
ছবি: খায়েরান নূর
আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় হিজাব নিষেধাজ্ঞা মুসলিম নারী অ্যাথলেটদের উপর বৈষম্যমূলক প্রভাব ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন কেনিয়ার ক্রীড়া আইনজীবী খায়েরান নূর। তিনি ‘প্লে দ্য গেম ২০২৫’ সম্মেলনে হিজাব নিষেধাজ্ঞার ধর্ম, লিঙ্গ ও ক্রীড়া প্রশাসনের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
খায়েরান নূর বলেন, মুসলিম নারী হিসেবে মোম্বাসার রক্ষণশীল উপকূলীয় শহরে বেড়ে ওঠায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানেন কীভাবে সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বাধা ক্রীড়ায় অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। “ছোটবেলায় খেলাধুলায় অংশ নিতে গিয়ে আমাদের পোশাক নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হতো, মনে করা হতো হিজাব ক্রীড়ার সঙ্গে বেমানান,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, একসময় খেলাধুলার জন্য উপযোগী হিজাব বাজারে ছিল না, আর পরবর্তীতে যেসব পণ্য এসেছে সেগুলো ছিল অপ্রাপ্তিযোগ্য বা অত্যন্ত দামি। এই পরিস্থিতি তাকে প্রতিদিন পরিচয়, শালীনতা ও পারফরম্যান্সের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বাধ্য করেছে।
খায়েরান নূরের মতে, ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের আগে ফ্রান্সে ক্রীড়ায় হিজাব নিষেধাজ্ঞা তার শৈশবের অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন—“এটি নিরপেক্ষতার নামে পরিচয় মুছে ফেলার প্রচেষ্টা।”
তার গবেষণার প্রধান ফলাফলগুলো হলো—
-
হিজাব নিষেধাজ্ঞা নিরপেক্ষ নয়, বরং এটি লিঙ্গভিত্তিক ইসলামোফোবিয়া বাড়ায়।
-
ফ্রান্সে এ নিষেধাজ্ঞা আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, যা শিক্ষাঙ্গন থেকে ক্রীড়া ময়দান পর্যন্ত বিস্তৃত।
-
‘লাইসিতে’ (Laïcité) নীতি এখন ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার বদলে মুসলিম পরিচয়কে দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
-
অনেক নারী অ্যাথলেট শুধু বিশ্বাসে অবিচল থাকার জন্যই অপমানিত ও প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছেন।
-
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ ও অলিম্পিক চার্টারে সুরক্ষা থাকলেও তা প্রয়োগে বড় ঘাটতি রয়েছে।
-
অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে যেমন কানাডা করেছে, সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তিনি উল্লেখ করেন, হিজাব নিষেধাজ্ঞা শুধু ফ্রান্সের সমস্যা নয়, বরং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। তবে ফ্রান্সে এটি সবচেয়ে বেশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। “সত্যিকারের ঐক্য আসে পরিচয় মুছে ফেলার মাধ্যমে নয়, বরং বৈচিত্র্যকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করার মাধ্যমে,” বলেন নূর।
তার প্রস্তাব অনুযায়ী, সমাধান হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও মানবাধিকারভিত্তিক—যেখানে মুসলিম নারী অ্যাথলেটরা নীতি প্রণয়নের টেবিলে থাকবেন, জাতীয় আইন আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং ক্রীড়াঙ্গনে ইউরোকেন্দ্রিক মানদণ্ডের পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব গড়ে তোলা হবে।
নূরের মতে, “খেলাধুলা তখনই ঐক্যের প্রতীক হবে, যখন প্রত্যেকে নিজের পূর্ণ পরিচয় নিয়ে অংশ নিতে পারবে। মুসলিম নারীদের যেন বিশ্বাস ও খেলাধুলার মধ্যে বেছে নিতে না হয়।” প্লে দ্য গেম
ইউ