
ফাইল ছবি
ভারতে পালিয়ে যাওয়া ব্রিটিশ এমপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন। দুর্নীতির মামলায় তার অনুপস্থিতিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেবে বলে জানিয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। টিউলিপকে আজ সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হলেও তিনি হাজির হননি।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, বিগত সরকারের সময় টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেন, যা পরে বিতর্কের জন্ম দেয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতেও তিনি বাংলাদেশে নিজের মালিকানাধীন বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’ এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে ৬ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন টিউলিপ। যদিও তিনি দাবি করেন, ২০০২ সালে বাবা-মায়ের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি উপহার পান এবং ২০১৫ সালে সেটি বোন আজমিনার কাছে হস্তান্তর করেন। তবে, দুদক জানায়—এ হস্তান্তরের কাগজপত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, সম্পদ গোপন, অবৈধ প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটি জানায়, অভিযোগের তদন্ত ১২টি দেশে বিস্তৃত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে।
এরই মধ্যে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে তদন্তে সহায়তা করেছে।
দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। পাচারকৃত অর্থ শুধু যুক্তরাজ্য নয়, আরও কয়েকটি দেশে পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পারস্পরিক আইনি সহায়তার চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইন্টারপোলের সহায়তা ছাড়াও বিদেশি তদন্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সম্পদ-সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে বিতর্কের মুখে গত মাসে তিনি পদত্যাগ করেন।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, টিউলিপ এবং তার খালার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে একটি বড় অঙ্কের অর্থ—প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড—বিদেশে পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলছে, যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে অনিয়মের অভিযোগও।
দুদক জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছেও একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর।
ইউ