ঢাকা, বাংলাদেশ

রোববার, , ১১ মে ২০২৫

English

সাহিত্য

ছোট গল্প ‘ডিএনএ’ 

মির্জা নাহিদ হোসেন:

প্রকাশিত: ১০:১০, ২২ নভেম্বর ২০২৩

ছোট গল্প ‘ডিএনএ’ 

ছোট গল্প ‘ডিএনএ’ 

বাবা মায়ের পছন্দেই আমার আর দীপার (আমার স্ত্রী ) বিয়ে হয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ আমরা দুজনেই খুব সুখী। দুই বছরের মাথায় আমাদের ঘর আলো করে প্রথম সন্তান আবির এলো। তার পরের বছর আমাদের কাঙ্খিত মেয়ে নীলার জন্ম । আমি একটা বেসরকারি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। তিনজনের সংসার নিয়ে সচ্ছল আর সুখেই কেটে যাচ্ছে আমাদের জীবন। খবরের কাগজে পড়লাম একজন মায়ের পিতৃত্বের দাবি প্রমানে সন্তান ও কথিত বাবার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে ।

বুদ্ধিটা হঠাৎ করেই মাথায় এলো। আচ্ছা গোপনে আমার সন্তানদের ডিএনএ টেস্ট করলে কেমন হয় ? অফিসে যেয়ে এক ডাক্তার বন্ধুকে কল দিলাম, বললাম দোস্ত হেল্প করতে পারবি নাকি ? সে বললো হঠাৎ  এইসব কি বলছিস? আমি তাকে বুঝালাম আসলে মজা করার জন্য এটা করছি, কোনো সন্দেহ থেকে না।তাছাড়া সত্যি বলতে কি আমার বৌ শায়লার প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই শুধু কৌতূহল আর মজা করার জন্য আর ওকে একটু সারপ্রাইজ দিতে বুদ্ধিটা । পেপার পড়ার পর থেকেই বুদ্ধিটা সারাক্ষণ মাথার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো । 

বাবার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মত । আলাদা বাসায় থাকলেও আমরা খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখি। বাবাকে ফোন করলাম। বাবা শুনে হেসেই খুন। বললেন তোর পাগলামো আর গেলো না । বাবা আমাকে মজা করে বললেন তাহলে আয় তোর ডিএনএ টেস্টটাও করি ? 

আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে। আমিও কম যাবো কেন? বললাম ওকে বাবা, এসো দুই পুরুষ একসাথে ডিএনএ টেস্ট করবো ।বাবা হাসতে হাসতে রাজি হয়ে গেলেন বললেন, তোর মা আর শায়লাকে কিছু না বলাই ভালো। মহিলা মানুষ আবার কি মনে করে বসে ঠিক নেই ।আমিও ভাবলাম কথাটা বাবা কথাটা খারাপ বলেন নাই ।

এখানে একটা কথা বলে রাখি। আমার বাবা আর আমি দেখতে অনেকটাই একরকম আর আমার সন্তানদের চেহারার সাথে আমার চেহারার খুব মিল। এই কথা অনেকেই বলেছেন তাই টেস্ট নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। 

বাংলাদেশের টেস্ট এর রেজাল্ট নিয়ে নানান রকম কথা শোনা যায়, তাই যেহেতু ডাক্তার বন্ধুর সহযোগিতায় অর্ধেক খরচে ডিএনএ টেস্ট করতে পারবো তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দুইটা ভালো ক্লিনিকে টেস্ট করবো। এক খরচে দুই টেস্ট ।

শুক্রবারে দীপাকে সত্য গোপন করে বললাম, বাবা আবির আর নীলাকে দেখতে চায়, আমি একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। দীপা  কোনো আপত্তি করলো না। বাসার বাইরে যেয়ে একটা সিএনজি নিলাম। বাবাকে বললাম ক্লিনিকে চলে আসতে । পরপর দুইটা ক্লিনিকে আমি, বাবা ও আমার সন্তানদের টেস্ট স্যাম্পল দিলাম। ক্লিনিক থেকে রিপোর্ট দুই সপ্তাহ পরে দেবে বললো । বাবা বিষয়টা বেশ মজা পাচ্ছেন, ছেলের পাগলামোর সাথে তার পাগলামো করতে মনে হয় ভালোই লাগছে ।তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক গভীর আত্ম বিস্বাসে গড়ে ওঠা, টেস্ট যে সেই সত্য প্রমান করবে এতে আমার বা বাবার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই । আমি আর বাবা কেউ বাসায় কিছু বলি নাই।

