
ফাইল ছবি
গর্ভাবস্থা বা সন্তান জন্মের পর অনেক নারী বিষণ্নতায় ভোগেন। এ সময়ের এমন মানসিক অবস্থাকে বলা হয় পরিনাটাল ডিপ্রেশন। এটি কোনো সাধারণ দুশ্চিন্তা নয়—গুরুতর মানসিক সমস্যা, যা সম্প্রতি একটি গবেষণায় নারীর মৃত্যুঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত বলে উঠে এসেছে।
কী বলছে গবেষণা?
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত সুইডিশ এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী গর্ভাবস্থা বা সন্তান জন্মের পর বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি শুধু আত্মহত্যা নয়, প্রাকৃতিক কারণেও দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে রোগ শনাক্ত হওয়ার প্রথম মাসে, তবে তা ১৮ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গবেষণায় ৮৬,৫০০ বিষণ্ন নারী এবং ৮৬৫,৫০০ সুস্থ নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষক কিং শেন বলেন, “এই নারীদের বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে—এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
পরিনাটাল ডিপ্রেশন কী?
এই বিষণ্নতা দেখা দেয় গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মের এক বছরের মধ্যে। অনেকেই একে ‘বেবি ব্লুজ’ ভেবে ভুল করেন, যা ডেলিভারির পর সাধারণ কিছু মানসিক পরিবর্তন। তবে ‘বেবি ব্লুজ’ ১-২ সপ্তাহেই কেটে যায়, কিন্তু পরিনাটাল ডিপ্রেশন দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর।
লক্ষণ কী?
-
দীর্ঘ সময় মন খারাপ থাকা
-
আনন্দ পাওয়া কাজগুলোতে আগ্রহ হারানো
-
ঘুম বা খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন
-
ক্লান্তি, দোষবোধ বা নিজেকে অযোগ্য মনে হওয়া
-
শিশুর সঙ্গে বন্ধন তৈরি না হওয়া
-
আত্মহত্যার চিন্তা (যদিও পরিকল্পনা ছাড়াই)
এই লক্ষণগুলো যদি টানা দুই সপ্তাহ থাকে, তাহলে তা চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়।
কেন হয়?
এর পেছনে রয়েছে—
-
হরমোনের ওঠানামা
-
ঘুমের সমস্যা
-
সন্তান নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ
-
পারিবারিক বা আর্থিক চাপ
-
সমাজ ও আশপাশের সহায়তার অভাব
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
-
যাদের আগে বিষণ্নতা বা মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে
-
যারা একা মা হয়েছেন বা খুব কম বয়সে সন্তান নিয়েছেন
-
যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে
-
পরিবারে মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস রয়েছে
একবার হলে আবার হতে পারে?
হ্যাঁ। আগে যদি এই বিষণ্নতা হয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় আবার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আগেভাগে সচেতনতা, নিয়মিত চেকআপ ও মানসিক সহায়তা থাকলে তা রোধ করা সম্ভব।
চিকিৎসা কী?
চিকিৎসায় রয়েছে—
-
মানসিক থেরাপি
-
প্রয়োজনে ওষুধ (বিশেষজ্ঞের পরামর্শে)
-
পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সহায়তা
-
বিশ্রাম, নিজের জন্য সময় রাখা
-
পরিপূর্ণ ঘুম ও নিজের যত্ন
মাঝারি ও গুরুতর ক্ষেত্রে থেরাপি ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে যেকোনো চিকিৎসাই ধৈর্য ও সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় ওষুধ কাজ করতে ৬-৮ সপ্তাহ লেগে যায়।
শেষ কথা:
মাতৃত্বকালীন বিষণ্নতা অনেক সময় আড়ালেই থেকে যায়। তাই পরিবার, সমাজ এবং চিকিৎসকদের উচিত—এই সময় নারীর মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। সচেতনতা ও সহানুভূতিই হতে পারে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ। ইয়াহু নিউজ
ইউ