
ছবি: কবি হেলাল হাফিজ
— এক বিদ্রোহী আত্মার জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
“যেভাবে জন্ম নেয় আগুন, সেভাবেই জন্ম নেয় কবিতা,
অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে ওঠে মানুষের ভিতরের সূর্য।”
— হেলাল হাফিজ, “যেভাবে জন্ম নেয় আগুন”
আজ ৭ অক্টোবর, কবি হেলাল হাফিজের জন্মদিন। অথচ এই জন্মদিবস আর কেবল একজন কবির জীবনের স্মৃতি নয়—এটি যেন এক আত্মার পুনর্জন্ম, যে আত্মা শব্দের আগুনে সমাজকে জাগিয়ে তুলেছিল।
প্রয়াত হলেও তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দ এখনো দগ্ধ করে, যেমন করেন তিনি নিজেই একসময় বলেছিলেন—
“যে জ্বলতে জানে না, সে আলোকিত হতে জানে না।”
? প্রেম, দহন ও প্রতিবাদের ত্রিবেণী
হেলাল হাফিজের কবিতায় প্রেম কখনো নিস্তরঙ্গ নয়; এটি এক দার্শনিক বিদ্রোহ। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়”-তে তিনি ঘোষণা দেন—
“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,
এখন যৌবন যার যুদ্ধ করার তার শ্রেষ্ঠ সময়।”
এই কবিতা শুধু রাজনৈতিক প্রেরণা নয়, এটি অস্তিত্ববাদী মানবতার ঘোষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন—নিঃসঙ্গ প্রেমিকও হতে পারে বিপ্লবী, যদি তার ভালোবাসা সৎ ও গভীর হয়।
“ভালোবাসা মানে একধরনের দহন,
যেখানে মানুষ নিজেকে পোড়াতে জানে,
কিন্তু পৃথিবীকে উষ্ণ করে তোলে।”
— হেলাল হাফিজ, “ভালোবাসার আগুন”
? দর্শন ও তত্ত্বের পরিক্রমা
তাঁর কবিতার ভেতর নিহিত অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ। কামুর ‘absurd hero’-এর মতো, হেলাল হাফিজও বিশ্বাস করতেন—জীবন অর্থহীন হলেও, মানুষকে অর্থ দিতে হয় নিজের ভালোবাসা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি যেন এক আত্মদাহী আলোকবীজ —
“আমি আগুনে পোড়াই, যাতে কেউ অন্ধকারে ঠাণ্ডায় না মরে।”
এই পঙক্তির মধ্যে নিহিত মানবিক দায়, যা তাঁর কবিতাকে নিছক রোমান্টিকতা থেকে এক সামাজিক দর্শনের উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
? পৃথিবীর প্রতি তাঁর বার্তা
হেলাল হাফিজের পৃথিবী কোনো বিমূর্ত সৌন্দর্যের জগৎ নয়; এটি বাস্তব, সংগ্রামী, কিন্তু সম্ভাবনাময়। তিনি চেয়েছেন এমন এক পৃথিবী যেখানে মানুষ প্রেম করবে, প্রতিবাদ করবে, বাঁচবে মর্যাদার সঙ্গে।
“একটি ফুলের জন্য যুদ্ধ করতে শিখেছি,
একটি পাখির ডানায় লিখেছি স্বাধীনতার নাম।”
— হেলাল হাফিজ, “একটি ফুলের জন্য যুদ্ধ”
তাঁর কবিতা শেখায়—
মানুষের জন্ম কেবল জৈবিক নয়, এটি নৈতিক ও নান্দনিক এক ঘোষণা।
যেমন তিনি লিখেছেন—
“আমি জন্মেছি তাই নয়, আমি জন্ম দিই প্রতিদিন,
আমার শব্দে, আমার আগুনে, আমার মানুষের ভেতরে।”
✒️ শেষের সুর
হেলাল হাফিজ ছিলেন এমন এক কবি যিনি ভালোবাসাকে বিপ্লবের শক্তি বানিয়েছিলেন। তাঁর জন্মদিনে আমরা তাই কেবল স্মরণ করি না, বরং অনুভব করি—
একজন কবি যখন জন্ম নেন, তখন সমাজে জন্ম নেয় একটি নতুন চেতনা।
“আমি কবিতা লিখি বলে বেঁচে আছি,
আর বেঁচে আছি বলেই কবিতা লিখি।”
— হেলাল হাফিজ, “জীবনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা”
আজ, তাঁর জন্মদিনে, পৃথিবী যদি একটু বেশি আলোকিত হয়—
তবে সেটি হবে তাঁর আগুনেরই প্রতিফলন।
ইউ