
ছবি সংগৃহীত
সেই ২০০৯ সাল থেকে নানা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী (বিএনপি) দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সার্বিক দিক দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার রুপকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের ফলাফল মূলত শূন্য। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তদারকি সরকারের অধীনে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দাবি করেও তদারকি সরকার ব্যবস্থ না পেয়ে বিএনপি দুটি নির্বাচনই বয়কট করে। বিএনপি এখনও ওই একই দাবিতে আন্দালন করে যাচ্ছে। কিন্তু ১৪ বছরেও সুবিধা করতে না পেরে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে তুরুপের তাস হিসেবে গ্রহণ করে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। অর্থাৎ চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করার বিষয়ে দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে, বছর দুই আগেও যুক্তরাষ্ট্র দেশের এলিট ফোরস র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ভিসানীতির আওতায় ফেলেছিল। তারপরেও মধ্যে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্র সফরও করেছেন।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরো শক্তভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসানীতি প্রয়োগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে ভিসানীতির প্রয়োগে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে দলের নেতারা তেমন বিচলিত নন বলে তারা জানান। নেতারা বলছেন, বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পেয়ে হতাশ ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কয়েক দিন আগেও পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিল দলটি। এবার ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হওয়ায় প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে দিল্রিতে ও যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ, ফটোসেশনের ছবি ও সেলফি ভাইরালের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রয়োগের পদক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে ধারণা করছে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে সরকারি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। এ রকম প্রেক্ষাপট চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি। এখন কিভাবে আন্দোলনে সফলতা পাওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা চলছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান। চলমান আন্দোলন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এর পরই আসবে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বোঝার বিষয়ও আছে। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের মাঝামাঝি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করাই এখন বিএনপির লক্ষ্য। অক্টোবরের মাঝামাঝি ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। অবশ্য সরকার অক্টোবরের শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভিসানীতি প্রয়োগ হওয়ার জন্য সরকার দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র রক্ষায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেভাবে ভিসানীতি প্রয়োগ করে থাকে, সেভাবে বাংলাদেশেও করেছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’
ইউ