ফাইল ছবি
গরু কেনার সময় প্রায়ই ওজন নিয়ে চিন্তিত হন অনেকে। কেনার আগে বিভিন্নজনের কাছে জানতে চান, মাংস কত হবে। সঠিক ওজন বের করতে পারলে দামাদামি নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে ওজনের সুরাহা খুব সহজেই করে ফেলা যায়। এজন্য জানতে হবে গরুর ওজন মাপার সূত্র, লাগবে না মেশিন।
বাংলাদেশে মাংসের জন্য পশু হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় গরু। এরপরেই আছে ছাগল। তার বাইরেও আছে মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, গাড়লের মতো প্রাণী। তবে ওগুলো গরুর মতো জনপ্রিয় না। অনেকের মতে, গরুর ওজন হিসেব করেই দাম হাঁকানো উচিত। তাই বলা হয়ে থাকে, নিখুঁতভাবে ওজন নির্ধারণের বিকল্প নেই।
দেশে গরুর ওজন মাপার সাধারণত দুইটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। একটি ডিজিটাল স্কেল বা মিটার, আরেকটি ফিতা পদ্ধতি। ডিজিটাল স্কেল বা মিটারে ওজন মাপা সহজ হলেও সব জায়গায়, সব সময় এটি পাওয়া যায়না। তাই অনেকেই বিকল্প হিসেবে ফিতা দিয়ে মেপে ওজন নির্ণয় করেন।
অনেকে হয়তো ফিতা দিয়ে ওজন মাপার পদ্ধতির সাথে পরিচিত নাও হতে পারেন। তাদের জন্য এ প্রতিবেদনটি বেশ কাজে দিবে।
ফিতা দিয়ে ওজন মাপতে যা প্রয়োজন:
১) মাপার ফিতা বা স্কেল টেপ।
২) ক্যালকুলেটর। তবে, মোবাইলের ফোনের ক্যালকুলেটর দিয়েও কাজ চালানো সম্ভব।
গরুর ওজন মাপার নিয়ম, যা করবেন: যে গরুর ওজন নিতে চাচ্ছেন তাকে ভালোভাবে সোজা করে দাঁড় করাতে হবে। তারপর ফিতা দিয়ে প্রথমে লম্বা দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এজন্য লেজের গোড়া থেকে শুরু করে সামনের পায়ের জোড়ার গিট পর্যন্ত ফিতা ধরে দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এরপর সামনের দুই পায়ের কাছ দিয়ে ফিতার সাহায্যে বুকের বেড় কত ইঞ্চি তা পরিমাপ করতে হবে। এটি প্রস্থ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এ মাপের সংখ্যাও সঠিকভাবে লিখে রাখতে হবে। এরপর সূত্রে প্রয়োগ করে দ্রুত ওজন নির্ধারণ করা যাবে।
ওজন মাপার সূত্র:
গরুর মোট ওজন= গরুর দৈর্ঘ্য X (গুণ) বুকের বেড় X (গুণ) বুকের বেড় / (ভাগ) ৬৬০
মনে করি, গরুটির দৈর্ঘ্য ৭০ ইঞ্চি এবং বেড় ৬০ ইঞ্চি। তাহলে গরুর আনুমানিক ওজন হবে (৭০X৬০X৬০)/৬৬০ = ৩৮১ কেজি (প্রসঙ্গত, প্রধান সূত্রে পাউন্ডে হিসেব করা হয়েছে কিন্তু এখানে সুবিধার জন্য কেজিতে দেখিয়ে ৬৬০ দ্বারা ভাগ করা হয়েছে)। এই সূত্রের সাহায্যে যে ওজন পাওয়া যাবে তা হলো গরুর নাড়িভুড়িসহ সবকিছুর ওজন।
শুধু মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ হবে যেভাবে:
অল্প সময়ে মধ্যে আপনি সূত্র ব্যবহার করে যে ওজন পেয়েছেন তার ৫৫-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওজনই হবে গরুর মাংসের ওজন। এটি নির্ভর করবে গরুর শারীরিক গঠনের ওপর, পেট খুব বেশি বড় না হলে অধিকাংশ গরুর শতকরা ৬৫ শতাংশ ওজনই মাংস হয়ে থাকে।
ফিতা পদ্ধতির মাধ্যমে ওজন নির্ধারণ সাধারণত ৯৫-১০০ ভাগই সঠিক হয়ে থাকে। তাই আপনি নিশ্চিন্তে এই সূত্র অনুসরণ করে পশুর ওজন নির্ধারণ করে ক্রয় করতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত দামে।
সতর্ক থাকতে পারেন
বাজারে আমরা যখন পশু দেখতে যাই, বিশেষ করে গরু- তখন অনেকসময়ই পশুগুলোকে বেশ অশান্ত দেখা যায়। গরুর লাথির ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া নোংরা লেগে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে। এমন কোনো শঙ্কা বা সম্ভাবনা যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে পশুর মালিককে ফিতা বা স্কেল টেপ দিয়ে তাকে নির্দেশনা দিতে পারেন, এটি করার। মালিকের সাথে পশু সাধারণত শান্ত ব্যবহার করে।
সুস্থ পশু চেনার উপায়
সুস্থ ও উপযুক্ত গরু নির্বাচন করা জরুরি। গরুর দাঁত দেখে বয়স বোঝা যায়। সুস্থ, পূর্ণবয়স্ক গরুর দাঁত দেখে ৫ বছর পর্যন্ত বয়স শনাক্ত করা যায় নিখুঁতভাবে। দুই বছর বয়সী একটি সুস্থ গরুর দুইটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে। ৩ বছর বয়সে চারটি, ৪ বছর বয়সে ছয়টি ও ৫ বছর বয়সে পুরো মুখে সর্বমোট আটটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে। দাঁতগুলো অক্ষত এবং দেখতে সুন্দর হয়।
দিনের আলো থাকতেই গরু কেনা ভালো। কেননা, রাতের বেলায় পশু রোগাক্রান্ত নাকি সুস্থ তা ভালোভাবে বোঝা যায় না। অন্ধকারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসুস্থ গরু কেনার সম্ভাবনা থাকে।
সুস্থ গরু চেনার জন্য পশুর মুখের সামনে কিছু খাবার দিয়ে দেখতে পারেন। সুস্থ হলে এটি নিজ থেকে জিভ দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকবে। অসুস্থ গরু সচরাচর খেতে চায় না।
এছাড়া পশুর নাকের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। সুস্থ গরুর নাকের উপরটা ভেজা ভেজা থাকে। পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।
মোটা গরু মানেই সুস্থ নয়
মোটা গরু মানেই সুস্থ বা ভালো গরু নয়। মোটা গরুতে চর্বি অনেক বেশি থাকে, যা খেলে পর মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর অস্বাভাবিক মোটা গরু বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করে মোটাতাজা করা হতে পারে। তাই এ ধরনের গরু কেনার আগে ভাবতে পারেন।
এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত পানি জমার কারণে হরমোন দেয়া গরু বেশি মোটা দেখায়। এদের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে সেখানে দেবে গর্ত হয়ে যায় অথবা সাথে সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।
পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন। শিং ভাঙা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর এসব কিছুই পরীক্ষা করে দেখুন, কোনো খুঁত চোখে পড়ে কিনা।
ইউ