
ছবি সংগৃহীত
জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী—এই প্রশ্নটি আমাদের অনেকের মনেই কখনো না কখনো জেগে ওঠে। বিশেষ করে একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমরা যখন মা, স্ত্রী, কন্যা, বোন কিংবা বন্ধু—বিভিন্ন পরিচয়ের ভার বহন করি, তখন নিজের আসল পরিচয়টি কোথায় হারিয়ে যায়। এই বিষয়টি নিয়েই লেখিকা জাকিয়া আলী তার এক চিন্তাশীল লেখায় তুলে ধরেছেন নারীর আত্মপরিচয়, দায়িত্ববোধ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে চলার বার্তা।
তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন—জীবনের কোনো ঘটনাই আকস্মিক নয়। প্রতিটি কষ্ট, আনন্দ, চ্যালেঞ্জ—সবই আল্লাহর নির্ধারিত পরিকল্পনার অংশ। এমনকি আমাদের সন্তান, স্বামী কিংবা অপরিচিত মানুষের আচরণও তাঁর ইচ্ছাতেই ঘটে।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শিক্ষার সুযোগ
জাকিয়া আলী লিখেছেন, জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি হয় পরীক্ষা, নয়তো সতর্কবার্তা। কোনো কষ্ট যদি আমাদের আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনে, তবে সেটি রহমতস্বরূপ পরীক্ষা। আর যদি তা আমাদের গাফেল করে তোলে, তবে তা শাস্তির আকারে আসে। তাই "কেন আমার সঙ্গে এমন হলো?" জিজ্ঞাসা করার চেয়ে বরং ভাবা উচিত, "আল্লাহ আমাকে কী শেখাতে চাইছেন?"
আসল পরিচয়: আমরা আল্লাহর বান্দা
নারীরা অনেক সময় নিজেদের পরিচয়কে পারিবারিক ও সামাজিক ভূমিকায় সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো—আমরা আল্লাহর ‘ইবাদ (বান্দা)। আমরা শুধু কারো কন্যা বা স্ত্রীর পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নই। আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভিন্ন, মহান। আমরা দুনিয়ার জন্য না, আখিরাতের জন্য সৃষ্টি।
সৃষ্টির লক্ষ্য কী?
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদতের জন্য।”
(সূরা আদ-ধারিয়াত ৫১:৫৬)
ইবাদত শুধু নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঘর সামলানো, স্বামীর প্রতি সদ্ব্যবহার, সন্তানের প্রতি সহনশীলতা, সমাজে দয়া ও ন্যায়বিচার প্রদর্শন—সবই ইবাদত হয়ে যায় যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়।
ভারসাম্যপূর্ণ জীবনই ইসলামিক আদর্শ
জাকিয়া আলী জানান, ইসলাম ভারসাম্যের ধর্ম। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে অন্যদের খুশি করার চাপে ভেঙে পড়া ইসলাম সমর্থন করে না। হাদিসে আছে—
“তোমার শরীরের তোমার ওপর হক আছে, তোমার চোখের তোমার ওপর হক আছে…”
(সহীহ বুখারী)
নিজের যত্ন নেওয়াও ইবাদতের অংশ। সুস্থ শরীর ও প্রশান্ত মন ছাড়া একজন নারী তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারেন না।
দুনিয়া নয়, লক্ষ্য হওয়া উচিত জান্নাত
এই দুনিয়া মুসলিম নারীর জন্য পরীক্ষা—এটা আনন্দের জায়গা নয়, ধৈর্যের মাঠ। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন—
“দুনিয়া হলো মুমিনের কারাগার আর কাফেরের জান্নাত।”
(সহীহ মুসলিম)
তবে এর মানে এই নয় যে দুনিয়ায় কোনো সুখ খোঁজা যাবে না। বরং হালাল উপায়ে পরিবার, কাজ, ভ্রমণ, বন্ধুতা—সব উপভোগ করা যাবে, যদি আল্লাহকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
প্রতিটি ভূমিকায় ইবাদতের সুযোগ
একজন স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, কন্যা কিংবা বন্ধু হিসেবে—নারীর প্রতিটি দায়িত্বে জান্নাত অর্জনের সুযোগ আছে। কিন্তু সেই সঙ্গে নিজের মনের মধ্যে প্রশ্ন রাখতে হবে—“আমি কি এটি আল্লাহর জন্য করছি?” যদি নিয়ত ঠিক থাকে, তবে প্রতিটি কাজ ইবাদতে পরিণত হয়।
শেষ কথায় আশার বার্তা
জাকিয়া আলী লেখেন, “আপনার কষ্ট, চেষ্টা, এমনকি নিঃশব্দ অশ্রুও আল্লাহ দেখেন। আর যিনি দয়াময়, তিনি কাউকে হতাশ করেন না।”
তিনি দোয়া করেন:
আল্লাহ যেন আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে বুঝার তৌফিক দেন, কষ্টে ধৈর্য ধরার শক্তি দেন এবং ঈমানের ওপর দৃঢ়তা দান করেন। জাকিয়া আলি ডটকম
ইউ