
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
হেফাজতে ইসলামসহ অব্যাহত নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রদানকারী ও নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা ও কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকাল ৪ টায় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় প্রচার - প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অর্থ সম্পাদক নওশিন মুস্তারী সাথী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘এদেশের নারীরা প্রতিটি গণআন্দোলনে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ৫২ 'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে নারীরা এগিয়ে এসেছে, লড়াই করেছে। সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও আমরা দেখেছি নারীরা কিভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সহযোদ্ধাদের রক্ষা করেছেন, গুলির মুখে দাঁড়িয়েছেন। মায়েরা সন্তানের হাত ধরে রাস্তায় নেমে এসে সন্তানসমদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ লড়াইয়ের বিজয়ে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত হবে এটাই সকলের কাম্য ছিল। স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম একটি নারী সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। গত ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর আমরা দেখলাম- অনেকগুলো বিষয়ে তাঁরা সংস্কারের দাবি তুলেছেন যা আধুনিক গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সময়ে এসে নারী পুরুষের সমঅধিকার - সমমর্যাদা নিশ্চিত করা প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তিতর্কের উপস্থাপন চলতেই পারে। মত-দ্বিমত থাকতে পারে। এ গনতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়াটা জরুরি। অথচ আমরা দেখলাম যৌক্তিক সমালোচনার পথ না ধরে হেফাজতে ইসলাম সহ একদল গোষ্ঠী নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাতিলসহ নারী কমিশনের সদস্যদের নানা কটুক্তি, ব্যঙ্গ সহ নারী অবমাননাকর নানা বক্তব্য রাখছেন ও কমিশন বাতিলের দাবি করছেন। সমাজে নারী-পুরুষের যে স্বাভাবিক মর্যাদার সম্পর্ক সেটাকে তারা মানতে নারাজ। একইসাথে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে তারা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করছেন। সমাজে নারী সম্পর্কিত পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গিকে জিইয়ে রাখার এ প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন যে কোন মানুষ বিরোধিতা করে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশে নারীরা নানা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। নারীদের মতপ্রকাশ, চলাফেরা, নিরাপত্তা ভীষণভাবে হরণ করা হচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখছি না- যা উদ্বেগজনক। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতের এই নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসনোট প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি আমরা। দেশের জনসংখ্যার ৫১ ভাগ নারী। তারা অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত না করে ও নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশ এগোতে পারে না। অসংখ্য মানুষের আত্মবলিদানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা-যা জুলাইয়ের চেতনা, তা ভুলুন্ঠিত হতে দিতে আমরা পারি না।’
‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- অবিলম্বে হেফাজতে ইসলাম সহ অব্যাহত নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা, কটুক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । একইসাথে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।’’
ইউ