
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
খাগড়াছড়ির গুইমারায় সম্প্রতি গুলিবর্ষণে নিহত আদিবাসীদের স্মরণে রাজধানীতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন থেকে পাহাড়ের সংকট নিরসনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (পিচিটি) দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সকল রাজনৈতিক পক্ষকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই স্মরণ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। এতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
গুলিবর্ষণ ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা
অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, একজন মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন। তিনি এই ঘটনায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানান এবং পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
জাকির হোসেন স্পষ্ট করে বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। এজন্য সকল রাজনৈতিক পক্ষ ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপ জরুরি।"
ঘোষণাপত্রের মূল দাবিগুলো
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়:
-
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি: সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিরপেক্ষ তদন্তে নাগরিক প্রতিনিধি যুক্ত করে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
-
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন: নিহত পরিবারের জন্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
-
সামরিকীকরণ পরিহার: পাহাড় থেকে সামরিকীকরণ নীতি পরিহার করে সিভিল প্রশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
-
র্মপরিকল্পনা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচীভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বক্তাদের সংহতি ও মন্তব্য
স্মরণ সভায় বক্তারা আদিবাসীদের ওপর হওয়া নিপীড়নের কঠোর সমালোচনা করেন।
-
অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন বলেন, ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অধিকার নাগরিক হিসেবে সবার আছে। এ ধরনের আন্দোলনকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা' দিয়ে দেখা ঠিক নয়।
-
ডা. মুশতাক হোসেন নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং সরকারের আশু পদক্ষেপ দাবি করেন।
-
সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "রাষ্ট্র আদিবাসীদের সাথে অস্বীকারের রাজনীতিই করে যাচ্ছে। সেই ১৯৭১ সালের পর থেকে আদিবাসীদের উপর গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। এসবের কোনো বিচার নেই।" তিনি অনতিবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শামসুল হুদা (নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি), খালেকুজ্জামান লিপন (বাসদ), বাহাউদ্দীন শুভ (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন), মুক্তা বাড়ৈ (সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট) এবং অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা (সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ)-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, নাগরিক সমাজ ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, কাপেং ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু সংগঠন এই আয়োজনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
ইউ