দুই সপ্তাহ পরে আজ শুক্রবার দীপাকে বললাম, আমি একটু বাবার সাথে কথা বলতে যাচ্ছি । দীপা বললো বাবার জন্য কিছু ফল নিয়ে যেও। আমি বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজি নিয়ে ক্লিনিকে রওয়ানা দেয়ার সময় বাবাকে আসতে বললাম । বাবা বললেন উনি এখুনি রওয়ানা দিচ্ছেন । বাবা আসার পর খামে বন্ধ রিপোর্ট নিলাম। বাবা বললেন দুই ক্লিনিকের রিপোর্ট আমরা একসাথে খুলবো এবং দেখার জন্য নির্জন একটা জায়গায় দুজন একসাথে বসবো ।দুজন রমনা পার্ককেই বেছে নিলাম। আমি অনেকটা হাসতে হাসতে প্রথম ক্লিনিকের দেয়া আমার ছেলের ডিএনএ রিপোর্ট বের করলাম। ইয়া আল্লাহ! এসব কি দেখছি? ওটা আমার সাথে ম্যাচ করে নাই! বাবার মুখেও বিস্ময়ের ছাপ। রিপোর্ট ভুল হাতে পারে ভেবে দ্বিতীয় ক্লিনিকের রিপোর্টটা দেখলাম। না, এখানেও একই রিপোর্ট। আবির আর আমার ডিএনএ ম্যাচ করে নাই তার মানে আবির আমার ছেলে না ।

বাবা বললেন নীলার রিপোর্টটা বের কর তো বাবা। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আমার মেয়ে নীলার ডিএনএ রিপোর্টের প্রথম ক্লিনিকের দেয়া খামটা খুললাম । আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না, ওটাও নেগেটিভ মানে নীলার সাথে আমার ডিএনএ মেলেনি ও আমার মেয়ে নয়।এইবার শেষ আশা নিয়ে দ্বিতীয় ক্লিনিকের খাম খুললাম। একই রিপোর্ট! আমার মাথা বন বন করে ঘুরছে,এটা কিভাবে সম্ভব? বাবা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে সান্তনা দেয়ার জন্য আমার কাঁধে হাত রাখলেন, বললেন তোর আর আমার রিপোর্টটা বের কর তো বাবা । আমি হতাশ মনে খামটা বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, বাবা তুমি খোলো আমার খুব খারাপ লাগছে ।

বাবা আমাদের দুজনের মানে আমার আর বাবার ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট এর প্রথম খাম খুললেন । আমরা দুজনে ঝুকে পরে রিপোর্ট দেখতে যেয়ে মাথায় মাথায়ব ঠোকর খেলাম । বাবার হাত কাঁপছে, রিপোর্ট ম্যাচ করে নাই অর্থাৎ বাবা আর আমার সম্পর্ক মেলে নাই। বাবার চেহারায় একগাদা বিস্ময় ফুটে উঠলো। বাবা কাঁপা হাতে দ্বিতীয় ক্লিনিকের রিপোর্ট টা খুললেন একই রেজাল্ট নেগেটিভ । 

আমি আর বাবা দুজন অসহায় ভাবে একে অন্যের মুখোমুখি বসে আছি, চারপাশে শূন্যতার নিঃশব্দ অনুভূতি। বাবা অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । দুজনের চোখ দিয়েই ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে ।

( কাল্পনিক চরিত্র ও অস্তিত্বগুলো কাউকে আঘাত করার জন্য নয়।) 
 

//এল//

সৌদি পৌঁছেছেন ৩৭৮৩০ হজযাত্রী, মৃত্যু ৫

গরমে হিট স্ট্রোক থেকে যেভাবে রক্ষা পাবেন

গেজেটের পরই আ.লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি

যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: মাহফুজ আলম

কাঁচা কাঁঠালের মজাদার বিরিয়ানি

মিরপুরে দুই বোন খুন: মাস্ক-ক্যাপ পরা ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ

মা দিবস কেন রোববারে পালিত হয়?

বৃষ্টি ও গরম নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ভারত-পাকিস্তানের

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

বিশ্ব মা দিবস আজ

আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা

কোকোর কবর জিয়ারত করলেন ডা. জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান

পাকিস্তান-ভারতের উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা

‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি কার্যকর’