ছবি: হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায়...
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন নারীবাদি সংগঠনটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অনুষ্ঠানের শুরুতে হেনা দাসের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সুরাইয়া আক্তার ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ। আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার লায়লা আফরোজ। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘হেনা দাস নেই কিন্তু তার জন্মশতবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠন।। একটি সাম্যবাদী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ছাত্র জীবনে এক আদর্শিক অবস্থান থেকে আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। নারীর অধিকার আদায়ে আন্ত:প্রজন্মগত ব্যবধানকে অতিক্রম করে বৈশ্বিক নারীর আন্দোলনের বিষয়গুলো সাবলীল ভাবে গ্রহণ করেছিলেন। তার লেখা চারপুরুষের কাহিনী এক বিষ্ময়।’
উপস্থিত বক্তারা বলেন, ‘প্রকৃত সাম্যবাদে দীক্ষিত ছিলেন হেনা দাস। তিনি যে প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আর আজকের যে প্রজন্ম তাদের মূল্যবোধের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে দমন করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে হেনা দাসের লেখা তরুণ প্রজন্মকে পড়তে হবে, তাকে জানতে হবে, তাঁর রেখে যাওয়া আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।’
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান; বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর প্রাক্তন সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম; বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর প্রেসিডিয়াম সদস্য এ.এন রাশেদা; একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. মন্টু ঘোষ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত কুমার সাহা এবং স্থপতি ড.নজরুল ইসলাম; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট এর কোর্স কো-অর্ডিনেটর সুচিত্রা সরকার; ও স্থপতি নবনীতা ইসলাম।
উপস্থিত অন্যান্য আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘প্রয়াত হেনা দাস ইতিহাসের নেতা। খণ্ডিতভাবে তাকে বোঝা যাবেনা। তিনি একজন আধুনিক মানুষ ছিলেন। যিনি ত্রিকালকে উপলব্ধি করে ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর উচুঁ থেকে নিচু সব শ্রেণীর মানুষ সবার সাথেই তার সখ্যতা ছিলো। হেনা দাসের চার পুরুষের কাহিনী পড়া না থাকলে জীবনে অনেককিছুই অজানা থেকে যাবে। ২০০ বছরের রাজনৈতিক, অর্থনীতিসহ সামাজিক অবস্থানের পূর্ণ বিবরণ এই বইটিতে রয়েছেন। পুরুষশাসিত সমাজে নারী শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে হেনা দাসের অবদান রয়েছে। মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও সময়নিষ্ঠা ছিলো প্রবল। স্থির চিত্তে ঘরে বাইরের দায়িত্বকে সামলাতেন সমান ভাবে নিজের ব্যক্তিগত জীবন দর্শনের আলোকে। ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত আন্দোলনের সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে তাঁর মধ্যে থাকা দৃঢ়তা ছিলো অনুপ্রেরণাদায়ক। এসময় বক্তারা বলেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পাঠ্যসূচিতে তার সম্পর্কে অন্তর্ভুক্ত করাসহ নিয়মিত তাকে চর্চার মধ্যে রাখতে হবে। হেনা দাস তাঁর নিষ্ঠাময় কর্ম ও সাহসী ভূমিকার কারণে তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে আজও আমাদের স্মৃতিতে চিরঞ্জীব হয়ে আছেন ও থাকবেন।’
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সুফিয়া কামাল প্রয়াতের পর তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন যে গৌরব এনে দিয়েছেন তা তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। এখন আমরা এমন কাউকে পাইনা যাকে আদর্শ হিসেবে ভাবা যায়। কিন্তু হেনা দাস সব আদর্শগত দিকের উপস্থাপনে যোগ্য নেতৃত্ব। পারিবারিক শিক্ষা, সময় ও নিজের দৃঢ়তা হেনা দাসকে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলেছিলো। তিনি শিখিয়েছেন প্রত্যেকটি মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে, তার পাশে থাকতে হবে, নিজের কাজে দৃঢ়তা থাকতে হবে, কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তত করতে হবে।’ তিনি নারী আন্দোলনকর্মীদের উদ্দেশে হেনা দাসের জীবনপ্রক্রিয়া ও কর্মকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, পাড়া কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
ইউ