
ছবি: কবির আনিলা
প্রতিবন্ধী নারীদের অভিজ্ঞতা চ্যালেঞ্জ ও নেতৃত্বের গল্প -২
প্রতিবন্ধী নারীরাও সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক, বুদ্ধি, অটিজম বৈশিষ্ট্য, সেলিব্রাল পালসি ইত্যাদি ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার নারীরা সমাজের পক্ষপাতিত্ব, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার ঘেরাটোপে আটকে পড়েন। মেধা, যোগ্যতা, শিক্ষা থাকার পরও অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে তাদের এগিয়ে যেতে হয়। সফলতা অর্জন করা তাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, প্রতিবন্ধী নারীর জন্য দরকার সঠিক সমর্থন ও সুযোগ। এ দুটো পেলে তারাও অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন। নেতৃত্বের জায়গা তৈরি করতে পারবেন।
তাদেরই একজন শিরিন আখতার। তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী। তিনি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তার অধ্যাবসায়, মেধা, সাহস ও যোগ্যতার মাধ্যমে। যদিও প্রথম প্রথম কিছুটা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। কিন্তু মনোবল হারাননি।
শিরিন আখতারের মতে, তার প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা। তারপরে একজন নারী। প্রবেশগম্যতা, নিরাপত্তা, সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা এগুলো হলো প্রতিবন্ধকতা। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী একদমই চোখে দেখতে পায় না। শিক্ষা এবং পারিবারিক সহযোগিতা থাকলেও প্রথম প্রথম কিছু করতে পারেননি। কারণ তার পরিবার চায়নি তিনি একা চলাফেরা করুক। তারা ভেবেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীর পক্ষে একা চলাফেরা সম্ভব নয়। সাদা ছড়ি নিয়ে ফুটপাতে হাঁটা, বাস সঠিক স্টপেজে না থামানো, চলন্ত বাস থেকে যাত্রী নামানো। এই সবগুলো ঝুঁকি। একজন নারী হওয়ায় তার উপর আবার নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত রয়েছে। প্রতিবন্ধী নারীরা হাঁটতে পারেন। কিন্ত দেখতে না পাওয়ার কারণে কেউ যদি সাহায্য করার কথা বলে ক্ষতি করেও দিতে পারে। এই ভয়টা থেকেই যায়।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া আমাদের ফুটপাত এবড়ো, থেবড়ো, রাস্তা পার হওয়া, ফুটপাতে ওঠা-নামা একটা চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। পাবলিক বাসে চলাচল সব নারীদের জন্য অনিরাপদ। পাবলিক বাসে চলাচল না করায় সিএনজি, উবারে যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায় । পরিবার বিষয়টিকে গ্রহণ করেনি। আমি একা চলাফেরা করি, আমার সহায়ক হিসেবে একজন মানুষ থাকবে। কারণ ুযিনি থাকবেন তারও তো সময়ের মূল্য রয়েছে। কাউকে ব্যস্ত রেখে আমার চলাফেরা করা সেটাও সমস্যা। আবার অনেকে পছন্দ করেন না আমি কাউকে নিয়ে যাবো।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিরিন আখতার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। একা চলাফেরা করতে এখন আর ভয় পান না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছেন। তার পছন্দের বিষয় ছিল শিক্ষকতা। স্বপ্ন ছিল ইংরেজির প্রভাষক হবেন । রাজধানীর বাইরের কলেজগুলোতে তার চাকরি হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীর বাইরের কলেজে মেয়ে চাকরি করবেন মা তাতে রাজি হননি। এর পেছনে একটাই কারণ ছিল নিরাপত্তার অভাব। পরিবেশ, সব জায়গা নিরাপদ নয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিসিএসে অংশ নেওয়ার অনুমতি না থাকায় তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি। এই আক্ষেপটাও তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। এসব ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথে কাজ শুরু করেন। তিনি উইম্যান উইথ ডিজাব্লিটিজ ডেভেলপম্যান্ট ফাউন্ডেশন (ডাব্লি উডিডিএফ)) চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিজেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য রুশাদা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন। এর তিনি নির্বাহী পরিচালক। এই ফাউন্ডেশনের আটজন মেয়ের থাকা-খাওয়াসহ লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।
শিরিন আখতার বলেন, সরকারি কাজগুলোতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। এজন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এটা একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীর জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করাও সহজ নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য সহনশীলতা থাকতে হবে। এজন্য এডভোকেসি দরকার। আমাকে আরো দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রতিবন্ধিতার কারণে আইএলটিএস দিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন সুমনা খান। বিদেশে স্কলারশিপের জন্য আইএলটিএস দিতে গিয়ে পিডিতে কি বোর্ড ব্যবহারের অনুমতি পাননি তিনি। ইউএনসিপিতে আর্টিকেল দিয়ে যোগাযোগ করেছেন। ৎ
