
ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে সাময়িক বিরতির চুক্তিকে 'জাতীয় সাফল্য' হিসেবে উদযাপন করছে চীন। এই বিরতি ৯০ দিনের হলেও চীনে বিজয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্কিন প্রশাসনের কৌশলিক পিছু হটার প্রেক্ষিতে চীনের জনগণ এবং বিশ্লেষকরা এটিকে ‘বাণিজ্যিক বিজয়’ হিসেবে দেখছেন।
যদিও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিরতিকে নিজের ‘কামিকাজে কৌশল’-এর সাফল্য বলেই দাবি করছেন, চীনের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভিন্ন। তাদের মতে, মার্কিন বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ পর্যন্ত নমনীয় হতে হয়েছে।
চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম শিনহুয়া এ বিষয়ে কিছুটা সংযত মন্তব্য করলেও জাতীয়তাবাদী বিশ্লেষক হু শিজিন একে সরাসরি ‘মহান বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। তবে ফেন্টানাইল পাচারের অভিযোগে চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে, যা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে পারে। এ ছাড়া ৮০০ ডলারের কম মূল্যের ই-কমার্স পণ্যের ওপর থাকা ১২০ শতাংশ শুল্কও কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে।
চীন তুলনামূলকভাবে সীমিত ছাড় দিয়েছে। তারা মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। বোয়িং বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে চীন, যা দেশটির নিজেরই প্রয়োজন ছিল। বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর কিছু সীমাবদ্ধতাও শিথিল করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আংশিকভাবে পুনরায় চালু হবে। উইচ্যাটে মার্কিন দূতাবাসের ঘোষণার নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সাম্রাজ্যবাদীরা কাগুজে বাঘ মাত্র।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘যখন মার্কিন সুপারমার্কেটে জিনিসপত্র ফুরিয়ে যায়, তখন তারা আর নিতে পারে না।’
গ্লোবাল সাউথ বা বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে চীনের এই অবস্থান কূটনৈতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শেনঝেনের চাইনিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ঝেং ইয়ংনিয়ান বলেন, ‘কারো তো দাঁড়াতে হবে এবং বলতে হবে— আধিপত্যবাদ অনুচিত।’
গত ১৩ মে লাতিন আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেন, ‘চীনকে সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা এগিয়ে নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায় ও ন্যায্যতাকে সমুন্নত রাখতে হবে।’
চুক্তি হলেও চীনে কিছুটা উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি এতটাই চীনের পক্ষে যে ট্রাম্প ভবিষ্যতে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন। ইতিমধ্যেই ৯০ দিনের এই সাময়িক সময়কে সামনে রেখে দ্রুত পণ্য সরবরাহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জাহাজগুলো, যা অনিশ্চয়তারই ইঙ্গিত দেয়।
ব্লুমবার্গের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের নতুন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখানো সহজ, কিন্তু স্থায়ী চুক্তি করা কঠিন।’
ইউ