
ফাইল ছবি
আমাদের জীবনের নানা ওঠানামা ও চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা খুবই জরুরি। বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ দেখা দিলে চিকিৎসার প্রথম ধাপে সাধারণত থেরাপি ও ওষুধ দেওয়া হয়। তবে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো—যেমন খাবার, ঘুম, চলাফেরা—মানসিক অবস্থার ওপর বড় প্রভাব ফেলে, এটা আমরা অনেকেই উপেক্ষা করি।
এমনকি যারা কোনো নির্দিষ্ট মানসিক সমস্যায় ভুগছেন না, তারাও চাইলেই কিছু ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের আরও ভালো রাখতে পারেন। সময় বা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব—আর এটাই হতে পারে আপনার নিজের যত্ন নেওয়ার শুরু।
চলুন জেনে নিই এমন পাঁচটি কার্যকর অভ্যাস, যা আপনার মন ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে:
১. পুষ্টিকর খাবার খান, শরীরচর্চা করুন
সবুজ শাকসবজি, ডাল, বাদাম, মাছ, চর্বিবিহীন মাংস—এই খাবারগুলো মস্তিষ্কের জন্য উপকারী উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফলেট, জিঙ্ক ও ওমেগা-৩ সরবরাহ করে।
বেরি, চা, ডার্ক চকলেট, রেড ওয়াইন ও কিছু ভেষজ উপাদান মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আর ব্যায়াম তো কথাই নেই—যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা, এমনকি ঘরের কাজ করলেও শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, মন ফুরফুরে হয়।
বিশেষ করে যদি আপনি প্রকৃতির মাঝে হাঁটেন বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ব্যায়াম করেন, তাহলে তার মানসিক উপকারিতা আরও বেশি।
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে অল্প কিছু সময়ের হাঁটাহাটাও মন ভালো করতে পারে।
২. খারাপ অভ্যাসগুলো বাদ দিন
অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ শুধু শরীর নয়, মনের উপরেও খারাপ প্রভাব ফেলে।
ধূমপান ছাড়লে প্রাথমিকভাবে কিছু অস্বস্তি হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য ঠিক হয়ে যায়, মন শান্ত থাকে।
অনেকে বলেন, হালকা পরিমাণ রেড ওয়াইন বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে তেমন কোনও উপকার নেই বরং ক্ষতিই হতে পারে।
৩. ঘুম ও বিশ্রামে নজর দিন
ভালো ঘুম মানেই ভালো মেজাজ। যারা রাতে ঘুমাতে পারেন না বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়, তাদের জন্য ‘স্লিপ হাইজিন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে রয়েছে:
-
রাতে কম ক্যাফেইন গ্রহণ,
-
ঘুমানোর নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি,
-
বিছানায় শুয়ে শুধু ঘুমানোর চেষ্টা করা,
-
ঘুম না এলে উঠে হালকা কোনো কাজ করা (যেমন বই পড়া)।
ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার কমানোও জরুরি, কারণ এসব ডিভাইসের নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণে বাধা দেয়।
আর দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা—যেমন প্রিয় কোনো কাজ, শখ বা বিশ্রাম—মানসিক শান্তি দেয়।
৪. প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
সূর্যের আলো আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সহায়ক সেরোটোনিন হরমোন বাড়ায় এবং ভিটামিন ডি উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ঘুমের চক্রও ঠিক রাখে।
তবে রোদে থাকার সময় ত্বকের যত্ন নিতে হবে—আবহাওয়ার সময়, জায়গা ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো যেমন বনে হাঁটা, গাছপালার মাঝে বসে থাকা বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলা—এসব মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণী রাখলে উদ্বেগ ও একাকীত্ব কমে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
৫. সহায়তা চাইতে দ্বিধা করবেন না
জীবনধারার এই পরিবর্তনগুলো যতই উপকারী হোক, চিকিৎসা বা থেরাপির বিকল্প নয়। বরং সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এগুলো মানসিক উন্নতির পথে আপনার নিজস্ব প্রচেষ্টা।
তবে সব সময় পরিবর্তন সহজ হয় না। ধূমপান বা জাঙ্ক ফুডের ওপর নির্ভরতা থাকলে সেগুলো ছাড়তে মানসিক কষ্টও হতে পারে। তখন পেশাদার কাউন্সেলিং বা মানসিক সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।
কঠোর নিয়মে নিজেকে縛ে না রেখে ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিজেকে দোষ না দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হন।
একবার নিজেই ভেবে দেখুন—একটি ভালো ঘুমের রাত, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পর, বা প্রকৃতির মাঝে প্রিয় কারও সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরে এলে আপনার কেমন লাগে?
শেষ কথায়
আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আপনার নিজেরই হাতে। জীবনের পাঁচটি সাধারণ পরিবর্তন—সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক ব্যায়াম, প্রকৃতির সান্নিধ্য ও খারাপ অভ্যাস বর্জন—আপনার মন ও মেজাজে আশ্চর্য রকম ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সময়টা এখনই—নিজের যত্ন নিন। দ্য কনভার্সেসন
ইউ