
ফাইল ছবি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. হযরত আলী পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে তার এই পদত্যাগ বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলমান অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন একটি মোড় সৃষ্টি করেছে।
তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুয়েটের রেজিস্টার ড. মো. আনিসুর রহমান ভূঞা। তিনি জানান, বুধবার (২১ মে) হযরত আলী ইউজিসিতে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে পদত্যাগের কারণ নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিক কিছু বলা হয়নি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের মধ্য দিয়ে ২৫ এপ্রিল তৎকালীন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। পরে ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে দায়িত্ব নেওয়ার পরও সংকট কাটেনি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও কুয়েটের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফেরেননি। কুয়েট শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাটি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধেরও একটি বড় পরীক্ষা।
এই পরিস্থিতি পরিবারকেও নতুন করে ভাবিয়ে তোলার সময় এনে দিয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর আচরণ ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে তার পারিবারিক পরিবেশে। বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজ নানামুখী চাপে আছে—রাজনৈতিক প্রভাব, প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক ও সামাজিক বৈষম্য তাদের মানসিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে। তাই অভিভাবকদের সচেতন থাকা প্রয়োজন—তাদের সন্তান কীভাবে ভাবছে, কী শিখছে এবং কোন মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে উঠছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পরিবারের ভেতর থেকেই যদি সন্তানদের মাঝে শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও শিষ্টাচার তৈরি করা যায়, তবে এমন অশোভন আচরণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিক্ষক শুধু বিদ্যা দেন না, ভবিষ্যতের নাগরিক গড়ার কারিগর। তাদের সম্মান না থাকলে সমাজের মেরুদণ্ডই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ঘর থেকেই শুরু হওয়া উচিত সম্মান, সহনশীলতা ও দায়িত্ববোধ শেখানো।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়, গোটা সমাজে নৈতিকতা ও শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিক্ষককে অসম্মান মানেই সমাজের জ্ঞানভিত্তিকে আঘাত করা। তার মতে, এই ধরনের ঘটনার একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী তদন্ত হওয়া জরুরি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা যেমন শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে উদ্বেগে দিন পার করছেন। কুয়েটের সংকট একটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও নৈতিক কাঠামোর দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। এই সংকটের দৃষ্টান্তমূলক সমাধান না হলে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউ