
ছবি সংগৃহীত
অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর চিন্তা এড়িয়ে চলে। কিন্তু স্টেফানি চ্যান (৫৪) ও তাঁর কন্যা র্যাচেল টে (২৫) প্রতিদিনই মৃত্যুর কাছাকাছি থাকেন। মা-মেয়ে এই জুটি মিলে সিঙ্গাপুরের একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রতিষ্ঠান ক্যাসকেট ফেয়ারপ্রাইজ (Casket Fairprice) পরিচালনা করেন।
জীবনের অমূল্যতা শিখেছেন শোকসেবার মাধ্যমে
র্যাচেল বলেন, “এই কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি—জীবন খুবই ছোট ও অনিশ্চিত। যাদের আমরা ভালোবাসি, তারা চিরকাল পাশে থাকবে না। তাই যতদিন আছেন, ততদিন তাদেরকে ভালোবাসা ও সময় দিতে হবে।”
শুরু হয়েছিল এক অনিচ্ছাকৃত যাত্রায়
চ্যান মালয়েশিয়ার মালাক্কা থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন ১৯৮৯ সালে। প্রথমে একটি ইলেকট্রনিক্স কারখানায় কাজ শুরু করেন, পরে স্বামীর পারিবারিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবসায় যুক্ত হন। সেই সময় তাঁদের বড় মেয়ে র্যাচেল ছিল মাত্র এক বছরের শিশু।
যদিও পরিবারিক সম্পর্ক ছিল, চ্যান শুরু করেছিলেন নিচু পদ থেকে। প্রথম দিন লাশের কাছে যেতে ভয় পেতেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা মনে করে বলেন, “প্রথমে আমি শুধু কাগজপত্র সামলাতাম। এমনকি এক মৃতদেহের জামার বোতাম খুলতেও হাত কাঁপছিল।”
মেয়ের সাহস ও দায়িত্ববোধ
অন্যদিকে র্যাচেল মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সাহস নিয়ে পেশায় যোগ দেন এবং খুব দ্রুতই প্রথম এমবালমিং সেশনে অংশ নেন। মা প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু মেয়ের আত্মবিশ্বাস দেখে গর্বিত হন।
“সে ভয় পায়নি। বরং খুব শান্তভাবে সবকিছু করছিল। তখনই বুঝেছিলাম—সে তৈরি,” বলেন চ্যান।
বদলে দিচ্ছেন পরিবারিক প্রতিষ্ঠান
ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক র্যাচেল এখন প্রতিষ্ঠানের অপারেশন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করেন। তিনি এমবালমিং সুবিধা আধুনিকীকরণ করেছেন এবং ২০২০ সালে মা-মেয়েতে মিলে চালু করেছেন নিজেদের ফুলের ব্যবসা Petal Elements, যাতে শোকের ফুলের মান ও নান্দনিকতা বজায় রাখা যায়।
“ফুল শোক প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই আমরা চাই সেটার মান ও ব্যক্তিগত স্পর্শ আমাদের হাতেই থাকুক,” বলেন র্যাচেল।
চাপ ও আবেগের ভার
যুবতী হিসেবে পুরুষপ্রধান এক কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিতে অনেক চাপ ছিল। র্যাচেল বলেন, “অনেকেই আমাকে ‘বসের মেয়ে’ হিসেবে দেখত। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম সবাই বুঝুক—আমি নিজে থেকেই এই কাজটা পারি।”
সবার চেয়ে কঠিন ছিল এক মৃত ভ্রূণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন, যেটা তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সন্তান ছিল। “তাদের বয়স আমার মতোই। পুরো সময়টা খুব আবেগঘন ছিল,” বলেন তিনি।
মৃত্যুকে মেনে নেওয়া, শান্তির খোঁজে
চ্যান বলেন, “একটা ভালো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মানে—পরিবার যেন নিশ্চিন্তে প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে পারে। আমি চাই আমার নিজের সেবাও যেন শান্তিপূর্ণ হয়, যেন আমার প্রিয় গান বাজে, এবং আমার ছাই সমুদ্রে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।”
মেয়ে র্যাচেল এখনও সে চিন্তায় পৌঁছাতে পারেননি। “মা-বাবার চলে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। শুধু জানি—যতদিন আছেন, সময়টা যেন পূর্ণভাবে কাটাতে পারি।”
একসাথে কাজ, একসাথে বেড়ে ওঠা
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। মেয়ে র্যাচেল এখন তার মায়ের দৃঢ়তা ও নেতৃত্বকে নতুন চোখে দেখেন।
মা বলেন, “আমি এখন শুধু সাহসী নই, বরং গর্বিত। মেয়ের সঙ্গে এই গল্পটা শেয়ার করতে পেরে ধন্য মনে করি।” সিএনএ লাইফস্টাইল
ইউ