
সংগৃহীত ছবি
শিবগঞ্জের শতাধিক বছরের পুরানো একটি ঐতিহ্য হলো নারীদের তৈরি করা আম থেকে আমচুর।যা শিবগঞ্জের নয় জেলাতে একটি কুটির শিল্প বলে পরিচিত।
শিবগঞ্জে আম থেকে আমচুর তৈরি করে সহস্রাধিক নারী হালকা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়কৃত টাকা দিয়ে মেযেদের লেখাপড়া ও সংসারের অন্যান্য কাজে খরচ করতে পারে। আম থেকে আমচুর তৈরী করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। তবে আমচুর তৈরী করতে আম কিনতে হয় না। ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তাপদাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিবগঞ্জে প্রচুর আম কুড়িয়েই এ আমচুর তৈরী করা যায়। ছ্টো ছোট ছেলে-মেয়েরা ও নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি বাগান থেকে আম কুড়িয়েই আমচুর তৈরী করে। এবছর গ্রামে গ্রামে তৈরী করা আমচুর বিক্রী হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। প্রায় হাজার খানেক ফেরিওয়ালা দাঁড়ি পাল্লা ও বস্তা নিয়ে সাইকেল যোগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে আমচুর ক্রয় করে। সংগৃহিত এ আমচুরগুলো এশিয়া মহাদেশের সবচেযে বড় আম বাজারে কানসাটের গোপালনগর মোড়ে বড় বড় আড়তে বিক্রী করে। লাভ হয় প্রতি কেজিতে প্রায় ১০/১৫ টাকা। একেকজন ফেরীওয়ালা প্রতিদিন নিম্নে ৩০ কেজি ও উদ্ধে দুই হ নপর্যণÍ আমচুর আড়তে বিক্রী করতে পারে।
সরজমিনে ফেরিওয়ালা শ্যামপুর ইউনিয়নের চামা গ্রামের অওয়াল জানান, আমের মৌসুমে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেজি প্রতি ৮০/৯০ টাকা দরে ৩০/ ৪০ কেজি আমচুর কিনে কানসাট গোপালানগর মোড়ে আড়তে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন আয় হয় ৫০০/ ৬০০ টাকা।শুধু আমাদের গ্রামে প্রায় ১০০জন ফেরিওয়ালা আমচুর কিনে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে। একই কথা বললেন মোবারকপুর কবির উদ্দিন, কলাবাড়ির আবুল কালাম আজাদ শ্যামপুরের শরিফ, শাহাবাজপুর গ্রামের নয়ন আলি কানসাটের জাব্বার আলি, পারচৌকা গ্রামের রাসেল আলি ও সদ্দাম হোসেন সহ আরো অনেকেই। আমচুর তৈরিকারক মনাকষার গৃহবধু রোকেয়া বেগম, মোবারকপুরের বৃষ্টি বেগম জানান বাগান থেকে কুড়িয়ে আনা নষ্ট আম গুলো কেটে চিরচির করে কেটে ঘরের চালায় বা উঠানে কয়েকদিন শুকিয়ে আমচুর তৈরি করতে হয়। বাড়তি কোন ঝামেলা নেই। তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজলে রং নষ্টা হয়ে যায়। তাই সতর্ক থাকতে হয়। এ আমচুর গ্রামে ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করে কেজি প্রতি ৮০/৯০ টাকা পাই। যা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাড়ার খরচ ও নিজের পোশাক ক্রয় করি। ।কানসাটের গোপালনগর মোড়ে এক আড়তের মালিক রজব হোসেন জানান প্রায় ২৫/২৬ বছর থেকে আমি আমচুরের পাইকারী ব্যবসা করি। প্রায় ২৫০জন ফেরীওয়ালার নিকট হেত আমচুর ক্রয় করি। তারা প্রতিদিন প্রায় একমন থেকে ৫০ কেজি বা তারও বেশী আমচুর দেয়। মৌসুমে অল্প পুঁজিতে খরচ বাদে ৫/৬লাখ টাকা আয় করতে পারি। ক্রয়কৃত আমচুরগুলো দেশের কুমিল্লা,ঢাকা,নোয়াখালী, চাঁদপুর সহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাক যোগে বড় বড় পাটির কাছে বিক্রী করি।
আড়তদার রসুল বলেন এখানে প্রায় ১০ টি আড়তে প্রায় এক হাজার ফেরিওয়ালারা আগ্রহসহকারে এ ব্যবসা করে। কারণ এখানে টাকা লেনদেন ও ওজনে কোন হয়রানি নেই। যেখানে আমের মণ ধরা হয় ৫৫ কেজিতে সেখানে আমচুরের মণ ধরা হয় মাত্র ৪১ কেজিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, ভাল মানের এ কুটির শিল্পের স্বাস্থ্য সম্মতভাবে সম্প্রসারনের জন্য গ্রাম্য নারীদের বেশী বেশী করে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজাহার আলির সাথে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
//এল//