময়ের পুরুষতান্ত্রিক প্রথার প্রভাব গ্রহণ করেছিলেন। এ ধরনের ব্যাখ্যাকে পরবর্তীতে ধর্মের মূল বক্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২. বিকল্প, অপুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা রয়েছে
নারী-পুরুষ সমতার নীতি কুরআনে স্পষ্ট। অনেক বিতর্কিত আয়াত—যেমন সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াত—পশ্চিমা ও প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা ছাড়া ভিন্নভাবে বোঝা যায়। প্রসঙ্গভিত্তিক পাঠে দেখা যায়, এটি সব সময়ের জন্য সার্বজনীন বিধান নয়, বরং বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য নির্দেশ।
৩. প্রসঙ্গের গুরুত্ব
কুরআনের কিছু আয়াত নির্দিষ্ট সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সূরা বাকারা ২৮২ নং আয়াত ব্যবসায়িক লেনদেনে সাক্ষ্য প্রসঙ্গে এসেছে, যা সে সময়ের সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এগুলোকে সব যুগে একইভাবে প্রযোজ্য ধরা ভুল।
৪. ইসলামের ভেতর থেকেই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব
ইসলামে ধীরে ধীরে পরিবর্তন (gradualism), পরামর্শভিত্তিক শাসন (শুরা) এবং জবরদস্তি বর্জনের নীতি বিদ্যমান। ইসলামী আইনের যুক্তি (‘ইল্লাহ) ও জনস্বার্থ (মাসলাহা) নীতি অনুসারে পুরুষতান্ত্রিক আইন পরিবর্তন সম্ভব।
৫. মুক্তি আসতে হবে ইসলামী কাঠামোর ভেতর থেকে
ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীরা পশ্চিমা নারীবাদকে অনুকরণ করে নয়, বরং ইসলামের ভেতরের ব্যাখ্যা ও সংস্কারের মাধ্যমে অধিকারের পথে এগোতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজকে স্থানীয় ধর্মীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভেতর থেকেই এগিয়ে নিতে হবে।
প্রস্তাবনা
খাররুবের মতে, নারীর অধিকার অগ্রগতিতে কুরআনের বিকল্প ব্যাখ্যা প্রচার করা জরুরি। লিঙ্গসমতা বিষয়ক সব কর্মসূচিতে ইসলামি নারীবাদী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পাশাপাশি, আইন সংস্কার, সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও জাতিসংঘের নারী বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবর্তনের এই যাত্রায় স্থানীয় কণ্ঠস্বরকে প্রধান ভূমিকা দিতে হবে এবং নারীর পূর্ণ অধিকারকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে আইনগত স্বীকৃতি দিতে হবে। আরব সেন্টার ওয়াশিংটিন ডিসি
ইউ