এ প্রসঙ্গে সুমনা খান বলেন , বিদেশে স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু আইএলটিএস পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। আমি কাজ করি অনস্কিন বোর্ডে। আর স্বাভাবিক মানুষেরা হাত দিয়ে কিবোর্ডে কাজ করেন। এটা পিডি অনুমোদন দিচ্ছে না। পিডিএর প্রধান কার্যালয়েও মেইল করা হয়েছে। তারা বার বার এটা বাতিল করে দিচ্ছে। এখন জানতে পেরেছি, বৃটিশ কাউন্সিলে আইএলটিএস হতো। এটা উঠিয়ে কম্পিউটার ভিত্তিক করা হয়েছে। এর ফলে বৃটিশ কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে হলে আমাকে অনস্কিন বোর্ডে লিখতে হবে। এই দুই জায়গায় প্রতিবন্ধিকতার শিকার হচ্ছি। যে কারণে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যে ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা তা আটকে গেছে।
এরিস পায়ারে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ, ওপিডিতে প্রোগাম অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন সুমনা খান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি কাজ করছেন।
পরিবার থেকে তাকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি আর পাঁচটা শিশুর মতোই বিদ্যালয়ে পড়েছেন। নার্সারি থেকে কেজি টু পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েছেন। প্রিপারেটিয়ারে ভর্তি পরীক্ষায় ৯০০ পরীক্ষাথীর মধ্যে নবম হন। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ায় স্কুল তাকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। মা তাদের সাথে লড়াই করে তাকে ওই স্কুলে ভর্তি করায়।
সুমনার মা শাহীন সুলতানা বলেন, মেইন স্ট্রিম স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভর্তির ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের সুযোগ না দিয়েই , মেধা যাচাই না করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে পরিবারের সহযোগিতা থাকলে সব বাধা অতিক্রম করা যায়। প্রতিবন্ধী শিশুকে সুযোগ দিলে এবং শিক্ষক, সহপাঠী সহযোগিতা করলে প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করা সম্ভব হয়।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে ওই স্কুলে অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
অনাস দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে ভলান্টিয়ার হিসেবে কিছু স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন সোসাইটি অফ দি ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাংগুয়েজ ইউজার্স (এসডিএসএল), প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদ ( পিএনএসপি), বিএনএস ক্যাম্পে কাজ করেন সুমনা খান।
সুমনা খান বলেন, এখানে কাজ করতে এসে দেখেছি, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে আমি কোনো বৈষম্যের শিকার না হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেক ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন। সেটা পারিবারিকভাবে, আর্থিকভাবে, কাজের ক্ষেত্রে , শিক্ষা, মানসিকভাবে হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই তারা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা না হলেও চাকরি ক্ষেত্রে আমার চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি বাণিজ্যিক জায়গাগুলোতে চাকরি খুব কম করেছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এনজিওতে চাকরি খুঁজতে হয়েছে। কারণ সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ রয়েছে। নইলে দেখতে হয়েছে, যেখানে আমি বাসা থেকে কাজ করতে পারবো। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা জায়গায় চাকরি নিয়েছিলাম। সেটা চালিয়ে যেতে পারিনি । ওরা অনলাইনে ইন্টারভিউ নেয়। তখন তাদের বলেছিলাম, আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমার বাথরুমে যাওয়া, খাবারের সময় কারো সহযোগিতা লাগবে। এই সুবিধাটা লাগবে। তারা বলেছিলেন, কোনো সমস্যা হবে না। লোক দেওয়া যাবে। এইচআর এই কথাটা পরবর্তীতে ভুলে যায়। আমি অফিসে যোগদান করার পর তিনি আমাকে কোনো লোক দিতে পারেননি। আমি বাথরুমে যাওয়ার জন্য সাহার্য্যকারী চাইলে উল্টো হেডের কাছে নালিশ করেন। আমি আমার শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কথা লুকিয়েছি, সহযোগিতার জন্য কোনো সাহার্য্যকারী চাইনি। অথচ আমি আমার সিভি এবং আবেদনে সব সময় আমার শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কথা উল্লেখ করি। ডান হাত দিয়ে ধীর গতিতে লিখতে পারি। বাম হাতে কিছুই করতে পারি না। এরপর চাকরিটা সেখানে আর করা হয়নি।
সুমনার নাভ জন্ম থেকে দুর্বল । তাই ধীরে হাঁটেন। উঁচু নিচুতে চলাচল সমস্যা হয়। আগে একা চলতে পারলেও এখন পারেন না। আড়াই বছর ধরে হোম অফিস করেন। মেরুদণ্ডের হাড়ে সমস্যা ধরা পড়েছে। তিন চার ঘন্টা টানা বসে থাকতে পারেন না। থেমে থেমে কাজ করতে হয়।
তিনি বলেন, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাসিক আয় না থাকলে তার চিকিৎসা খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাসে ১০ হাজার টাকার উপরে ওষুধের পেছনে খরচ হয়।
উম্মে হাফসা (২৮) একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। রাজধানীর লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে প্রথম শ্রেনিতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছেন। ডিজিটাল মাকেটিং এ ইন্টানি করেছেন। চাকরির চেষ্টা করলেও চাকরি এখনো হয়নি।
দুই বছর বয়সে উম্মে হাফসা নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এ থেকেই শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাকে পেছনে টেনে রাখতে পারেনি। তিনি লেখাপড়া সম্পন্ন করে চাকরির জন্য জব ফেয়ারে ডিজিটাল মার্কেটিং এ আবেদন করেছেন।
