
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) কলেজ প্রাঙ্গণে নারী মৈত্রী ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজ রেঞ্জার গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে "তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি" শিরোনামের দিনব্যাপী সিগনেচার ক্যাম্পেইনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর দিয়ে আইনটি শক্তিশালী করার পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই স্বাক্ষরসমূহ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হবে, যাতে দ্রুত সংশোধনী পাসের জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানারা জামান।
ক্যাম্পেইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন। সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানারা জামান বলেন, “তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে এবং বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০ দেশের একটি। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তামাক ব্যবহার করেন। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮-এর তথ্যে দেখা যায়, তামাকজনিত রোগে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান। এই ভয়াবহ বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের এই সিগনেচার ক্যাম্পেইন অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংশোধনের এই দাবির সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত এবং তাদের পাশে আছি।”
নারী মৈত্রীর ইয়ুথ এডভোকেট এবং লালমাটিয়া মহিলা কলেজের রেঞ্জার সদস্য শাহরিন ফেরদৌস বলেন, “পরোক্ষ ধূমপানের কারনে প্রতিবছর ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ্য মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা কোন ভাবেই পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা আছে। সেসব স্থান থেকেও অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। তাই ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত সহ উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবণা গুলো দ্রুত পাসের দাবিতে আমাদের এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছি।’’
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, ‘‘২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, বর্তমান সরকার তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে করছে। এটি সম্পূর্ণই আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন। জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে সরকারকে বুঝতে হবে যে—তামাক কোম্পানির মতামত নয়, জনগণের জীবনই রাষ্ট্রের মূল দায়।’’
তিনি এসকল বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের এই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবীর সাথে সবাইকে একাত্মতা প্রকাশ করার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
ইউ