
ছবি: ফাহমিদা ফেরদৌস
সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে একজন নারী হয়ে উঠেন জীবনের মমতাময়ী মা, আর এখানেই একজন নারীর চরম স্বার্থকতা। গবেষনায় দেখা গেছে প্রতিলাখে ৮৫.১ জন মা সন্তান প্রসবদানে মৃত্যু বরন করেন। একজন নারী নিজের জীবনের ঝুকি জেনেও মাতৃত্ব ধারণ করতে নিজের জীবন দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না। আর এই কারনে ধর্মীয়ভাবে মাকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।
বলা হয়ে থাকে ‘জননীর পদতলে জান্নাত ’ গবেষনায় আরো বলা হয় সন্তান জন্মদান একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। যেখানে একজন নারীর গুরুত্বপূর্ণ শারিরীক ও মানসিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অন্তর্গত থাকে যা কিনা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে নিয়ন্ত্রন করে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো “হরমোনাল পরিবর্তন”। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে বেশ কিছু নতুন হরমোন তৈরী হয়, এবং আগের কিছু হরমোনের মাত্রাও এসময় বেরে যায়। শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায়ই গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ‘হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রোপিন’ হরমোন তৈরি হয়। এ হরমোন গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল তৈরি করে। এই প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের মাধ্যমে শিশু তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহন করে মায়ের কাছ থেকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় হিউম্যান “প্লাসেন্টাল ল্যাকটোজেন হরমোন” প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল থেকে তৈরি হয়, এ হরমোন স্তনে দুগ্ধ গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে প্রসব পরবর্তীতে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে।
গর্ভফুল থেকে তৈরি ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান গর্ভাবস্থায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যা দুগ্ধনালীকে বিকশিত করে এবং বাড়ন্ত শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ুর আকার বৃদ্ধি করে একটি পূর্নাঙ্গ মানবশিশু ধারণ করতে প্রস্তুত করে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে তৈরি হয় “অক্সিটোসিন” এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়, এ হরমোন সন্তান প্রসব ও ডেলিভারিতে এবং প্রসব পরবর্তী স্তনে দুধ আসতে সাহায্য করে। এছাড়াও অক্সিটোসিন মায়ের সাথে নবজাতকের মানসিক (ইমোশনাল বন্ডিং) অথবা মায়াবি বন্ধন তৈরি করে। এছাড়াও মাড়ের গর্ভফুল থেকে তৈরি ডোপামিন এবং সেরোটনিন নিউরোট্রান্সমিস্টার শিশুর মস্তিষ্কের দুটি- স্নায়ুকোষের মধ্যে রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে এবং এটি মস্তিষ্কের স্নায়ুুকোষ এবং শরীরের স্নায়ু এবং পেশি কোষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এভাবে শিশুর মনের সাথে শরীরের নিয়ন্ত্রনের সমন্বয় করে বিকাশে সাহায্য করে।
শিশু জন্মের পর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের “সাইনেপটিক কানেকশন” এর মাধ্যাম, চোখে দেখে এবং কানে শোনে মায়ের কাছ থেকে “ভাষার” মাধ্যমে বয়সের সাথে সাথে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করে পৃথিবীর নিয়ম কানুন আয়ত্ত করতে থাকে।
৫টি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা নিম্নরূপঃ
(১) নিয়মানুবর্তিতা এবং নিজ দায়িত্বঃ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৈনন্দিন রুটিন এবং সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনকে সুশৃঙ্খল নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত করা এবং বয়স অনুপাতে তাকে তার নিজ দায়িত্ব পালন করতে দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
(২) আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ঃ নিজের নেতিবাচক আচরন নিয়ন্ত্রন করা এবং অন্যের আবেগকে উপলব্দি করা এবং মুল্যায়ন করা। যা একটি শিশুর মধ্যে অন্যর দুঃখে সমব্যাথি অথবা পরহিতব্রততা হওয়ার দক্ষতাকে জাগ্রত করে।
(৩) সমস্যা সমাধান ঃ বয়স অনুপাতে সুনির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সমস্যা সামাধানের পদ্ধতি অনুসরন করা। যা ভবিষ্যতে একটি শিশুর মধ্যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি বা সমস্যা ঠিকভাবে সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।
(৪) সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ দুই বা ততোধিক সম্ভভাব্য বিকল্পের মধ্যে থেকে কার্যউপযোগী ক্রিয়াকলাপকে নির্বাচন করতে পারার দক্ষতা। এ পদ্মতিতে একটি শিশুর মধ্যে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকে জাগ্রত করে।
(৫) যোগাযোগ দক্ষতা ঃ কার্যকরভাবে এবং গঠনমূলকভাবে অন্যদের সাথে রুচিশীল, মার্জিত ‘ভাষা’ প্রয়োগ করে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করা। এই দক্ষতাটি একটি শিশুকে অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে এবং নিজে যা বলতে চায় তা অন্যকে সঠিকভাবে বুঝাতে সাহায্য করে।
৫-৬ বছরের মধ্যে শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি স্নায়ুবিক নেটওয়ার্ক ও ভাষার মাধ্যমে একটি শিশুর মানসিক বিকাশের মৌলিক কাঠামো হয়ে যায়। যেখানে মায়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর একজন মা'ই পারেন শিশুকে নৈতিকতায় ও মানবিকতার আদর্শে একজন মানবিক মানুষ বা সুনাগরিক গড়ে তুলতে।
//এল//