উম্মে হাফসার মা ফারহানা জাহান বলেন, মেয়েকে বড় করার ক্ষেত্রে সবদিক থেকেই প্রতিবন্ধকতা ছিল। বিদ্যালয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ উম্মে হাফসাকে ভর্তি নিতে চায়নি । ইডেনে ভর্তি করাতে চেয়েছিলাম হয়নি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সার্টিফিকেট দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তা ছিঁড়ে ফেলত। এরপরও লেখাপড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। জব ফেয়ারে আবেদন জমা দেয়। এত ভালো রেজাল্ট, তারপরও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলেছে, ওর কথা তো স্পষ্ট না। কথা যা বলে, কাজের সময় তা করে না কোনো প্রতিষ্ঠানই।
আফিয়া কবির আনিলা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভারমেন্ট অব সায়েন্সে স্নাতক করেছেন। এখন এম এসসি’র শিক্ষার্থী । পাশাপাশি ডাওরি ফাউন্ডেশনে রিসার্চ এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছেন।
একজন সেলিব্রাল পালসি ব্যক্তি হওয়ায় ওর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জায়গাটা সমন্বয় করতে না পারায় লিখতে পারেন না। । এজন্য আরেকজনের সহযোগিতা লাগে।
আফিয়া কবির আনিলা বলেন, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সবসময় প্রতিবন্ধিতার শিকার হন। যেমন সর্বক্ষেত্রে আমার প্রবেশগম্যতা নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যে উদ্ভাবন হয়েছে তাতে বেশির ভাগের লোকেরই তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। আমি এতদূর এসেছি, আমার পারিবারিক সহায়তার কারণে। সরকার থেকে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা আমি পাইনি।
তিনি বলেন, বলা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের দিকে এগুচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্তি করতে হলে আগে তাকে ঘর থেকে বের করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য আলাদা যত্ন নিতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে কাজে অন্তর্ভুক্তি করতে চায় না, কারণ আমাদের সাথে একজন সাহার্য্যকারী লাগে। আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। যার জন্য অফিস করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তেমন কিছু নাই বললেই চলে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য প্রবেশগম্যতা নেই রাস্তায়। মোট কথা মানসিক সহায়তাটা আমরা পাই না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে দেখে সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসেন না।
প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষমতায়নে প্রধান বাধা সম্পর্কে তিনি বলেন, একে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অন্যদিকে নারী। এছাড়া যোগাযোগ সমস্যা। বাসে চড়ার সময় কেউ নেতিবাচকভাবে সহযোগিতা করতে পারে। আবার কেউ ইচ্ছে করলে সমস্যার কারণে নেতিবাচক আচরণ করতে পারে। আরেকটি সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধী নারীরা, বিশেষ করে পিরিয়ডের সময় অফিসে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা না থাকলে। যারা দাঁড়াতে পারেন না তাদের অফিসে স্যানিটারি ন্যাপকিন একা পাল্টাতে সমস্যায় পড়েন। বাইরে কাজ করতে গেলে পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন পাল্টানোর ব্যবস্থা না থাকায় ডায়াপার পড়ে থাকেন দীর্ঘ সময়। এতে ইউরিন ইনফেকশন হয়। এজন্য দরকার মেডিক্যাল ডায়াপার ।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছেন ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ২২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি । তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধী পুরুষ ২২ লাখ ১২ হাজার ৬৬৭ জন। প্রতিবন্ধী নারী ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৪২২ জন। প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ৭ লাখ ৯ হাজার ৫৯৪, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা ৫৬ হাজার ৪২৫, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ২ লাখ ৯ হাজার ১৫০, বাক প্রতিবন্ধিতা ৮৭ হাজার ৩৭৪, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ৯৯ হাজার ২২২, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা ৭৬ হাজার ২৪, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ৭ হাজার ২৬১, সেলিব্রাল পালসি ৫৩ হাজার ৭৮১ জন এবং অটিজম ৩৬ হাজার ২১৭ জন।
এসডিজি অর্জনে কাউকেই পেছনে ফেলে রাখা যাবে না—এই নীতি নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীদের সুরক্ষায় বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেদিকে সবাইকে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ নবনীতা সিনহা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নারীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখি না। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছি। প্রতিবন্ধী নারীদের চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। এটাকে বিবেচনায় রেখে তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক আইনের প্রতি জোর দিয়েছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ( সামাজিক নিরাপত্তা -১) ফরিদ আহমেদ মোল্লা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা।
ইউ